Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কাটা মাংস দেখলেই কেটে পড়ছেন ক্রেতা

মুরগি আগে থেকে কেটে টুকরো করে বিক্রির রেওয়াজ ছিল নিউ মার্কেটে। ক্রেতারাও নিশ্চিন্তে তা কিনে নিয়ে যেতেন।

বিক্রি কমেছে মুরগির মাংসের। দোকানে নেই ক্রেতাদের ভিড়। বুধবার।

বিক্রি কমেছে মুরগির মাংসের। দোকানে নেই ক্রেতাদের ভিড়। বুধবার।

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৮ ০২:৫০
Share: Save:

এত দিন কেউ প্রশ্ন তোলেননি। এখন প্রায় সকলেই তুলছেন। কারণ, সাম্প্রতিক ভাগাড়-কাণ্ডে জড়িয়ে গিয়েছে নিউ মার্কেটের নামও।

মুরগি আগে থেকে কেটে টুকরো করে বিক্রির রেওয়াজ ছিল নিউ মার্কেটে। ক্রেতারাও নিশ্চিন্তে তা কিনে নিয়ে যেতেন। কিন্তু ভাগাড়-আতঙ্কের জেরে কাটা মাংস কিনতে রাজি হচ্ছেন না অধিকাংশ ক্রেতাই। সম্প্রতি হাতিবাগান থেকে নিউ মার্কেটে মাংস কিনতে এসেছিলেন এক হোটেল-মালিক। কেটে রাখা মুরগি কিনতে সাফ অস্বীকার করলেন তিনি। বললেন, চোখের সামনে মুরগি কেটে দিলে তবেই কিনবেন।

শুধু ওই হোটেল-মালিক নন, নিউ মার্কেটে মাংস কিনতে আসা অধিকাংশ ক্রেতারই দাবি, চোখের সামনে জ্যান্ত মুরগি কেটে দিতে হবে। মানিকতলা থেকে আসা এক হোটেল-কর্মীর কথায়, ‘‘আমাদের হোটেলে যাঁরা খেতে আসছেন, তাঁদের অনেকেই জিজ্ঞাসা করছেন, মাংস ফ্রিজারের নয়তো? আমরা বলেছি, মাংস নিউ মার্কেট থেকে চোখের সামনে কাটিয়ে আনছি। তা সত্ত্বেও মাংসের পদের বিক্রি অনেকটাই কমেছে।’’

শুধু নিউ মার্কেটে নয়, ভাগাড়-কাণ্ডের প্রভাব পড়েছে মাংসের সামগ্রিক বিক্রিতেও। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এ রাজ্যের ৯৮ শতাংশ মানুষ আমিষভোজী। তাঁদের চাহিদা মেটাতে সপ্তাহে অন্তত আড়াই কোটি কেজি মুরগির মাংস লাগে। খাসির মাংস লাগে পাঁচ-ছয় লক্ষ কেজির মতো। কিন্তু চাহিদা এখন নিম্নমুখী।

শহরের বিভিন্ন বাজারেও কেটে রাখা মাংসের বিক্রি অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে। দমদমের মুরগি ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, সময় বাঁচাতে মুরগি কেটে রাখতেন তাঁরা। এখন কাটা মাংস দেখে সন্দেহ হচ্ছে ক্রেতাদের। তাই বেশির ভাগ বিক্রেতাই মাংস কেটে রাখছেন না। ‘পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশন’-এর সাধারণ সম্পাদক মদনমোদন মাইতি বলেন, ‘‘যে সমস্ত দোকান ক্রেতাদের সামনে মুরগি কেটে বিক্রি করছে, তাদের ব্যবসা এখনও পর্যন্ত ঠিকই আছে। হিমায়িত বা প্রক্রিয়াজাত প্যাকেটবন্দি মাংসের বিক্রি তুলনায় কিছুটা কমেছে।’’

রাজ্য প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন নিগম নিজস্ব বিপণি ছাড়াও ফ্র্যাঞ্চাইজির মাধ্যমে হরিণঘাটার মাংস বিক্রি করে। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গৌরীশঙ্কর কোনারের দাবি, ‘‘আমাদের নিজস্ব বিপণিতে মাংস বিক্রি পাঁচ শতাংশ হলেও বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা প্রশ্নে জেরবার করে দিচ্ছেন।’’ গৌরীশঙ্করবাবু জানান, মানুষকে আশ্বস্ত করতে হরিণঘাটায় কী ভাবে মাংস কেটে প্রক্রিয়াকরণ করে মোড়কজাত করা হয়, তার ভিডিও নিগমের স্টলে দেখানো হচ্ছে।

তবে ভাগাড়-কাণ্ডে হাসি ফুটেছে মাছের ব্যবসায়। পাতিপুকুরের পাইকারি মাছ বাজারে আড়তদার উত্তম হালদার বললেন, ‘‘সাধারণত অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে দিনে দশ ট্রাক রুই-কাতলা আসে। এখন ১২-১৩টি ট্রাক ঢুকছে।’’ হাওড়ার পাইকারি মাছ ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘ফিশ মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ বলেন, ‘‘চাহিদা বাড়ায় ১৫-২০ শতাংশ দামও বেড়েছে। তবে জোগান ঠিক থাকায় দামের ফারাক খুব বেশি হয়নি।’’ মানিকতলার মাছ বিক্রেতাদের মতে, গরমে পুকুর, ভেড়ি, এমনকী সামুদ্রিক মাছেরও জোগান কম থাকে। ফলে দাম একটু বাড়ে। খুচরো মাছ বিক্রেতাদের দাবি, ভাগাড়-কাণ্ডের জন্য কিলোয় ১৫-২০ টাকার বেশি মাছের দাম বাড়েনি।

অন্য দিকে, মৎস্য উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৌম্যজিৎ দাস বলেন, ‘‘দিনে ৬০০-৭০০ কেজি মাছ বিক্রি হত। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে হাজার কেজিতে। ছুটির দিনে বা সপ্তাহের শেষে যেখানে ৮০০-৯০০ কেজির মতো মাছ বিক্রি হত, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৪০০-১৫০০ কেজির মতো।’’ নিগমের এক কর্তা জানান, পয়লা বৈশাখ থেকে নিগম অনলাইনে রান্না করা ও টাটকা মাছ বিক্রির যে ব্যবস্থা চালু করেছিল, তাতেও বিক্রি বেড়েছে। মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘সামগ্রিক ভাবে কয়েক সপ্তাহ ধরে মাছের বিক্রি ভালই বেড়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Carcass meat Rotten Meat Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE