Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা: সার্ধশতবর্ষে মহেন্দ্রনাথ

বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে তাঁর বইয়ের সংখ্যা প্রায় আশি। তাঁর প্রণীত গ্রন্থের মতো বিষয়-বৈচিত্র খুব কম লেখকেরই। অথচ এই মহেন্দ্রনাথ দত্তকে (১৮৬৯-১৯৫৬) আমরা শুধু মনে রেখেছি বিবেকানন্দের মধ্যম ভ্রাতা হিসেবে।

মহেন্দ্রনাথ দত্ত।

মহেন্দ্রনাথ দত্ত।

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

তিনি যেন এক বহুরূপী। কখনও ভূপর্যটক, কখনও শিল্প-সংস্কৃতির তত্ত্বজ্ঞানী, কখনও সমাজবিজ্ঞানী, আবার কখনও ধারণা হয় তিনি ঈশ্বরে সমর্পিত এক পবিত্র প্রাণ। ১৪ অগস্ট ১৯০০, স্বামী বিবেকানন্দ প্যারিস থেকে তাঁর সম্পর্কে লিখেছিলেন, “আই অ্যাম কোয়ায়েট প্রাউড অব হিম নাউ।” নন্দলাল বসুর স্মৃতিচারণ: “তাঁর সংগে আলাপ করলে শিল্পবিষয়ে জ্ঞান খুলে যায়, আর অনেক মৌলিক তত্ত্বের সন্ধান পাওয়া যায়।” তাঁর প্যালেস্টাইন ভ্রমণ ও ইহুদী জাতির ইতিহাস বইটির মূল্যায়নে আনন্দবাজার পত্রিকা-য় মন্তব্য “তিনি ফা-হিয়েন, ইবনবতুতা প্রভৃতি ঐতিহাসিক ভ্রমণকারীদের সগোত্র।” স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী অথবা রামকৃষ্ণ ভাবান্দোলনের আদি পর্বের ইতিহাস, তাঁর আকর গ্রন্থগুলি ছাড়া অসম্পূর্ণ। বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে তাঁর বইয়ের সংখ্যা প্রায় আশি। তাঁর প্রণীত গ্রন্থের মতো বিষয়-বৈচিত্র খুব কম লেখকেরই। অথচ এই মহেন্দ্রনাথ দত্তকে (১৮৬৯-১৯৫৬) আমরা শুধু মনে রেখেছি বিবেকানন্দের মধ্যম ভ্রাতা হিসেবে। ভুলে গিয়েছি ১৮৯৭-১৯০২ সালে নিঃসঙ্গ এবং প্রায় নিঃসম্বল অবস্থায় ইউরোপ-আফ্রিকা-এশিয়া মহাদেশের নানা স্থানে তাঁর ভ্রমণের কথা। মনে রাখিনি সর্বজনীন দুর্গোৎসবে সিমলা ব্যায়াম সমিতির একচালা প্রতিমার সৌন্দর্যময় পরিকল্পনা তাঁরই। তাঁর জন্মসার্ধশতবর্ষে প্রকাশনা সংস্থা সূত্রধর বিবিধ পরিকল্পনা নিয়েছে। সূচনা মহেন্দ্রনাথের ১৫০তম জন্মদিন ১ অগস্ট বিকেল ৫টায় কাশীপুর উদ্যানবাটীতে, স্বামী স্মরণানন্দ প্রকাশ করবেন দেবাঞ্জন সেনগুপ্ত প্রণীত জীবনীগ্রন্থ মহান ইন্দ্র তুমি মহেন্দ্র, নরেন্দ্র সহোদর। সূত্রধর মহেন্দ্রনাথের দু’টি মূল্যবান বই এই বছর নবরূপে প্রকাশ করবে: স্বামী চন্দ্রকান্তানন্দের সম্পাদনায় শ্রীরামকৃষ্ণ-পার্ষদ অনুধ্যান এবং দেবাশিস বসুর ভূমিকা-সহ কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা। স্বামীজির বাড়ির অনতিদূরে কলকাতা পুরসভার সহযোগিতায়, সূত্রধরের উদ্যোগে বসবে জি পাল অ্যান্ড সন্স দ্বারা নির্মিত মহেন্দ্রনাথের এক রিলিফ মূর্তি। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় স্তরের এক আলোচনাসভা। বিষয়— ‘ইতিহাসের স্মার্ত উপাদান: মহেন্দ্রনাথ স্মরণে’।

গিরীন চক্রবর্তী

নাও ছাড়িয়া দে পাল উড়াইয়া দে/ ছল ছলাইয়া চলুক রে নাও মাঝ দইরা দিয়া...।— জনপ্রিয় এই লোকসঙ্গীতই তাঁর জাত চিনিয়ে দেয়। উস্তাদ আলাউদ্দিন খান ও উস্তাদ আফতাবউদ্দিন খান সাহেবের সুযোগ্য শিষ্য গিরীন চক্রবর্তী (১৯১৮-৬৫) কাজী নজরুল ইসলামের অত্যন্ত স্নেহের সহকারী ছিলেন। কবি নিজের অনেক গান তাঁকে দিয়ে সুর করিয়েছিলেন। তাঁর উদ্যোগে আকাশবাণীতে ‘পল্লিগীতি’ বিভাগটি চালু হয়। তাঁর উৎসাহেই শচীনদেব বর্মন লোকসঙ্গীতে অনুরক্ত হন। এমনকি মহম্মদ রফিও কলকাতায় এসে গিরীনের কাছে পল্লিগীতির শিক্ষা নিয়ে তামিল ও হিন্দি ছবিতে গান গেয়েছেন। অনেক শিল্পীই তাঁর তালিমে, কথা ও সুরে গান রেকর্ড করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ২৪ জুলাই শিশির মঞ্চে সন্ধে সাড়ে ৫টায় ‘শতবর্ষে গিরীন চক্রবর্তী’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কথায় ও গানে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন অমর পাল, পূর্ণদাস বাউল, রামানুজ দাসগুপ্ত প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠান-পরিকল্পনা: তপন রায় ও চন্দা চক্রবর্তী।

প্রত্ন-গবেষক

আদিগঙ্গার একটি শাখা মনি নদী। ‘‘চার দশক ধরে মনি নদীর উভয়কূল অনুসরণ করে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, পথ ছেড়ে প্রান্তরে, প্রান্তরশেষে শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্যচ্ছায়ে বা নির্জন নদীতটের চোরাবালির সতর্ক পদক্ষেপে দীর্ঘপথ পরিক্রম করে গ্রন্থকার এ অঞ্চলের ধূসর অতীতের জনপদ ও জনজীবনের প্রত্নসাক্ষ্য সংগ্রহ করেছেন।’’ সুন্দরবনের মনি অববাহিকা বইয়ে ‘গ্রন্থকারের নিবেদন’-এ লিখেছিলেন নির্মলেন্দু মুখোপাধ্যায়। এমন অনুসন্ধানেরই ফসল আদিগঙ্গা প্রত্ন-পরিক্রমা ও আরও কয়েকটি বই এবং ইংরেজি ও বাংলায় শতাধিক নিবন্ধ। ১৯৩৩-এ ঢাকায় জন্ম, প্রেসিডেন্সিতে পড়াশোনা। হেরম্বচন্দ্র কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপনা, পরে অধ্যক্ষতা। বঙ্গীয় পুরাতত্ত্ব পরিষৎ-এর সম্পাদক ও পরে সভাপতি হন। প্রত্ন-গবেষক মানুষটি চলে গেলেন সদ্য। ২৯ জুলাই বিকেল ৫টায় অশ্বিনী দত্ত রোডে শরৎচন্দ্রের বাসভবনে পরিবারের উদ্যোগে তাঁর স্মরণসভা।

ভাস্কর-স্মরণ

‘‘চলে যেতে হয় ব’লে চলে যাচ্ছি, নাহলে তো, আরেকটু থাকতাম।’’ এমনই লিখেছিলেন সত্তর দশকের কবি ভাস্কর চক্রবর্তী। কবিতা ও কবিজীবনকে ফেলে রেখে অকস্মাৎ চলে গিয়েছিলেন তিনি। এ বারে কবিজায়া বাসবী চক্রবর্তীর উদ্যোগে ও পরিচালনায় ত্রয়োদশ ভাস্কর চক্রবর্তী স্মরণ সন্ধ্যা জীবনানন্দ সভাঘরে। আজ সন্ধে ৬টার এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শঙ্খ ঘোষ। স্মারক বক্তৃতায় ‘জিরাফের ভাষা: মঞ্চের ভাষা’ বিষয়ে বলবেন শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। প্রকাশিত হবে কবিকে নিয়ে প্রশান্ত মাজীর গদ্যগ্রন্থ ‘ভাস্কর গাছের ছায়া’ (ঋক প্রকাশনী) এবং দুই তরুণ কবি পৃথ্বী বসু ও ঋক অমৃত-র প্রথম কাব্যগ্রন্থ (ভালো বই)। আছে গান ও কবিতাপাঠ। আয়োজনে প্রতিবিম্ব ও দশমিক পত্রিকা।

উজ্জ্বল স্মৃতি

‘সেদিন দু’জনে’— রবীন্দ্রনাথের গান গাইছেন সুবীর সেন, স্বনামে, স্বমহিমায়— বাসু ভট্টাচার্যের ছবি ‘অনুভব’-এ (১৯৭১)। সেখানে তিনি নিজেই নিজের চরিত্রে, একটি দৃশ্যের অতিথি সমাগমে সঞ্জীবকুমার তাঁকে এক জন গুণী শিল্পী হিসাবে আলাপ করিয়ে দিচ্ছেন সকলের সঙ্গে। এমন উজ্জ্বল স্মৃতি আজ বিস্মৃত হয়েছে বাঙালি! ১৯৫৬-য় প্রথম রেকর্ড করা বাংলা গান ‘ওই উজ্জ্বল দিন’ গেয়ে অসম্ভব জনপ্রিয় হন সুবীর সেন। তাঁর প্রথম হিন্দি গানও সাংঘাতিক হিট, ‘কাঠপুতলি’ ছবিতে বলরাজ সাহনি-র লিপে, শঙ্কর জয়কিষেণের সুরে ‘মঞ্জিল ওয়োই হ্যায়...’। এ সব কথা মনে আছে বয়স্কদের, আর আছে সুবীর সেনের আত্মজীবনী এত সুর আর এত গান বইতে। তিন বছর হয়ে গেল সুবীরবাবু প্রয়াত, তাঁর স্মৃতিতে তৈরি হয়েছে ‘সুবীর সেন ফাউন্ডেশন’। তাদেরই প্রয়াসে ২৪ জুলাই তাঁর ৮৪তম জন্মদিনে সন্ধে ৬টায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুণা সেন প্রেক্ষাগৃহে ‘এত সুর আর এত গান’ অনুষ্ঠানে তাঁকে নিয়ে বলবেন শঙ্করলাল ভট্টাচার্য-সহ অনেকে, এবং সঙ্গীত পরিবেশন করবেন।

কান্তকবি

মাত্র ৪৫ বছরের জীবনেই খ্যাতকীর্তি রজনীকান্ত সেন, সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল ‘কান্তকবি’র রচনা। তাঁর গানের সুর গলায় তুলে নেন মেয়ে শান্তিবালা (পরে শান্তিলতা রায়), সেই পরম্পরাই বহমান গায়ক-কবির দৌহিত্র দিলীপকুমার রায়ের মধ্য দিয়ে। একশো পেরোনো দিলীপবাবু আজও তাঁর ‘দাদু’র কথায় উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠেন। পান্নালাল ভট্টাচার্যের কণ্ঠে ‘আমি মন্ত্রতন্ত্র কিছুই জানিনে মা’, ‘আমি সব ছেড়ে মা’-এর মতো জনপ্রিয় গানের গীতিকার-সুরকার দিলীপবাবুই। ২৬ জুলাই রজনীকান্তের জন্মদিনে মধুরা শিল্পীগোষ্ঠীর নিবেদন ‘কাব্যে সুরে পাঁচ স্রষ্টা’, দ্বিজেন্দ্রলাল-রজনীকান্ত-অতুলপ্রসাদ ও দ্বিজেন্দ্রপুত্র দিলীপকুমারের গানের সঙ্গে থাকবে রজনীকান্তের দৌহিত্র দিলীপকুমার রায়ের গানও। নলিনীরঞ্জন পণ্ডিতের কান্তকবি রজনীকান্ত বইটি নতুন করে প্রকাশ করছে পরম্পরা প্রকাশন, তারও উদ্বোধন সে দিন। বিড়লা অ্যাকাডেমিতে, সন্ধে ছ’টায়।

আলাদিনের গল্প

আলাদিনের গল্প বটে, তবে ধাঁচটা নতুন। সেখানে ইন্টারভিউ নিয়ে মন্ত্রীকে নিয়োগ করেন নবাব, যুদ্ধ না করে রাজ্যে-রাজ্যে মীমাংসার পথ বাতলায় আলাদিন। লোভী চাচা শেষে পরাস্ত হয়। হাসি-মজায় ভরা, হাতি-ঘোড়া-উটের পাপেট দিয়ে মঞ্চ মাতিয়ে দেওয়া নাটক। কিন্তু যুদ্ধবাজ নেতা আর ধান্দাবাজ অস্ত্রবণিকদের ষড়যন্ত্র দেখিয়ে গভীর চিন্তারও খোরাক জোগায়। নাটক রচনা, নির্দেশনা, অভিনয়, মঞ্চ, পোশাক পরিকল্পনা, সবই করছেন রবীন্দ্রভারতীর শিক্ষক আর ছাত্রছাত্রীরা। ‘রবীন্দ্রভারতী রেপার্টয়্যার’-এর এই প্রযোজনাটি ২৫ জুলাই দেখা যাবে রবীন্দ্রসদনে।

বাঘ দিবস

বাঘ বাঁচানোর আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার থেকে ২০১০ সালে জন্ম নিয়েছিল আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস। জনমনে বাঘ সংরক্ষণের চেতনা জাগানোর উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ২৯ জুলাই দিনটি চিহ্নিত হয়েছে। বন্যপ্রাণ বিষয়ক পত্রিকা ‘এখন আরণ্যক’ ২৮-৩১ জুলাই গগনেন্দ্র শিল্প প্রদর্শশালায় আয়োজন করেছে আলোকচিত্রে বাঘ-চরিত, প্রায় আশি জন আলোকচিত্রীর তোলা একটি প্রতিযোগিতামূলক ছবির প্রদর্শনী। সঙ্গে থাকবে চার বার ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত বন্যপ্রাণ চলচ্চিত্রনির্মাতা এস নাল্লামুথ্যুর তোলা ছবি (নন্দন-২, ৩০ জুলাই, ৫:৩০) ‘দি ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ফেমাস টাইগার: মছলি’। সব্যসাচী চক্রবর্তী প্রদর্শনীটির সূচনা করবেন। সঙ্গে তারই একটি ছবি।

উন্নয়ন না মৃগয়া

কর্পোরেট পুঁজি কী ভাবে দখল করে নিতে চায় মানুষের বসতি আর আবাদ, না খুঁজতেই তার হাজার উদাহরণ ভেসে আসবে চোখের সামনে। রাষ্ট্র কার পাশে এসে দাঁড়ায়, সন্দেহের অবকাশ থাকবে না তা নিয়েও। উন্নয়ন। কৃষি থেকে শিল্প, গ্রাম থেকে শহরের একমাত্রিক অভিযাত্রার ভাঁজে ভাঁজে থেকে যায় হরেক ক্ষমতার গল্প। সিঙ্গুর থেকে তুতিকোরিন, চরিত্র পাল্টায়, স্থান-কালও, শুধু গল্প অবিকল। ২৬ জুলাই বিকেল ৫টায় ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে পঞ্চম অভী দত্ত মজুমদার স্মারক বক্তৃতার বিষয় ‘উন্নয়ন না মৃগয়া: কর্পোরেট ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিরোধ’। বক্তা অসীম শ্রীবাস্তব ও জিগ্নেশ মেবাণী। আয়োজক একচেটিয়া আগ্রাসন বিরোধী মঞ্চ (ফামা)।

গল্পের আসর

বর্ষার সন্ধেয় গল্পের আসর জমে ভাল। এ বার ক্যালকাটা কারাভান-এর তৃতীয় বৈঠক ২৮ জুলাই বিকেল ৫টায় আইসিসিআর-এ, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্যালারিতে। বিষয় ‘পুরনো কলকাতার গল্পের অলিগলি’। এক প্রজন্ম বুড়ো হয় আর নতুনদের শোনায় এই শহরের বর্ণিল কথা। তাই বুড়ি কলকাতা আর বুড়ি হল না কোনও দিন। সেই জমকালো গল্পগুলি নিয়ে এই অনবদ্য হেরিটেজ বৈঠকে থাকছে দাস্তানগোই ‘নকশিকাঁথা কলকাতা’, গান বাজনা সমেত। থাকবেন অভ্র ঘোষ, সুপর্ণা দেব, শাহানশাহ মির্জা, ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

খুদ্দুর যাত্রা

১৯৩৬। ঘনিয়ে আসছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছায়া। এরই মধ্যে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ করলেন ‘খুদ্দুর যাত্রা বা খুদি রামলীলা’, যাত্রার ঢঙে লেখা রামায়ণ মহাকাব্য। লেখা মানে সে এক আশ্চর্য পাণ্ডুলিপি— সমসাময়িক খবরের কাগজ, পাঁজি, বইপত্রিকা থেকে লেখা-ছবি কেটে সেঁটে সাজানো, কোনও ভারতীয় শিল্পীর প্রথম কোলাজ। কয়েক বছর আগে সবে প্রকাশ পেল এর প্রতিলিপি সংস্করণ (প্রতিক্ষণ), আর এর নির্মাণপ্রক্রিয়ায় ইতিমধ্যেই আলোকপাত করেছেন দেবদত্ত গুপ্ত। এ বার ২৬ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের নতুন গ্রন্থাগার ভবনের সম্মেলন কক্ষে এটিকে কেন্দ্র করেই ‘ইন্টারওয়ার অবনীন্দ্রনাথ’ শীর্ষকে বলবেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া, বার্কলে-র আত্রেয়ী গুপ্ত। সভামুখ্য তপতী গুহঠাকুরতা।

সুবর্ণ মেঘনাদ

তিনি কাজ শুরু করেছিলেন ১৯৬৮-তে। সন্ধিক্ষণ নাট্যগোষ্ঠীতে, গৌর ভদ্রের নির্দেশনায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ‘বিজয়ের অপেক্ষায়’ নাটকে। এ বছর অভিনয়জীবনের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করলেন মেঘনাদ ভট্টাচার্য। অভিনয়ের পাশাপাশি ১৯৭৮ থেকে তিনি সায়ক নাট্যগোষ্ঠীর নির্দেশকও। অতএব তাঁর নির্দেশনারও চল্লিশ বছর পূর্তি। দুই হুজুরের গপ্‌পো, সোনার মাথাওয়ালা মানুষ, জ্ঞানবৃক্ষের ফল, যদিও স্বপ্ন, দায়বদ্ধ, বাসভূমি, কর্ণাবতী, অ-আ-ক-খ, সাঁঝবেলা, পিঙ্কিবুলি, ধ্রুবতারা, দামিনী-হে... এ রকম আরও কত নাটক তাঁর অভিনয়ে আর নির্দেশনায় পৌঁছে গিয়েছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। একই সঙ্গে আবার সায়ক-এর নানাবিধ কাজে, যেমন নাট্যপত্র প্রকাশ, নাট্যবক্তৃতামালা, নেপথ্যশিল্পী ও শিল্পমাধ্যমের বিশিষ্টদের সম্মাননা, পূর্ণাঙ্গ নাটকের উৎসব, ছোটদের নাট্যপ্রশিক্ষণ, এবং বিজন থিয়েটার পরিচালনায় নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন বরাবর। এমন কর্মময় মানুষটির শিল্পীজীবন নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে সায়ক নাট্যপত্র-এর বিশেষ সংখ্যা: ‘সুবর্ণ মেঘনাদ’ (সম্পা: ইন্দ্রজিতা চক্রবর্তী)। নাট্যজগতের গুণিজনেরা তাঁর শিল্পীসত্তার বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখেছেন এ পত্রে। শুরুতে ‘শুভেচ্ছা’ জানিয়েছেন শঙ্খ ঘোষ, মেঘনাদ-নির্দেশিত মলিয়েরের বঙ্গরূপায়ণ ‘প্রেমকথা’ দেখতে গিয়েছিলেন তিনি তাঁর সতেরো বছরের নাতনিকে নিয়ে, লিখেছেন ‘‘সমান উচ্ছ্বাস নিয়েই আমরা দুজনে উপভোগ করেছিলাম সে-নাটক... বুঝতে পেরেছিলাম, সব বয়সের দর্শকমনকে একসঙ্গে অধিকার করে নেবার একটা অনায়াস ক্ষমতা আছে এই শিল্পীর।’’ এ প্রসঙ্গে মেঘনাদের মন্তব্যটি অমোঘ: ‘‘আমি দর্শকের আসনে বসে নাটকটা তৈরি করি, আর নিজেকে সব সময় আর পাঁচজনের মতোই সাধারণ মানুষ মনে করি, সকলের সঙ্গেই সমান ভাবে মেলামেশা করি। ফলে সব বয়সের সব ধরনের দর্শক-সংযোগে আমার কোনও দিন অসুবিধা হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE