Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাতে পার্টি, সকালেই ফ্ল্যাটের নীচে মিলল দেহ

এ দিন পূর্ব কমলাপুর রিকশা স্ট্যান্ডের উল্টো দিকে একটি ফ্ল্যাটবাড়ির সামনে দেহটি পড়ে থাকতে দেখেন প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। তাঁর পরনে একটি গামছা ছাড়া কিছু ছিল না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৮ ০২:৩৪
Share: Save:

যুবকের খোঁজ মিলছে না। দমদম থানায় তাই নিখোঁজ ডায়েরি করতে এসেছিলেন তাঁরই পাঁচ বন্ধু। পুলিশের কাছ থেকে তাঁরা জানলেন, বৃহস্পতিবার সকালে সেই নিখোঁজ ব্যক্তিরই দেহ মিলেছে রাস্তায়। মৃতের নাম মুকুল শেঠ (৩৮)। তাঁর বাড়ি সোনারপুরে।

এ দিন পূর্ব কমলাপুর রিকশা স্ট্যান্ডের উল্টো দিকে একটি ফ্ল্যাটবাড়ির সামনে দেহটি পড়ে থাকতে দেখেন প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। তাঁর পরনে একটি গামছা ছাড়া কিছু ছিল না। বাসিন্দারা জানান, মৃতের ঠোঁটের কোণে রক্তের দাগ লেগে ছিল। ডান দিকের পাঁজরে ছিল লম্বা ক্ষত। খবর পেয়ে ৬টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। সাড়ে ৬টা নাগাদ দেহ উদ্ধার করে থানায় পাঠানো হয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, দেহ উদ্ধারের প্রায় তিন ঘণ্টা পরে এক মহিলা-সহ পাঁচ জন দমদম থানায় আসেন। তাঁদের মধ্যে চার জনই সল্টলেকের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ওই মহিলাও আগে সেখানে কাজ করতেন। আপাতত বারাসতে একটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান।

পুলিশ সূত্রের খবর, পূর্ব কমলাপুরের যে ফ্ল্যাটবাড়ির নীচ থেকে মুকুলের দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেই ফ্ল্যাটের চারতলায় ওই মহিলা ভাড়া থাকেন। বুধবার তাঁর বাড়িতেই সল্টলেকের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই চার শিক্ষকের মধ্যে এক জনের জন্মদিন উপলক্ষে পার্টি ছিল। পেশায় ঠিকাদার মুকুলও সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন। সন্ধ্যা থেকে চলা পার্টিতে খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি, প্রচুর মদ্যপানও হয়েছিল।

পুলিশ সূত্রের খবর, দুই বন্ধু পার্টি শেষে চলে যান। কিন্তু অতিরিক্ত মদ্যপানের জন্য মুকুল-সহ বাকিরা রয়ে যান। এ দিন সকালে উঠে মুকুলকে দেখতে না পেয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করতে সকলে দমদম থানায় যান। সেখানে নিখোঁজ ব্যক্তির বিবরণ শুনে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের সন্দেহ হয়। এর পরে সকালে উদ্ধার হওয়া দেহের ছবি দেখালে বন্ধুরা জানান, ওই ব্যক্তির খোঁজেই তাঁরা এসেছেন!

পূর্ব কমলাপুরের ওই ফ্ল্যাটে থাকেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুপ্রিয়া কুণ্ডু। ঘটনাচক্রে, তাঁর কার্যালয়ের সিঁড়ির উপরেই রাস্তার দিকে মাথা করে দেহটি পড়ে ছিল। সুপ্রিয়ার স্বামী নির্মল কুণ্ডু বলেন, ‘‘ওই অফিসেই রাত ১টা পর্যন্ত ফুটবল খেলা দেখেছি। পাড়ার চায়ের দোকানটা খোলা ছিল আরও কিছু ক্ষণ। কিন্তু কেউ কিছু দেখেনি বলে জেনেছি। সকালে আমার এক বন্ধু যখন ফোন করে দেহ উদ্ধারের কথা বলল, বিশ্বাসই করিনি।’’

ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ মধ্যমগ্রামে কাজে যাচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ছবি দাস এবং মিঠু মণ্ডল। সেই সময়ে তাঁরা দেহটি পড়ে থাকতে দেখেন। এ দিন ছবি বলেন, ‘‘আমরা ভাবলাম, মদ খেয়ে কেউ পড়ে রয়েছে। ফিরে শুনছি এই ঘটনা!’’

শান্ত পাড়ায় দেহ উদ্ধারের তদন্তে নেমে বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন পুলিশ আধিকারিকেরা। পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রায় ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছ’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব। প্রায়ই তাঁরা এমন পার্টির আয়োজন করতেন। কমলাপুরে ওই মহিলার বাড়িতেই পার্টির আয়োজন হত। ভিন্ন পেশার মানুষ হয়েও মুকুলের সঙ্গে বাকি পাঁচ জনের বন্ধুত্ব কী ভাবে হল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশ বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছে, অতিরিক্ত মদ্যপান করার কারণে এ দিন সোনারপুরের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না মুকুল। তাই ওই মহিলার বাড়িতেই অন্য ঘরে তিনি শুয়ে পড়েন।

সেই অবস্থা থেকে রাস্তায় কী ভাবে মুকুলের দেহ উদ্ধার হল? প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বহুতলের বারান্দা থেকে পড়েই সম্ভবত মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির। এ দিন মুকুলের দাদা এসে দেহ নিয়ে যান। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে অস্বাভাবিকতা কিছু মেলেনি। তবু সব দিক খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে ফরেন্সিক দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Youth Dead Body Party
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE