Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জেলবন্দিকে ‘দেখলেন’ ছাত্রীর মা

গত ২৯ মার্চ আদালত ওই শিক্ষকের জামিন মঞ্জুর করে শর্ত দিয়েছিল, একজন জামিনদার দরকার, যাঁর আলিপুর আদালতের অধীনে কলকাতা পুলিশের যে সব থানা রয়েছে, সেই সব থানা এলাকার মধ্যে কোনও একটিতে নিজস্ব সম্পত্তি রয়েছে।

নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার পরে অভিভাবকদের বিক্ষোভ। ফাইল চিত্র

নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার পরে অভিভাবকদের বিক্ষোভ। ফাইল চিত্র

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৮ ১৬:৫৫
Share: Save:

আদালত জামিন দিয়েছে এক মাস আগে। কিন্তু আদালতের রাখা শর্ত মানতে পারেনি কারমেল-কাণ্ডে অভিযুক্ত শিক্ষকের পরিবার। তাই গত মার্চ মাসে আদালত থেকে অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েও জেলের ভিতরেই দিন কাটাচ্ছেন ওই শিক্ষক!

গত ২৯ মার্চ আদালত ওই শিক্ষকের জামিন মঞ্জুর করে শর্ত দিয়েছিল, একজন জামিনদার দরকার, যাঁর আলিপুর আদালতের অধীনে কলকাতা পুলিশের যে সব থানা রয়েছে, সেই সব থানা এলাকার মধ্যে কোনও একটিতে নিজস্ব সম্পত্তি রয়েছে। কিন্তু সেই শর্ত পূরণ করতে না পারায় জেলেই রয়ে গিয়েছেন ওই শিক্ষক। তাঁর জেঠতুতো দাদা সোমবার বলেন, ‘‘অনেক কষ্ট করে ব্যক্তিগত বন্ডের টাকা জোগাড় করেছি। কিন্তু সম্পত্তি রেখে জামিনদার হবেন এমন কাউকে পাইনি।’’

এ সব ক্ষেত্রে আইনজীবীরাই তো জামিনদার খুঁজে দেন। ওই শিক্ষকের আইনজীবী সৌরভ বণিক বলেন, ‘‘একান্ত ভাবেই ওই জামিনদার খুঁজে না পেলে হাইকোর্টে শর্ত শিথিল করার আর্জি জানাব। হাইকোর্টে এত দিন কর্মবিরতি চলছিল। তাই পারিনি।’’

জেলবন্দি ওই শিক্ষকের সমস্যা আরও বাড়িয়েছে কারমেলের পড়ুয়ার অভিযোগকারিণী মায়ের আনা নতুন একটি অভিযোগ। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে ওই অভিভাবক জানিয়েছেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে তিনি তাঁর বাড়ির উল্টো দিকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের আইনজীবী এ হেন অভিযোগে স্তম্ভিত। সৌরভবাবু বলেন, ‘‘অভিযুক্ত জামিন পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু শর্ত পূরণ করতে না পারায় এখনও উনি আলিপুর জেলে। ঠাকুরপুকুরে অভিযোগকারিণীর বাড়ির উল্টো দিকে পৌঁছনোর অভিযোগ পুরোপুরি মনগড়া।’’

গত ৬ এপ্রিল হরিদেবপুর থানায় লিখিত একটি অভিযোগে পড়ুয়ার মা জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে কারমেলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। ৯ ফেব্রুয়ারি স্কুলের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে মেয়ের উপরে নির্যাতন করার অভিযোগ থানায় দায়ের করেন তিনি। তার ভিত্তিতে ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২৯ মার্চ আদালত থেকে অভিযুক্ত জামিন পেয়েছেন। আদালত তাঁর উপরে কয়েকটি শর্ত আরোপ করেছে। তাতে বলা হয়েছে হরিদেবপুর এবং টালিগঞ্জ থানা এলাকায় ওই অভিযুক্ত শিক্ষক ঢুকতে পারবেন না। কিন্তু ওই শিক্ষককে গত ২ এপ্রিল বিকেলে তিনি তাঁর বাড়ির সামনে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন বলে মহিলার অভিযোগ। তাঁর সঙ্গে শিক্ষকের মুখোমুখি দেখা হয়ে যায় বলেও অভিযোগ ওই অভিভাবকের।

পরের দিন ৩ এপ্রিলও বিকেলে দোকানে যাওয়ার সময়ে তিনি একই ভাবে তাঁর ফ্ল্যাটের সামনের রাস্তায় ওই শিক্ষককে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন বলে অভিযোগ ওই পড়ুয়ার মায়ের। এর পর থেকে তিনি নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন বলে হরিদেবপুর থানায় জানিয়েছেন মহিলা। পুলিশের কাছ থেকে তিনি নিরাপত্তাও চেয়েছেন।

কিন্তু ওই অভিযুক্ত শিক্ষক তো জেল থেকেই বেরোতেই পারেননি। কীসের ভিত্তিতে তা হলে এমন অভিযোগ করছেন তিনি? অভিযোগকারিণী অভিভাবক বলেন, ‘‘আমি তো জানতাম উনি জামিনে ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন। ওঁর মতোই তো কাউকে দেখলাম।’’ অভিযুক্ত শিক্ষকের আইনজীবী জানিয়েছেন, মহিলার বিরুদ্ধে তাঁর মক্কেলকে দিয়ে আদালতের কাছেই অভিযোগ জানাবেন তিনি।

রাজ্যের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘এরকম হয়ে থাকলে তা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।’’ তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, পকসো মামলায় দোষ করলে সাজা হয়। কিন্তু মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করলেও সেটা কিন্তু ফৌজদারি অপরাধেরই সামিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE