Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বছর ঘুরলেও পঞ্চসায়র-কাণ্ডে জমা পড়ল না চার্জশিট

দেড় মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও পঞ্চসায়র-কাণ্ডের চার্জশিট এখনও আদালতে জমা দিতে পারেনি লালবাজার।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৩৩
Share: Save:

সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা। ওষুধ খেয়ে নিয়ম করে হাঁটা। বাড়ির লোক চাইলে টেলিফোনে কথা।

পঞ্চসায়রে গণধর্ষণের অভিযোগকারিণীর গত নভেম্বর থেকে এটাই জীবন। তেমনই জানাচ্ছেন লুম্বিনী পার্ক সরকারি মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে বর্ষশেষের ঠিক আগের দিন হাসপাতাল থেকেই ফোনে মহিলা জানালেন, ধর্ষণ, পুলিশি তদন্ত, চার্জশিট নিয়ে এখন তেমন কোনও তাপ-উত্তাপ নেই তাঁর। শুধু বললেন, ‘‘আর কী হবে? দিদিকে দয়া করে বলবেন, নতুন বছরে যেন অন্তত আমাকে বাড়ি নিয়ে যায়!’’

একের পর এক গণধর্ষণের ঘটনায় নভেম্বর মাস থেকেই উত্তাল ছিল দেশ। প্রথমে হায়দরাবাদের কাছে তরুণী চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে খুন এবং পরে উন্নাওয়ে আদালতে যাওয়ার পথে অভিযুক্তদের হামলায় নিগৃহীতার পুড়ে মারা যাওয়া— জনমানসে সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় এই দুই ঘটনা ঘিরে। এরই মধ্যে কলকাতায় সবচেয়ে বেশি শোরগোল ফেলে গত ১১ নভেম্বর রাতে পঞ্চসায়র থেকে এক মহিলাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ। যে হোমে মহিলাকে রেখেছিল পরিবার, সেটির পাশাপাশি শহরের অন্য হোমগুলির চরম অব্যবস্থার চিত্রও সেই সময়ে সামনে আসে।

তবে দেড় মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও পঞ্চসায়র-কাণ্ডের চার্জশিট এখনও আদালতে জমা দিতে পারেনি লালবাজার। যদিও ডিসেম্বরের শুরুতেই গণধর্ষণ নিয়ে দেশজোড়া উত্তপ্ত আবহের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘এমন কোনও অভিযোগ পেলেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে তিন থেকে ১০ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ করতে হবে। পুলিশকে পুলিশের কাজ করতে হবে। যিনি করবেন না, তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

তদন্তে জানা গিয়েছিল, কলকাতা থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা জায়গায় ঘুরে চলন্ত গাড়িতে ওই মহিলাকে দফায় দফায় ধর্ষণ করা হয়। এর পরে ছেঁড়া পোশাকে তাঁকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয় বলে পুলিশকে জানান অভিযোগকারিণী। ঘটনায় গ্রেফতার হয় এক নাবালক-সহ দু’জন। এর মধ্যেই গত ১৪ নভেম্বর রাতে হঠাৎ মৃত্যু হয় নিগৃহীতার বৃদ্ধা মায়ের। যে হোম থেকে মহিলা রাতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানেই থাকতেন ওই বৃদ্ধা। হোমের তরফে দাবি করা হয়েছিল, মেয়ের ঘটনা শুনে শয্যাশায়ী বৃদ্ধা ওই শোক সহ্য করতে পারেননি।

লালবাজার যদিও দাবি করেছে, গণধর্ষণের তদন্ত প্রায় শেষ। গাফিলতির প্রশ্ন নেই। গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তার কথায়, ‘‘ধরা পড়া দু’জনের মধ্যে এক জন নাবালক। তাকে সাবালক হিসেবে বিবেচনা করে বিচার করার জন্য জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে যে আবেদন করা হয়েছে, তার রায় এখনও আসেনি। ওই রায়ের উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে। যদি তাকে সাবালক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তা হলে চার্জশিটেই হয়ে যাবে। তা না হলে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পৃথক রিপোর্ট দিয়ে আদালতে চার্জশিট দিতে হবে। তবে ১৭ বছর আট মাস বয়সী ওই নাবালকের সব ভাবনা-চিন্তা যে সাবালকের মতোই, ডাক্তারি পরীক্ষার পরে সেই রিপোর্ট আমরা দিয়েছি।’’ লালবাজারের আশ্বাস, নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই চার্জশিট দিয়ে দেওয়া হবে।

নির্যাতিতার দিদি অবশ্য পুলিশি ভূমিকায় প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘বছর ফুরিয়ে গেল, পুলিশ এখনও চার্জশিট দিতে পারল না?’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘এই বছরটা সারা জীবন মনে থাকবে। বোনের সঙ্গে এমন হল। মা-ও হঠাৎ করে মারা গেলেন। পাওয়ার চেয়ে এ বছর না-পাওয়াই বেশি।’’

যেমন হাজার আবেদন করেও মায়ের শেষকৃত্যে থাকার অনুমতি পাননি গণধর্ষণের অভিযোগকারিণী। তাঁকে ছাড়তে চায়নি মানসিক হাসপাতাল। দিদিও বোনকে নিয়ে আসার কথা বলেননি। মনোরোগ চিকিৎসক থেকে আইনজীবীদের একটা বড় অংশ তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন, অপরাধীরাও যে সুযোগ পেয়ে থাকে, অপরাধের শিকার হয়ে এই মহিলা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন কেন?

ফোন রাখার আগে মহিলা ফের বললেন, ‘‘মা তো নেই। আমাকে নিয়ে যেতেও ওদের এত সমস্যা?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lalbazar Kolkata Police Crime Gang Rape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE