স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই ষাটের কোঠা পেরিয়েছেন। হাত ধরাধরি করে ধীর পায়ে লম্বা বারান্দার দু’ধারের বসার জায়গা, আর্ট গ্যালারি ঘুরে ঘুরে দেখছেন তাঁরা। সব শেষে ঢুকলেন গ্রন্থাগারে। বই হাতে নিয়ে সামনের চেয়ারে বসে পড়লেন বৃদ্ধা। হাত নেড়ে সঙ্গীকে পাশে বসার ইশারা করে বলেন, ‘‘এ রকম পড়ার জায়গা আমার কত দিনের শখ। কত বই না!’’ পাশে বসা বৃদ্ধ বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরে জার্মানিতে ছেলেকে ফোনে জানাব। এখানে আমাদের ভালই কাটবে।’’
তাঁরা একা নন, ওই দম্পতির মতো আরও অনেকেই বৃহস্পতিবার বারুইপুরের উত্তরভাগে ঘুরে দেখলেন তাঁদের ভবিষ্যতের অবসর-বাড়ি। বিদেশে তো বটেই, দেশের নানা প্রান্তেও অবসরপ্রাপ্তদের জন্য বিশেষ বাসস্থান তৈরির চল হয়েছে। এ শহরই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? অবসরপ্রাপ্তদের কথা ভেবেই ‘শ্রীঅরবিন্দ ইনস্টিটিউট অব কালচার’-এর উদ্যোগে বারুইপুরে তৈরি হয়েছে ‘অমর্ত্য’। এ দিন উৎসাহীদের উপস্থিতিতে উদ্বোধন হল সেই রিটায়ারমেন্ট কমিউনিটির।
‘শ্রীঅরবিন্দ ইনস্টিটিউট অব কালচার’-এর সচিব রঞ্জন মিত্র জানালেন, ৪০টি পরিবারের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে খাওয়ার জায়গা, পুনর্বাসন কেন্দ্র, ধ্যানের ঘর, গ্রন্থাগার এবং আর্ট গ্যালারি। থাকছে সর্ব ক্ষণের চিকিৎসা এবং অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা। রঞ্জনবাবু জানান, ৫৫ বছরের বেশি বয়সি যে কেউ এখানে থাকার আবেদন জানাতে পারেন। জমা করা অর্থের ভিত্তিতে তিন ধরনের ফ্ল্যাটের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া যাবে একটি। রঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‘বয়স হলে নানা ধরনের চিন্তা বাড়ে। বাজার করে দেবে কে, হাসপাতালে ভর্তি করাবে কে? তা ছাড়া ছেলে-মেয়েকে বড় করতে গিয়ে, পরিবারকে সময় দিতে গিয়ে বহু মানুষেরই ছোটবেলার সুকুমার ইচ্ছাগুলি অপূর্ণ থেকে যায়। সেই সব দিক পূর্ণ করার দায়িত্ব নিয়েছে এই প্রকল্প।’’ এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার-এর সম্পাদক স্বামী সুপর্ণানন্দ, শ্রীঅরবিন্দ গবেষক তথা শিক্ষক বিশ্বনাথ রায়, টাটা ট্রাস্টের প্রতিনিধি-সহ বহু বিশিষ্টজন। অনুষ্ঠান শেষে স্বামী সুপর্ণানন্দ বলেন, ‘‘এটি ভাল উদ্যোগ। মধ্যবিত্তদের জন্য আরও কী কী করা যায়, তা ভাবতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy