প্রতীকী ছবি।
এত দিন স্বাস্থ্য দফতরের নীতি ছিল, প্রয়োজনীয় পরিষেবা একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন হাসপাতালে ছড়িয়ে দেওয়া।
সেই নীতিতেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের হাসপাতালে সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট, আইসিইউ-আইটিইউ ছাড়াও তৈরি হয়েছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালও।
কিন্তু সেই স্বাস্থ্য দফতরই উচ্চমানের ল্যাবরেটরি পরিষেবার ক্ষেত্রে আচমকা নীতি বদলে ‘কেন্দ্রীভূত’ নীতিতে সরে আসছে! একাধিক হাসপাতালে আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ল্যাবরেটরি চালুর প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার পরে মাঝ পথে তা থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন ঠিক হয়েছে, সরকারি স্তরে এমন ‘হাই-এন্ড’ ল্যাবরেটরি হবে একটিই, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। বাকি সব বাতিল। তাতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
চিকিৎসকদের একাংশই জানাচ্ছেন, কোনও একটি পরিষেবা বিশেষ কোনও একটি জায়গায় থাকার অর্থ, গোটা রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে মানুষ সেখানে রেফার হয়ে ভিড় করবেন। পরীক্ষার ‘দিন’ এবং রিপোর্ট পেতেই দিনের পর দিন কাবার হবে। ফলে, অধিকাংশ রোগীকে সেই বেসরকারি ল্যাবরেটরির শরণাপন্ন হতে হবে এবং দালালদের রমরমা বাড়বে।
সমস্যা আরও রয়েছে। পরীক্ষার জন্য কলকাতা বা বিভিন্ন জেলা থেকে অসুস্থ রোগীকে উজিয়ে আসতে হবে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। সেটাও বহু রোগীর ক্ষেত্রে শারীরিক বা আর্থিক কারণে, যানবাহন বা লোকবলের অভাবে সম্ভব হবে না।
স্বাস্থ্য ভবনের একাংশের কথায়, এই সব অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই বছর তিনেক আগে স্বাস্থ্য দফতর ঠিক করেছিল, বেশ কিছু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে উচ্চ পর্যায়ের ল্যাবরেটরি তৈরি করা হবে। সেখানে ক্যানসার মার্কার, বিভিন্ন হরমোন, ডিএনএ, ভাইরাস চেন-এর মতো বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে নিখরচায়।
সেই মতো বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি (বিআইএন), সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের মতো একাধিক জায়গায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি মডেল) ল্যাবরেটরি চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়। দরপত্র ডেকে অংশীদারি সংস্থা বাছাইও হয়। তার পরে সব ফাইল আটকে গিয়েছে। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এত জায়গায় ল্যাবরেটরি পরিষেবা ছড়িয়ে লাভ নেই। আমরা শুধু শম্ভুনাথেই একে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছি। এটা চূড়ান্ত হয়ে গেলেই বাকি দরপত্র বাতিল করা হবে।’’
হঠাৎ এই পরিবর্তনের কারণ? দেবাশিসবাবুর জবাব, ‘‘এক জায়গায় উচ্চ পর্যায়ের ল্যাবরেটরি হলে বরং মানুষের সুবিধা হবে।’’ কিন্তু সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে বহু রোগী আসেন উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এনআরএস ও বি সি রায় হাসপাতালে অধিকাংশ রোগী আসেন মুর্শিদাবাদ, মালদহ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা থেকে। তাঁরা আবার পরীক্ষা করতে শম্ভুনাথে ছুটবেন? এর জবাব মেলেনি।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সাগর দত্তে প্রস্তাবিত ল্যাবরেটরির বেসরকারি অংশীদার দরপত্র ডেকে বাছাই হয়েছে গত জানুয়ারিতে। তার পরে স্বাস্থ্য ভবনে তারা অনেক বার চিঠি দিয়েছে। উত্তর দেওয়া হয়নি। বিআইএন-এও একাধিক বার দরপত্র ডেকে একটি সংস্থাকে পাওয়া গিয়েছিল। গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি চিঠিতে স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছিলেন, এই সংস্থাটিকেই ল্যাবরেটরি চালাতে বিশেষ অনুমতি দেওয়া হোক। কারণ, অসুস্থ রোগীদের কাছ থেকে প্রচণ্ড চাপ আসছে। কিন্তু তার উত্তর এখনও মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy