Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মায়ের দেহ বিদেশে পাঠাতে তৈরি হচ্ছিল কফিন

শুভব্রতর বাড়ির একতলা থেকে অর্ধনির্মিত একটি কাঠের কফিন উদ্ধার করার পরে ধাঁধায় পড়ে যান তদন্তকারীরা। একতলার যে ঘরে শুভব্রতর মা বীণাদেবীর মৃতদেহ রাখা হয়েছিল, তার পাশের ঘরে পাওয়া যায় কফিনটি।

মায়ের দেহ নিয়ে যেতে কফিন বানাচ্ছিলেন শুভব্রত। —নিজস্ব চিত্র।

মায়ের দেহ নিয়ে যেতে কফিন বানাচ্ছিলেন শুভব্রত। —নিজস্ব চিত্র।

শুভাশিস ঘটক ও শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৫:৩৭
Share: Save:

অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য মায়ের মৃতদেহ বিদেশে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছিলেন বেহালার শুভব্রত মজুমদার। এমনই দাবি করে তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ওই দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য কফিনও তৈরি করাচ্ছিলেন শুভব্রত।

শুভব্রতর বাড়ির একতলা থেকে অর্ধনির্মিত একটি কাঠের কফিন উদ্ধার করার পরে ধাঁধায় পড়ে যান তদন্তকারীরা। একতলার যে ঘরে শুভব্রতর মা বীণাদেবীর মৃতদেহ রাখা হয়েছিল, তার পাশের ঘরে পাওয়া যায় কফিনটি। ওই কফিন তৈরির উদ্দেশ্য কী, তা তদন্তকারীরা শুভব্রতর কাছে জানতে চেয়েছিলেন। তদন্তকারীদের দাবি, কী ভাবে মায়ের মৃতদেহ বিদেশে নিয়ে যাওয়া যায়, সে ব্যাপারে বিভিন্ন চিকিৎসক এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেন শুভব্রত।

বিদেশে মৃতদেহ পাঠানোর উদ্দেশ্য কী? এক তদন্তকারী জানাচ্ছেন, মৃত্যুর পরে অপটু হাতে মায়ের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা হয়েছিল বলে শুভব্রত জানিয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস, ঠিক ভাবে ওই সব অঙ্গ প্রতিস্থাপন না করলে মা বেঁচে ওঠার পরে তাঁর শরীরে খুঁত থেকে যাবে। তাই অঙ্গ প্রতিস্থাপন করানোর জন্য মৃতদেহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিলেন ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, ‘ক্রায়োনিক্স’ সংস্থার সঙ্গে আলোচনার পরে শুভব্রতর ধারণা হয়েছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটি অঙ্গই আলাদা আলাদা ভাবে কিনতে পাওয়া যাবে।

তদন্তকারীদের কথায়, মায়ের মৃতদেহ কফিনবন্দি করে জলপথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিও নেওয়া শুরু করেছিলেন শুভব্রত। সম্প্রতি এক কাঠের মিস্ত্রিকে নিয়ে এসে বাড়িতেই ওই কফিন তৈরি করা হচ্ছিল। শুভব্রতর মায়ের দেহ একতলার ঘরে রাখা ছিল। কিন্তু তিনি নিজে দোতলায় বাবা গোপালবাবুর পাশের ঘরেই থাকতেন। ওই ঘর থেকে একটি ল্যাপটপ ও অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত নানা বই উদ্ধার করেছে পুলিশ।

উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মী বাবা ও মায়ের পেনশনের অ্যাকাউন্ট শুভব্রতই দেখভাল করতেন বলে দাবি পুলিশের। তিনি বাবা ও মায়ের পেনশনের টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে জমা করতেন। তার পরে ডেবিট কার্ড মারফত ওই টাকা খরচ করতেন শুভব্রত। পুলিশ জানায়, মূলত মায়ের মৃতদেহে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টায় অধিকাংশ টাকা খরচ করেছেন ওই যুবক।

গোপালবাবুর এক আত্মীয়ের দেওয়া বয়ানের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, ‘ক্রায়োনিক্স’-এর গবেষণায় প্রায় এক কোটি টাকার কাছাকাছি খরচ করে ফেলেছেন শুভব্রত। ওই টাকা তাঁর বাবা ও মায়ের সঞ্চয়ের থেকেই খরচ করা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। জলপথে মায়ের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন আইনজীবীর পরামর্শও শুভব্রত নিয়েছিলেন বলে তদন্তকারীদের দাবি।

ময়না-তদন্তকারীদের কথায়, উদ্ধার হওয়া দেহ থেকে ফর্মালিনের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ বেরোচ্ছিল। তার তীব্রতার জেরে ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসকদের চোখ থেকে জল বেরিয়ে এসেছে। তদন্তকারীদের কথায়, বীণাদেবীর ঘর থেকে প্রায় ১৫ লিটার ফর্মালিন মিলেছে। তিনটি বয়ামে ওই ফর্মালিন রাখা হয়েছিল। হলুদ রঙের এক রাসায়নিক ভর্তি আরও কুড়িটি বয়াম উদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, সেগুলি রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE