সবুজ: এ ভাবেই ছাদে ‘কিচেন গার্ডেন’-এর পরিচর্যা। ছবি: শৌভিক দে
রান্নার ফাঁকে শর্মি রায় দেখেন কাঁচালঙ্কা নেই। ‘‘গাছ থেকে একটু লঙ্কা পেড়ে নিয়ে আয় তো।’’—নির্দেশ পেয়ে পরিচারিকা এক ছুটে ছাদে গিয়ে এক মুঠো লঙ্কা নিয়ে আসলেন পরিচারিকা। বেজায় খুশি শর্মি গুনগুন করে রান্নাটা শেষ করে ফেললেন।
রঞ্জিনী বন্দ্যোপাধ্যায় সকালে গাছে জল দেওয়ার সময়ে দেখে এসেছেন সাদা বেগুনগুলো বেশ বড়সড় হয়েছে। রাতে বেগুনপোড়া করবেন বলে ঠিকও করে ফেলেছেন।
ছেলে আজ স্যান্ডউইচ খেতে চেয়েছে। নবনীতা গঙ্গোপাধ্যায় হিসেব কষে দেখলেন পাউরুটি ছাড়া বাকি সবই তো ছাদের গাছে রয়েছে। মাশরুম, টমেটো, লেটুস, এমনকী আলুও।
শহর কলকাতার বাসিন্দা এঁরা। শর্মির বাড়ি আলিপুরে। বাকি দু’জন সল্টলেকের বাসিন্দা। নবনীতা ও শর্মির বাড়িতে নিজস্ব ছাদ থাকলেও একতলার ফ্ল্যাটে থাকেন রঞ্জিনী। তাঁদের কারও ছাদে, কারও ফ্ল্যাটের সামনে এক চিলতে বাগানে ছোট ছোট প্লাস্টিকের বাক্সে ফলছে ঢ্যাঁড়স, লঙ্কা, লেবু, আদা, রসুন, পটল, ঝিঙে, আলু, পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বিভিন্ন শাক — সরাসরি বাগান থেকে চলে আসছে হেঁশেলে। বাগানের পোশাকি নাম ‘কিচেন গার্ডেন’। তালিকায় পার্সলে, সেলেরি, পুদিনা, ছোট এলাচ, তেজপাতা, গোলমরিচ, হলুদ এমনকী ভুট্টাও রয়েছে।
নবনীতারা জানিয়েছেন, আনাজের স্বাদটা বড় প্রাপ্তি। রঞ্জিনী জানিয়েছেন, তাঁর সামনে বাগানে যে শসা হয়েছে, তার সঙ্গে বাজারে পাওয়া শসার স্বাদের অনেক তফাৎ। পুরো চাষটাই হচ্ছে জৈব পদ্ধতিতে। কোথাও কোনও রাসায়নিকের বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকছে না।
মধ্যবিত্তের প্রয়োজনীয় এই ফল ও আনাজের চাষ যে ছোট জায়গায় নিজেদের ছাদেই করা সম্ভব, তা প্রথম দেখিয়ে দেন খড়্গপুর আইআইটি-র কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক বিজয়চন্দ্র ঘোষ। তিনি ‘আরবান ফার্মিং’ নাম দিয়ে শহরের বিভিন্ন বড় বড় বাড়ির ছাদে পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করেছেন। এখন তিনি তাঁর এই পদ্ধতি শিখিয়ে যেতে চান ছাত্রদের।
তাঁর সঙ্গেই একসময়ে কাজ করেছিলেন পাঁশকুড়ার শুভেন্দু শেখর দাস। আদতে চাষির বাড়ির ছেলে শুভেন্দু ইঁট-কাঠ-পাথরের শহরে বেড়ে ওঠা আর বুকের মধ্যে জৈব চাষের স্বপ্ন দেখা উত্তর কলকাতার বাসিন্দা সুহৃদ চন্দ্রের সঙ্গে হাত মেলান। বাড়ির বাগানে, ছাদে, ব্যালকনিতে, জানলার সামনে (যেখানে রোদ পৌঁছবে) এ ভাবে ছোট ছোট প্লাস্টিকের বাক্সে যে ‘কিচেন গার্ডেন’ বানানো যায়, তার ভাবনাটা সুহৃদের। বাক্স প্রতি খরচ হচ্ছে ৫০০ টাকা। মাসে ১০০০ টাকার বিনিময়ে সেই কিচেন-গার্ডেনের রক্ষণাবেক্ষণও করছেন সুহৃদরা।
সুহৃদ জানিয়েছেন, বৃহত্তর সল্টলেকের মহিষবাথানে একটি নার্সারি বানিয়েছেন। সেখানেই রোপণ চলছে বীজ। প্লাস্টিকের ছোট ছোট বাক্সে কেঁচো সার, নারকেল ছোবড়ার গুঁড়ো ও পরীক্ষাগার থেকে আনা অনুজীব মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে বিশেষ ধরনের মাটি। তাতেই জৈব পদ্ধতিতে ফলছে আনাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy