—ফাইল চিত্র।
‘বৃষ্টি শুরু হল। হঠাৎ পলাশ নিজের মাথার হেলমেট খুলে মৌটুসির দিকে বাড়িয়ে দিল। বলল, এটা মাথায় পরে নাও। মৌটুসি খানিকটা অবাক হয়ে বলল, কেন? ওটা তুমি পরে থাক। পুলিশ আছে সামনে। আমাকে মহিলা বলে ছেড়ে দিতে পারে। তোমাকে কোনও ভাবেই ছাড়বে না।’
‘আরে বাবা, বৃষ্টি পড়ছে দেখছ না! বৃষ্টিতে পুলিশ ধরে না। আরে, ওরা বোঝে সবটা। আমি বলছিলাম যে, তোমার মাথা ভিজলে এই একমাথা চুল রাতে আর শুকোবে না। ঠান্ডা লাগবে। নাও পরে নাও।’
সিনেমার সংলাপ নয়, উপরের অংশটি একটি ছোটগল্পের অংশ। যে গল্প লিখেছেন কলকাতা পুলিশের এক সার্জেন্ট। এবং সেই গল্পের আপাতনিরীহ এই সংলাপ নিয়েই দানা বেঁধেছে বিতর্ক।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মোটরবাইকের চালক ও আরোহী, দু’জনের মাথাতেই যাতে হেলমেট থাকে, তার জন্য বছরভর প্রচার চালায় পুলিশ। সেই কারণেই ‘কলকাতা পুলিশ সার্জেন্টস ইনস্টিটিউট’-এর পারিবারিক পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যায় এক সার্জেন্টের লেখা ওই গল্পটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। ‘হেলমেট’ শীর্ষক ওই গল্পে লেখক তাঁর লেখা যেখানে শেষ করছেন, সেখানে ‘টিপটিপ’ বৃষ্টিতে হেলমেট ছাড়াই চালক মোটরবাইক চালিয়ে যাচ্ছেন।
ওই পত্রিকার সাম্প্রতিক উৎসব সংখ্যায় আটটি ছোটগল্প লিখেছেন লালবাজারে কর্মরত সার্জেন্ট সায়ন্তন মিত্র। তারই মধ্যে একটির নাম ‘হেলমেট’। গল্পের শুরুতে সদ্য বিবাহিত এক তরুণের মাথায় হেলমেট থাকলেও সঙ্গে থাকা স্ত্রীর মাথায় ছিল না। বৃষ্টি শুরু হওয়ায় স্বামী তাঁর হেলমেটটি স্ত্রীকে পরতে বলেন। শেষমেশ টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে হেলমেট ছাড়াই চালক মোটরবাইক চালাতে থাকেন।
পুলিশের পারিবারিক পত্রিকায় সার্জেন্টের লেখা এই গল্প পড়ে কিছুটা দ্বিধান্বিত প্রাক্তন আইপিএস তথা লেখক নজরুল ইসলাম। নজরুলের কথায়, ‘‘লেখকের স্বাধীনতা থাকাটা জরুরি। কিন্তু পুলিশের পারিবারিক পত্রিকায় এমন বার্তাই দেওয়া উচিত, যাতে দেশের আইন সকলে মেনে চলেন। আইনকে অবজ্ঞা করার উৎসাহ দেওয়াটা কাম্য নয়।’’ পূর্ব রেলের প্রাক্তন মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘এমনিতেই তরুণ সম্প্রদায় মোটরবাইক চালানোর সময়ে হেলমেট পরায় অনীহা দেখায়। পুলিশের পারিবারিক পত্রিকায় সার্জেন্টের লেখা ওই গল্প পড়ে যুবকেরা উৎসাহিত হলে কিন্তু বিপদ।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বৃষ্টির মধ্যে মোটরবাইক চালানোটা বেশ ঝুঁকির। সেই সময়ে চালক ও সঙ্গী, উভয়ের মাথাতেই হেলমেট থাকাটা জরুরি। এ ক্ষেত্রে লেখক কোনও দোকানে গিয়ে হেলমেট কিনে তাঁর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর মাথায় পরিয়ে দিলে নতুন রকমের ‘সপ্তপদী’র সৃষ্টি হত।’’
যদিও বাস্তবের সঙ্গে গল্পকে গুলিয়ে ফেলতে নারাজ লেখক স্মরণজিৎ চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘বাস্তবের রিয়্যালিটির সঙ্গে গল্পের রিয়্যালিটিকে সব সময়ে এক করা ঠিক নয়। গল্পের নিজস্ব একটা রিয়্যালিটি থাকে। এ ক্ষেত্রে ‘আর্ট ফর আর্টস সেক’-এর তত্ত্বকেই প্রতিষ্ঠা দেওয়া দরকার।’’ তাঁর আরও পর্যবেক্ষণ, ‘‘গল্পে মোটরবাইক চালকের মাথায় হেলমেট থাকল কি না, সেটা বড় কথা নয়। এ ক্ষেত্রে স্বামী কতটা বড় মাপের প্রেমিক, সেটাও ভাবা দরকার। প্রেমের জন্য মানুষ কত কিছুই না করে!’’
বিতর্কে জড়ানো ওই সার্জেন্ট-লেখক সায়ন্তন মিত্র অবশ্য বলছেন, ‘‘লেখার সময়ে অত কিছু ভেবে লিখিনি। লেখকেরা সব সময়ে অত ভেবে লেখেনও না। আমি এমন কিছু লিখিনি, যাতে পুলিশের দুর্নাম হতে পারে।’’ লেখকের স্বাধীনতা জরুরি হলেও ওই গল্পটি লেখার ক্ষেত্রে সায়ন্তনের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন ওই পত্রিকার সম্পাদক তথা পুলিশ আধিকারিক শোভেন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘নিঃসন্দেহে এই ধরনের বিষয় নিয়ে লেখার সময়ে লেখকের আরও সচেতন হওয়া দরকার। ভবিষ্যতে এই ধরনের লেখা প্রকাশ করার আগে সতর্ক থাকা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy