এই প্রচ্ছদ ঘিরেই বিতর্ক।
ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং জাতীয় পতঙ্গবাহী রোগ প্রতিরোধ প্রকল্পের নির্দেশও মানতে রাজি নয় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর! ওই দফতরের একটি পুস্তিকা ঘিরেই শুরু হয়েছে এমনই বিতর্ক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ, মশা মারতে খোলা জায়গায় ধোঁয়া দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাতে লাভ হয় না, বরং সেই ধোঁয়া মানুষের শরীরের ক্ষতি করে। জাতীয় পতঙ্গবাহী রোগ প্রতিরোধ প্রকল্পের নির্দেশিকাও বলছে, মশা মারতে প্রকাশ্যে ধোঁয়া দেবেন না।
কলকাতা পুরসভাও ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে শহর জুড়ে যে হ্যান্ডবিল, লিফলেট ছড়িয়েছে তাতেও বলা হয়েছে, ব্লিচিং নয়, ধোঁয়া নয়, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে চাই জন্মস্থলেই (জমা জলে) মশার বিনাশ।
কিন্তু গোল বেধেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের একটি পুস্তিকা নিয়ে। চলতি বছরে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধের জন্য বছরভর কর্মসূচির যে পুস্তিকা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ছাপা হয়েছে, তার প্রচ্ছদের ছবি হল একজন স্বাস্থ্যকর্মী মশা মারতে কামান দাগছেন আর গলগল করে বেরোচ্ছে ধোঁয়া।
গোটা রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার দায়িত্বে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব খোদ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। তাই স্বাস্থ্য দফতরের ছাপানো বইয়ের সমালোচনা করে কিছু বলতেও পারছে না কলকাতা পুর প্রশাসন। পুর স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যাঁরা এই পুস্তিকা তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের বিষয়টি দেখা উচিত ছিল।’’ পুস্তিকার প্রচ্ছদের ওই ছবিতে রাজ্যের সব স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে ভুল বার্তা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ওই পুর আধিকারিক।
স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই বিষয়টি নিয়ে যা বলার পতঙ্গ বিশারদেরা বলতে পারবেন। আমার কোনও মন্তব্য নেই।’’ স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা পতঙ্গবিদ অমিয় হাটি জানাচ্ছেন, ‘‘ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়াবাহী মশা দমনে প্রকাশ্যে ধোঁয়া দিয়ে কোনও লাভ হয় না।’’ তবে রাজ্য সরকারের ছাপানো পুস্তিকার প্রচ্ছদের ছবিটি নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পুস্তিকার প্রচ্ছদে যাতে পুরকর্মীরা বিভ্রান্ত না হন, সে বিষয়ে তাঁরা সতর্ক রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক। মানুষকে সচেতন করতে নিজেদের লিফলেট নতুন করে বিভিন্ন এলাকায় ছড়াবে পুরসভা।
পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, একটা সময় মশা মারতে শহরে কামান দেগে ধোঁয়া ছড়ানোর দৃশ্য প্রায়ই দেখা যেত। ধোঁয়া ছড়ালে বাসিন্দারাও ভেবে নিতেন পুরসভা কাজ করছে। কিন্তু তাতে যে কোনও কাজ হত না, তা বুঝতে পেরে নিজেদের পরিকল্পনা বদল করেছে পুরসভা। কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেঙ্গি দমনে প্রকাশ্যে ধোঁয়া ছড়ানোর বিপক্ষে। তবে কলকাতা পুরসভা ধোঁয়া ছড়ানো বন্ধ করলেও, লাগোয়া একাধিক পুরসভায় মশাবাহিত রোগ দমনে ধোঁয়া দেওয়ার রেওয়াজ এখনও রয়েছে। বিধাননগর পুরসভাতেও গত বছর তা নজরে পড়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের পুস্তিকায় বিভ্রান্তি আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন পতঙ্গবিদদের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy