অফিসবেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। বেশ ভিড় মেট্রো স্টেশনে। দমদমগামী এসি রেক ঢুকছে প্ল্যাটফর্মে, গতি কমিয়ে এনেছেন চালক। হঠাৎই সকলকে চমকে দিয়ে প্ল্যাটফর্মের সামনের দিকে, লাইনে ঝাঁপ দিলেন এক বৃদ্ধ! উপস্থিত যাত্রীরা দেখলেন, ট্রেনের ধাক্কায় তিনি লাইন ও প্ল্যাটফর্মের মাঝের ফাঁকা জায়গায় আটকে গেলেন। আর মেট্রোর প্রথম কামরাটি তাঁকে অতিক্রম করে চলে গেল!
মেট্রো সূত্রের খবর, বুধবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ বাঁশদ্রোণী সংলগ্ন মাস্টারদা সূর্য সেন স্টেশনের ওই ঘটনায় চালক বিষয়টি বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে ইমার্জেন্সি ব্রেক কষেন। ফলে ট্রেনের শেষ অংশটি পুরোপুরি প্ল্যাটফর্মে ঢোকার আগেই থেমে যায়। প্ল্যাটফর্মের যাত্রী ও নিরাপত্তারক্ষীরা দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় লাইন এবং প্ল্যাটফর্মের মাঝে পড়ে থাকা ওই বৃদ্ধের হাত-পা নড়ছে তখনও!
ভিড়ে ঠাসা প্ল্যাটফর্মে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। থার্ড রেলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দ্রুত ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করার কথা বলেন সকলে। কিন্তু যে হেতু ট্রেনটি তখনও পুরোপুরি প্ল্যাটফর্মে ঢোকেনি, তাই ওই সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে অচল অবস্থায় ট্রেনের বাতানুকূল যন্ত্র বন্ধ হয়ে যেত। তাতে অসুবিধায় পড়তেন রেকবোঝাই যাত্রীরা। আবার ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করার জন্য রেক পিছিয়ে আনাও জরুরি ছিল। যা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে সম্ভব হত না। এই অবস্থায় যাত্রীভর্তি রেকটিকে ধীরে ধীরে পিছিয়ে আনেন মেট্রো চালক। পুলিশ এবং মেট্রো কর্মীরা সেই সময়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে ওই বৃদ্ধকে প্ল্যাটফর্মের দিকে টেনে ধরে রাখেন, যাতে কোনও ভাবে তাঁর শরীরের অংশ লাইন স্পর্শ না
করে। ট্রেন পিছোলে প্ল্যাটফর্মে ওঠানো হয় তাঁকে।
মেট্রো সূত্রের খবর, আত্মহত্যা করতে চেয়ে মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ দিয়েও মেট্রো চালক এবং কর্মীদের তৎপরতায় এ ভাবেই রক্ষা পেলেন ৭৮ বছরের ওই বৃদ্ধ। প্রায় কুড়ি মিনিটের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পরে লাইন থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁকে। মেট্রো স্টেশনে তখনই কোনও অ্যাম্বুল্যান্স না মেলায় বাঁশদ্রোণী থানার ওসি নিজের গাড়িতে করে আহত বৃদ্ধকে দ্রুত নিয়ে যান এম আর বাঙুর হাসপাতালে। পড়ে গিয়ে তাঁর মাথার একটি অংশ ফেটে গিয়েছে। সেলাই দেওয়ার পরে তাঁর সিটি স্ক্যান এবং এক্স রে করানো হয়। স্যালাইনও দেওয়া হয়। এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
পুলিশ সূত্রের খবর, শুরুতে বৃদ্ধের পরিচয় জানা যায়নি। তার পরে তাঁর জামায় লাগানো দর্জির ট্যাগ থেকে খোঁজ করে পুলিশ জানতে পারে তিনি নেতাজিনগরের খানপুর রোডের বাসিন্দা। পরিবার সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন কর্মী ওই বৃদ্ধের দুই কন্যা এবং এক পুত্র রয়েছেন। বড় মেয়ে অধ্যাপিকা এবং ছোট মেয়ে সদ্য আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছেন। ছেলে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী। বেশ কিছু দিন ধরে ওই বৃদ্ধ অবসাদে ভুগছিলেন। তবে কেন তিনি আচমকা আত্মহত্যা করতে গেলেন তা পরিবারের কারও কাছে স্পষ্ট নয়। সকাল আটটা নাগাদ হঠাৎই কাউকে কিছু না বলে রিকশা করে সূর্য সেন স্টেশনে চলে আসেন বলে খবর।
মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সকালের ঘটনায় আধ ঘণ্টা মেট্রো চলাচল ব্যাহত হয়। ন’টা নাগাদ ফের স্বাভাবিক হয় মেট্রো চলাচল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy