Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ইঞ্জেকশন বন্ধ, দৃষ্টি হারাতে পারেন অনেকে

স্বাস্থ্য দফতর তাদের নতুন জরুরি ওষুধের তালিকায় এই ‘র‌্যানিবিজুম্যাব’ ইঞ্জেকশনকে রাখেইনি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮ ০২:২১
Share: Save:

রেটিনা নষ্ট হয়ে চোখের দৃষ্টি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলা আটকাতে রোগীদের এই ইঞ্জেকশন দেওয়া হত। শুধু কলকাতার ‘রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’ (আরআইও)-তেই প্রতি মাসে ৪০০-৪৫০ রোগী ওই ইঞ্জেকশন পেতেন। এ ছাড়া, সময়ের আগে জন্মানো বেশির ভাগ শিশুর চোখ বাঁচাতে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আরআইও-র রেটিনা ক্লিনিকে এই ইঞ্জেকশন দেওয়া হত। কারণ, ওই শিশুদের রেটিনায় গুরুতর সমস্যা থাকে। কিন্তু আপাতত এই চিকিৎসাও বন্ধ।

স্বাস্থ্য দফতর তাদের নতুন জরুরি ওষুধের তালিকায় এই ‘র‌্যানিবিজুম্যাব’ ইঞ্জেকশনকে রাখেইনি। ফলে, পয়লা এপ্রিলের পরে আর কোনও সরকারি হাসপাতালে এই ইঞ্জেকশন সরবরাহ করা হচ্ছে না। এ দিকে, আরআইও-র ভাঁড়ারেও কমতে কমতে এই ইঞ্জেকশন আর নেই। রেটিনার অস্ত্রোপচারের যত তারিখ দেওয়া হয়েছিল, সব বাতিল করতে হয়েছে। নতুন কোনও তারিখও চিকিৎসকেরা দিতে পারছেন না। রোগীরা দিশাহারা। এঁদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ মানুষ এখনই ইঞ্জেকশন না পেলে কিছু দিনের মধ্যেই অন্ধ হয়ে যাবেন। গোটা রাজ্যে সরকারি হাসপাতাল থেকে বছরে প্রায় ১১ হাজার মানুষ এই ইঞ্জেকশন পান। অধিকাংশেরই বাজার থেকে এই ইঞ্জেকশন কেনার ক্ষমতা নেই।
কারণ, এক-একটি ইঞ্জেকশনের দাম প্রায় ১৮ হাজার টাকা। বছরে এক-এক জনের তা লাগে তিন-চারটি। এটা না পেলে তাঁরা একে একে দৃষ্টিশক্তি হারাবেন। আরআইও-তে প্রতিদিন তাঁরা হাসপাতালে ধর্না দিচ্ছেন, কান্নাকাটি করছেন, অনেকে রাগে ফেটে পড়ছেন চিকিৎসকদের সামনে।

অসহায় আরআইও কর্তৃপক্ষ গত ১২ এপ্রিল স্বাস্থ্য ভবনে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে নিজেদের দিশাহারা অবস্থার কথা বর্ণনা করেছেন তাঁরা। কর্তৃপক্ষের কথায়, ‘‘রোগী-অসন্তোষ চরমে উঠেছে। রেটিনার সমস্ত অস্ত্রোপচার বাতিল করতে হচ্ছে। বিকল্প কোনও ওষুধ হাতে নেই। কী জবাব দেওয়া হবে, আমরা বুঝতে পারছি না।

অন্ধত্ব প্রতিরোধকারী ‘র‌্যানিবিজুম্যাব’ ইঞ্জেকশন সরকারি তালিকায় ফিরিয়ে না আনলে বহু মানুষ অন্ধ হয়ে যাবেন। বহু পরিবার ভেসে যাবে।’’ স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ১৮ এপ্রিল উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

‘র‌্যানিবিজুম্যাব’–এর বিকল্প হিসেবে অপেক্ষাকৃত কম দামের ‘বিভ্যাসিজুম্যাব’ ইঞ্জেকশন ব্যবহারের চিন্তাভাবনা শুরু করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। আদতে এটি পায়ুদ্বারের ক্যানসারের ওষুধ হলেও এক শ্রেণির চিকিৎসক ও হাসপাতাল রেটিনার চিকিৎসায় অনেক দিন ধরেই এটি ব্যবহার করছেন। মাস কয়েক আগে এই ওষুধের ব্যবহার নিয়ে কয়েক জন বিশিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা নবান্নে বৈঠকে বসেন। এই ওষুধের ব্যবহারে কিছু জায়গায় রোগীদের রেটিনায় বাড়াবাড়ি রকম সংক্রমণের ঘটনা ঘটায় দ্বিধায় রয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সপ্তাহ তিনেক আগে বিভ্যাসিজুম্যাবের কার্যকারিতা খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য দফতর চার সদস্যের কমিটি গঠন করে। তাতে রয়েছেন আরআইও-র অধিকর্তা অসীম চক্রবর্তী, মেডিক্যাল কলেজের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ শিবাশিস ভট্টাচার্য, আরআইও-র রেটিনা বিভাগের প্রধান অসীম ঘোষ ও ফার্মাকোলজির চিকিৎসক দীপক দাস। গত ৪ এপ্রিল বৈঠকে বসে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিভ্যাসিজুম্যাব রেটিনার সমস্যায় ব্যবহার করা উচিত নয়। তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায়।

কিন্তু র‌্যানিবিজুম্যাব-এর বিকল্পও আপাতত মিলছে না। আরও অন্ধকার ঘনাচ্ছে রেটিনা নষ্ট হতে বসা রোগীদের চোখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE