Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সংরক্ষণ কী ভাবে, কাটছে না ধোঁয়াশা

লেদার টেকনোলজি বিশেষজ্ঞদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, লেদার টেকনোলজির ছাত্র হলেও তিন বছর ধরে মরদেহ সংরক্ষণ করা কঠিন।

বার করে আনা হচ্ছে বীণা মজুমদারের দেহ। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

বার করে আনা হচ্ছে বীণা মজুমদারের দেহ। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ০২:১২
Share: Save:

বেহালার ২৫ জেমস লং সরণিতে মা বীণা মজুমদারের দেহ সংরক্ষণ করে রেখেছিল ছেলে শুভব্রত। বীণাদেবীর মৃত্যুর প্রায় তিন বছর পরে বৃহস্পতিবার সেই বাড়ির ফ্রিজারের মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় দেহটি।

কিন্তু কী পদ্ধতিতে সম্ভব হল তিন বছর ধরে মৃতদেহ সংরক্ষণ করে রাখা, মিলছে না সে প্রশ্নের উত্তর। পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়ার মৃতদেহে কাটা দাগ দেখা গিয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, পেটের একাংশ কেটে ভিতরের অঙ্গ বার করে নেওয়া হয়েছিল। তার পরে মৃতদেহে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে ফ্রিজারের মধ্যে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট হাতে না এলে নিশ্চিত ভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, মরদেহ সংরক্ষণ করতে দক্ষতার প্রয়োজন। আর পাঁচ জনের পক্ষে সেই কৌশল রপ্ত করা কঠিন। শুভব্রত তবে কী ভাবে এই কৌশল শিখল? প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, শুভব্রত লেদার টেকনোলজি নিয়ে উচ্চশিক্ষা চালিয়েছ। তাই প্রাণীদেহ সংরক্ষণের ধারণা তার কিছুটা রয়েছে।

আরও পড়ুন:
তিন বছর ধরে মায়ের দেহ ফ্রিজে লুকিয়ে রাখলেন ছেলে! বেহালায় চাঞ্চল্য

শুধু দেহ নয়, মাকে ‘রাখতেই’ কি এই আয়োজন

লেদার টেকনোলজি বিশেষজ্ঞদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, লেদার টেকনোলজির ছাত্র হলেও তিন বছর ধরে মরদেহ সংরক্ষণ করা কঠিন। কারণ, এই শাখার পড়ুয়াদের মূলত চামড়ার সংরক্ষণের কৌশল শেখানো হয়। কিন্তু সেই সংরক্ষণের পদ্ধতিতেও সর্বোচ্চ পঁচিশ দিন চামড়া ঠিক রাখা সম্ভব। কারণ, এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে চামড়া বিপণনের জন্যই পড়ুয়াদের সংরক্ষণের পাঠ দেওয়া হয়। তাঁদের ধারণা, আরও উন্নত মানের কোনও রাসায়নিক ব্যবহার করেছে শুভব্রত। তার জন্য হয়তো সে শিখে নিয়েছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষ কোনও কৌশল বলে মনে করছেন তাঁরা।

তবে চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, তিন বছর ধরে মৃতদেহ সংরক্ষণের কৌশল শিখে নেওয়াও কঠিন। শহরের একাধিক হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, স্পিরিট, ন্যাপথলিন, ফরমালডিহাইডের মতো রাসায়নিক ব্যবহার করে মৃতদেহ সংরক্ষণ করা যায়। যে কোনও ওষুধের দোকান থেকে এ ধরনের রাসায়নিক মেলে। কিন্তু এত কিছু ব্যবহারের পরেও তিন বছর ধরে মৃতদেহ সংরক্ষণ করে রাখা সহজ নয়। সে কাজ করতে আরও কোনও ধরনের রাসায়নিক প্রয়োজন। সেই রাসায়নিক বেশ দুর্লভ। অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তিতে সেই রাসায়নিক ব্যবহার হয়েছিল বলেই তাঁদের ধারণা। পাশাপাশি, মৃতদেহের পেট কেটে অঙ্গ বার করার কৌশল রপ্ত করাও কঠিন। কী ভাবে সেই কৌশল চিকিৎসক না হয়েও শুভব্রত রপ্ত করল, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে দু’টি রাসায়নিক দ্রব্যের বোতল পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি আসলে কী, তা জানার জন্য গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে। এ কাজ শুভব্রত একাই করেছে না কি অন্য কেউ এর সঙ্গে জড়িত, সে প্রশ্নও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE