Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

নেই নজর, জলদূষণ চলছে সুভাষ সরোবরে

বারবার তার স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তাভাবনার কথা বলা হলেও কার্যত কিছুই হয় না বলে অভিযোগ। এতটাই ফারাক দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর এবং উত্তর-পূর্বের সুভাষ সরোবরের মধ্যে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ১৪:২৭
Share: Save:

একটির জন্য পরিকল্পনার অন্ত নেই। তার স্বাস্থ্য রক্ষায় রয়েছে হাজারও নিয়ম। অন্যটি বরাবরই আলোকবৃত্তের বাইরে।

বারবার তার স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তাভাবনার কথা বলা হলেও কার্যত কিছুই হয় না বলে অভিযোগ। এতটাই ফারাক দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর এবং উত্তর-পূর্বের সুভাষ সরোবরের মধ্যে।

অথচ বেলেঘাটার সুভাষ সরোবরের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। প্রায় ৯৭.৯ একর জায়গা জুড়ে থাকা সরোবরে কাজ শুরু করে তৎকালীন কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (কেআইটি)। তখন ওই এলাকায় মেট্রো প্রকল্পের কাজ চলছিল। বলা হয়েছিল, ওই অংশ বাদে সুভাষ সরোবরের প্রায় ৩৯.৫ একর জলাশয় রক্ষা করাই মূল উদ্দেশ্য। সম্প্রতি অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের আবহেও ফের প্রশাসনের নজরে আসে এই সরোবর। বহিরঙ্গের কিছুটা সৌন্দর্যায়ন হয়। তবে ভেতরে যে কে সেই, বলছেন সরোবরে প্রাতর্ভ্রমণে আসা স্থানীয় মানুষ। পরিবেশকর্মীরা অভিযোগ জানান, ওই এলাকায় মেট্রো প্রকল্পের কাজের জন্য সরোবরের জল দূষিত হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁরা দাবি তোলেন, রবীন্দ্র সরোবরের মতো সুভাষ সরোবরেও জলে নেমে ছট পুজো বন্ধ করা হোক। যদিও গত বছরও সরোবরে নেমেই বিনা বাধায় পালন করা হয়েছে ছট পুজো।

সরোবরের সামনে গেলেই নজরে পড়বে অবহেলার ছবি। জলের মধ্যেই স্তূপাকারে জমে রয়েছে ময়লা। অবাধে চলছে স্নান, বাসন ধোওয়া। অথচ একেবারে বিপরীত ছবি রবীন্দ্র সরোবরে। সেখানে জোরদার নিরাপত্তার ফাঁক গলে অনিয়ম করা কার্যত অসম্ভব। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘এই পার্থক্যটা হয়তো আমারই ভুলে। সুভাষ সরোবর নিয়েও আমার রবীন্দ্র সরোবরের মতোই পরিবেশ আদালতে যাওয়া প্রয়োজন ছিল।’’ তাঁর মতে, রবীন্দ্র সরোবর থেকে অনেক বেশি পাখির বাস সুভাষ সরোবরে। সরকারি স্তরে এই সরোবর রক্ষায় এখনও কড়া না হলে দ্রুত হারিয়ে যাবে সে সব।

রবীন্দ্র সরোবরের ছবিটা কিন্তু এর বিপরীত। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

১৯৯৮ সালে দক্ষিণ কলকাতার লেক এলাকার দূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেন সুভাষবাবু। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে রাজ্য জীববৈচিত্র পর্ষদের তৎকালীন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে পরিবেশ আদালত। কমিটি লেক এলাকার দূষণ খতিয়ে দেখে রিপোর্ট জমা দেয়। এর পরেই রবীন্দ্র সরোবর নিয়ে নড়েচড়ে বসে আদালত। জীববৈচিত্র রক্ষার পাশাপাশি ছট পুজো উপলক্ষে জলের দূষণ ঠেকানো নিয়ে গত কয়েক বছরে নির্দেশিকা জারি হয়। এমনকী স্নান, কাপড় কাচা, বাসন ধোওয়া, বাজি ফাটানোর উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। বাড়ানো হয় নজরদারিও।

অথচ সুভাষ সরোবরের ক্ষেত্রে এমন নির্দেশিকাই নেই, জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। নজরদারির অভাবে মাঝেমধ্যেই সরোবরের জল থেকে দেহ উদ্ধারের মতো ঘটনাও ঘটে।

সুভাষ এবং রবীন্দ্র— দুই সরোবরেরই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নতুন কিছু পরিকল্পনা হচ্ছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।’’ অথচ সুভাষ সরোবরের অবহেলিত জলাশয় নিয়ে তাঁর কিছুই জানা নেই!

এই দায় এড়ানোর মানসিকতার জন্যেই পরিস্থিতি বদলায় না, জানাচ্ছেন প্রাতর্ভ্রমণকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subhas Sarovar water pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE