Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা: বাংলা থেকে বিশ্বজনীন

জন্ম ১৯৩৩ সালে প্যারিসে। সিয়াঁস পো থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন ১৯৫৪ সালে। শিক্ষা করেন চিনা ভাষা ও হিন্দি, এবং পরে সংস্কৃত।

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

প্যারিসের র‌্যু ল্যকুর্বের ছোট্ট ফ্ল্যাটে অসংখ্য বইয়ের মাঝে বসে মাথা নিচু করে কাজ করছেন প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ফ্রাঁস ভট্টাচার্য। বহির্বিশ্বে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান উপস্থাপক তিনি। এখন ফরাসিতে অনুবাদ করছেন কাশীরাম দাসের মহাভারত। চলছে হেমন্তবালা দেবীকে নিয়ে গবেষণা। দীর্ঘ দিনের পরিশ্রমে শেষ করেছেন ‘অন্নদামঙ্গল’-এর ইংরেজি অনুবাদ। প্রথম খণ্ড প্রকাশ করেছে মূর্তি ক্লাসিক্যাল লাইব্রেরি। দ্বিতীয় খণ্ডের কাজও শেষ। ‘পথের পাঁচালী’-র ফরাসি অনুবাদ যে সম্ভব গালিমার প্রকাশিত অনুবাদ না পড়লে বিশ্বাস হবে না। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’, ‘আনন্দমঠ’, রবীন্দ্রনাথের ‘যোগাযোগ’, ‘নষ্টনীড়’ ছাড়াও তারাশঙ্কর, লোকনাথ ভট্টাচার্য ও সত্যজিৎ রায়ের রচনা অনুবাদ করেছেন। ‘এক্ষণ’ পত্রিকায় অনেকেই পড়েছেন ‘ঠাকুরমার ঝুলি’-র স্ট্রাকচারালিস্ট বিশ্লেষণ। প্রধানত প্রাক্-আধুনিক সাহিত্যে উৎসাহী মানুষটি বিপ্রদাসের ‘মনসাবিজয়’ সটীক অনুবাদ করেন ফরাসিতে, রূপরামের ‘ধর্মমঙ্গল’ নিয়ে কাজ করেছেন। ২০১০ সালে বিশ্ববিখ্যাত কলেজ দ্য ফ্রাঁস এবং অ্যাঁস্তিত্যু দেত্যুদ জ্যাঁদিয়েন প্রকাশ করেছে রামমোহন, ভূদেব এবং বঙ্কিমচন্দ্র সম্পর্কে তাঁর বই ‘বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ’।

জন্ম ১৯৩৩ সালে প্যারিসে। সিয়াঁস পো থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন ১৯৫৪ সালে। শিক্ষা করেন চিনা ভাষা ও হিন্দি, এবং পরে সংস্কৃত। এক কালে স্প্যানিশ বলতেন। তার পর ১৯৫৪ সালে এ দেশে এসে কবি ও ঔপন্যাসিক লোকনাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিয়ে। ভারতে বাস করেন ২২ বছর। অধ্যাপনা করেন পুদুচেরি, কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাদলেন বিয়ারদো-র তত্ত্বাবধানে পিএইচ ডি’র বিষয় ছিল ‘আ স্ট্রাকচারাল অ্যানালিসিস অব বেঙ্গলি ফোক টেলস’। ১৯৭৮ সালে ফ্রান্সে ফিরে যোগ দেন বিশ্ববিশ্রুত ‘ইনালকো’ (প্রাচ্য ভাষা ও সভ্যতা প্রতিষ্ঠান)-তে। পরে সেই প্রতিষ্ঠানের সহ-সভাপতি। ১৯৯০ সালে সরবন নুভেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনসা ও চণ্ডীমঙ্গলের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করে ডি লিট ডিগ্রি। অবসর গ্রহণের পর কয়েক বছর এশিয়া বিষয়ক গবেষণা আধিকারিকের দায়িত্ব পালন করেন ‘মেজ়ঁ দে সিয়াঁস দে লম’-এ। সম্প্রতি কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশ করল তাঁর বই ‘পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’। বিশিষ্ট প্রকাশক জ্যুলমা বার করতে চলেছে ‘আরণ্যক’-এর ফরাসি অনুবাদ।

এ-হেন নিঃস্বার্থ বাংলাভাষাসেবী ব্যক্তিত্বকে কী দিয়েছে বাঙালি? ২০১২-য় রবীন্দ্রভারতী তাঁকে সাম্মানিক ডি লিট দেয়, এই মাত্র। সঙ্গে বাঁ দিকে ফ্রাঁস ভট্টাচার্য, রবীন্দ্রভারতীর ডি লিট প্রদান অনুষ্ঠানে। ডান দিকে উপরে মনসাবিজয় ও চারুলতা, নীচে চার অধ্যায় ও বিদ্যাসাগর-জীবনী।

ষাটেও অমলিন

তুতু-ভূতু। ওদের নাকি ষাট বছর বয়েস হল। দুর, তাই আবার হয় নাকি? তুতু-ভূতুর কখনও বয়েস বাড়ে? শিল্পী ধীরেন বলের ছবি-লেখার অবিস্মরণীয় যুগলবন্দির নানা সৃষ্টির মধ্যে তুতু-ভূতু দুই প্রজন্ম পেরিয়ে একই রকম উজ্জ্বল। আজও ‘চণ্ডীচরণ দাস এন্ড কোং’ থেকে ছাপা হলেই বিকিয়ে যায় একই রকম দ্রুততায়। তুতু কুকুরছানা, আর ভূতু বেড়ালছানা। কে বলবে, জামাপ্যান্ট পরে তারা আর তাদের বন্ধুরা, শাড়িধুতি পরা বাবা-মায়েরা আমাদেরই পড়শি নয়? ভূতু মাছ ধরতে যায়, তুতুর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়, মাছ রান্না করেন ভূতুর মা, সে এক দারুণ ফিস্টি ভূতুদের বাড়ি। এ গল্প আর ছবি পুরনো হওয়ার নয়। শিল্পীকন্যা পৃথা বলের পরিকল্পনায় শিশুসাহিত্য-পরিষদ আয়োজন করেছে রচনার ষাট বছর পূর্তি অনুষ্ঠান, ২৩ নভেম্বর বিকেল ৫টায় জীবনানন্দ সভাঘরে। প্রবীণ পাঠকরা জানাবেন তাঁদের অনুভূতি। সভাপতি অভিরূপ সরকার। সব শেষে সুস্মেলীর নির্দেশনায় ছোটরা শ্রুতিনাটক করবে ‘তুতু-ভূতু’।

কবিতা-উৎসব

শহরে যখন শীত একটু একটু করে থিতু হবে, তখন দেশ-বিদেশ থেকে উড়ে আসবে কবিতাও। ২২-২৪ নভেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় বর্ষের ‘চেয়ার পোয়েট্রি ইভনিংস ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল’, আয়োজনে ‘চেয়ার লিটারারি ট্রাস্ট’। ভারতের কৌশিকী দাশগুপ্ত, অংশুমান কর, যশোধরা রায়চৌধুরী, আশুতোষ দুবে, হেমন্ত দিভাতে-র সঙ্গে থাকবেন আমেরিকার ব্রায়ান টার্নার, অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্টনি লরেন্স, চিলির জিসাস সেপুলভেদা, নেদারল্যান্ডসের এলমার কুইপার, পর্তুগালের সারা এফ কোস্তা, হাঙ্গেরির ব্যালাজ় জ়োলোসি প্রমুখ। বাংলা, গুজরাতি, ওলন্দাজ, স্প্যানিশ— মাতৃভাষাতেই কবিতা পড়বেন তাঁরা, পরে থাকবে ইংরেজি অনুবাদ। উদ্বোধন ২২ নভেম্বর বিকেল ৫টায়, রথীন্দ্র মঞ্চে। অনুষ্ঠানে লোকগীতি থাকবে, থাকবে কবিতার কর্মশালাও। জোড়াসাঁকো, গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারি প্রভৃতি নানা ঠিকানায় বসবে এই আসর। ২৪ নভেম্বর গঙ্গাবক্ষে সমাপিকা।

শোলার সংসার

নরম উদ্ভিদটি জন্মায় ধানখেতে, জলাশয়ে। অদ্ভুত শৈলীতে তাকে ঘুরিয়ে, পেঁচিয়ে, জড়িয়ে মালাকার শিল্পীরা তৈরি করেন টোপর, গয়না, দেবদেবীর অলঙ্কার, মণ্ডপ ও গৃহসজ্জার উপকরণ। বাংলার এই শোলার কাজের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। কিন্তু ইদানীং এই শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই শোলা বলতে থার্মোকল চিনছেন। এই শিল্পের পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়ারই অঙ্গ রূপে কলকাতার জার্মান দূতাবাস ও বাংলা নাটক ডট কমের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে ‘শোলার সংসার’। আনন্দপুরের কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটিতে, ২২ নভেম্বর ৩-৫টা। অনুষ্ঠানে শোলার উৎপত্তি, মালাকারদের আখ্যান ও সাক্ষাৎকার, শিল্পের এ-কাল সে-কাল নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হবে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিখ্যাত শোলার টুপির গল্প থাকবে ‘স্টোরি অব শোলা হ্যাট’-এ। এর পর পুরস্কার বিতরণী ‘উৎকর্ষ’। শেষে তথ্যচিত্র ‘শোলা গাঁথা’-র প্রদর্শনী। শোলার তথ্য, ইতিহাসের সঙ্গে থাকবে শোলাশিল্পীদের হদিস।

নৃতাত্ত্বিক

ঘনিষ্ঠ মহলে ওঁকে সবাই বিএস গুহ নামেই চিনত। বিশিষ্ট নৃতাত্ত্বিক বিরজাশঙ্কর গুহের জন্ম শিলংয়ে, ১৮৯৪-এর ১৫ অগস্ট। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে এমএ (১৯১৫), পরে হার্ভার্ড থেকে নৃতত্ত্বে স্নাতকোত্তর। ভারতীয় হিসেবে তিনিই প্রথম ফিজ়িক্যাল অ্যানথ্রপলজিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। বারাণসীতে ১৯৪৫-এর ১ ডিসেম্বর ওঁরই যোগ্য নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ভারতীয় নৃতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ বা অ্যানথ্রপলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া। ১৯৫৪ সালে তিনি এটির নির্দেশক পদ থেকে অবসর নেন। তার পরেও রাঁচির বিহার ট্রাইবাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে নির্দেশকের দায়িত্ব সামলেছেন অনেক দিন। ঘাটশিলায় ১৯৬১ সালে এক ট্রেন দুর্ঘটনায় তাঁর জীবনাবসান হয়। এ বছর তাঁর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী। তাঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন নবকুমার দুয়ারী। সম্প্রতি হাজারিবাগের বিনোবা ভাবে ইউনিভার্সিটিতে কলকাতার ভারতীয় নৃতাত্ত্বিক সোসাইটির ৪৯তম জাতীয় সম্মেলনে প্রদর্শিত হল ‘আনটায়ারিং মাইন্ড: ড. বিরজাশঙ্কর গুহ’ শীর্ষক ছবিটি। কলকাতায় কি একটি আয়োজন করা যেত না ছবিটি নিয়ে!

শিল্পী স্মরণ

তালিম নিয়েছিলেন উস্তাদ মইনুদ্দিন ডাগর ও উস্তাদ ফরিদুদ্দিন ডাগরের কাছে। রমাকান্ত গুন্দেচা নিজেও হয়ে উঠেছিলেন বিশিষ্ট ধ্রুপদশিল্পী। তিনি ও তাঁর দাদা উমাকান্ত মিলে ধ্রুপদকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দেশবিদেশে। ভোপালে তাঁরা তৈরি করেন গুরুকুল ও ধ্রুপদ সংস্থান, শিক্ষার্থীরা আসেন সারা পৃথিবী থেকে। দেশে ও বিদেশে অনুষ্ঠান ছাড়াও বহু কর্মশালা করেছেন তাঁরা। পদ্মশ্রী, সঙ্গীত নাটক অকাদেমি-সব পেয়েছেন বহু সম্মান। অকালে প্রয়াত হলেন রমাকান্ত গুন্দেচা। ২৪ নভেম্বর তাঁর জন্মদিনে সুদেষ্ণা বসুর আয়োজনে সকাল সাড়ে ১১টায় দাগা নিকুঞ্জে (২৫/১ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড) স্মরণানুষ্ঠান, থাকবেন উমাকান্ত ও অখিলেশ, ছেলে অনন্ত।

ভালো-বাসার কণা

শহর থেকে অন্তর্ধানে ভালো-বাসার বারান্দাগুলি। দশ তলার যে বারান্দায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বা উৎপল কুমার বসু তরুণ সাহিত্যব্রতীদের মায়ার পরশ জোগাতেন, সেখানে ঝরা পাতার নৈঃশব্দ্য। যোধপুর পার্কের দোতলায় সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত গোপনে সাহায্যের বরাভয় বাড়িয়ে দিতেন উঠতি কবিদের দিকে, সেখানে হিমেল হেমন্ত। দিব্যেন্দু পালিতের আটতলার বারান্দা থেকেও শূন্যতা গড়াচ্ছে গড়িয়াহাটের যানজটে। অথচ সে দিনও সেখান থেকে নামত চা-জলখাবার আর যত্নের সুগন্ধ। ওই যে ঘরে বসেই সতীর্থের কন্যার নামে হাজার টাকা লিখে দিলেন নবনীতা দেব সেন, তার পাশের এক ফালি বারান্দাটি এ বার নেমেছে বেদনার সঙ্গে যুদ্ধে। ৭ নভেম্বর তিনি যে চলে গিয়েছেন। আর যে বারান্দা তাঁকে বার বার দেখেছে হন্তদন্ত প্রিয় দিদিমণি রূপে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের উদ্যোগে তাঁকে ভালবাসা জানানো হবে ১৮ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাঁধীভবনে। ২০ নভেম্বর বিকেল ৫টায় রবীন্দ্রসদনে নবনীতার পরিবার ও দে’জ় পাবলিশিংয়ের পক্ষ থেকে স্মরণসভা। শঙ্খ ঘোষ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বুদ্ধদেব গুহ অপর্ণা সেন জয় গোস্বামীর উপস্থিতিতে স্মৃতিচারণ, পাঠ-গানে স্মৃতিতর্পণ। প্রকাশিত হবে একটি স্মারক পুস্তিকা।

সন্ধ্যানদীর জলে

‘‘বদর বদর ডাক দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে নৌকো, একটু একটু দূরে সরে যাচ্ছে পাড়, সরে যাচ্ছে বাড়ি, সরে যাচ্ছে পুজোর দিনগুলি, ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছেন দাদু, ছইয়ের গায়ে ঠেসান দিয়ে আমরা কজন দাঁড়িয়ে আছি নিথর...’’, এই লেখাটির নাম ‘বাড়িযাওয়ার দিন’, আবার ‘দেশহারানো মানুষ’-এ লিখছেন ‘‘আমি ততক্ষণে জড়িয়ে ধরেছি ওই গাছ। বুকের মধ্যে কতজন্মের ছোঁয়া এসে লাগে।’’ শঙ্খ ঘোষের এই লেখার গুচ্ছটি রাখা আছে ‘স্মৃতি, ভ্রমণ’ অংশে, তাঁর নতুন বই সন্ধ্যানদীর জলে/ বাংলাদেশ প্রকাশ পেল ঢাকার প্রথমা প্রকাশন থেকে। বাকি লেখাগুলি রয়েছে ‘একুশে, একাত্তর ও নববর্ষ’, ‘ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান’, ‘গানের ভিতর দিয়ে’, ‘শিক্ষা-আন্দোলন’ অংশগুলিতে, সঙ্কলক পিয়াস মজিদ। এ-বইয়ের শুরুতে আত্মপ্রসঙ্গ-এ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশ নিয়ে আমার লেখার সঙ্কলন যদি হয় তবে তো আমার প্রায় সমস্ত রচনাই এর অন্তর্গত করতে হবে।... এ তো সত্যি যে মুহুর্মুহু আমি বেঁচে থাকি বাংলাদেশেরই মধ্যে।’’

৭৫ বছরে

দুর্ভিক্ষপীড়িতদের পাশে দাঁড়াতে ১৯৪৪ সালে গড়ে ওঠে নারী সেবা সঙ্ঘ। প্রাথমিক ভাবে ওদের কাজ ছিল ত্রাণে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়সাধন। শুরুতে সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সহ-সভাপতি বিধানচন্দ্র রায় আর প্রথম সম্পাদক সীতা চৌধুরী। পৃষ্ঠপোষক সরোজিনী নাইডু, লেডি অবলা বসু, প্রতিমা মিত্র প্রমুখ। সময়ের সঙ্গে কাজের ধারাও বদলেছে। ’৪৬-এর দাঙ্গা ও ’৪৭-এ দেশভাগের পরে সরকার এই সংস্থাকে শরণার্থী মহিলাদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেয়। ’৭১-এও সংস্থা বহু শরণার্থী মহিলাকে স্টেনোগ্রাফির প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আজও তারা নানা কর্মকাণ্ডে উজ্জ্বল। সঙ্ঘের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ১৩ নভেম্বর উৎসবের সূচনা করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ২২ নভেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায় সঙ্ঘের আয়োজনে মধুসূদন মঞ্চে পৌলমী চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত সৌমিত্র ও দেবশঙ্কর অভিনীত ‘ফেরা’ নাটক।

একলা চলো রে

ভারতের প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশ হয় ১৮৫৪ সালে। ১৮৪০ সালে ইংল্যান্ড পৃথিবীর প্রথম ডাকটিকিটটি প্রকাশ করে, যা ‘পেনি ব্ল্যাক’ নামে বিখ্যাত। লন্ডনের এক ভদ্রমহিলা ওয়ালপেপারের বদলে এই পেনি ব্ল্যাক ডাকটিকিটটি দিয়ে তাঁর ঘরের দেওয়াল সাজানো শুরু করেন এবং তাঁকেই বিশ্বের প্রথম ডাকটিকিট সংগ্রাহকের সম্মান দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট রুজ়ভেল্ট থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের রাজা ষষ্ঠ জর্জ বা রানি এলিজ়াবেথও এই তালিকায় আছেন। মহাত্মা গাঁধীর জন্মের দেড়শো বছর পূর্তি উপলক্ষে ডাকবিভাগের পশ্চিমবঙ্গ চক্রের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে রাজ্যস্তরের প্রদর্শনী ‘একলা চলো রে’। অ্যাকাডেমিতে প্রদর্শনীটি চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত (১২-৮টা)। ভারতের সবথেকে বিখ্যাত ও দামি ডাকটিকিটটি (১৮৫৪ সালের রানি ভিক্টোরিয়ার উল্টো করে ছাপা মুখ) ছাড়াও আরও অনেক পুরনো ও দামি ডাকটিকিটের সঙ্গে নানা ‘থিম’ভিত্তিক সংগ্রহ যেমন রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের উপর সংগ্রহও দেখা যাবে। বিশেষ উল্লেখযোগ্য সোশ্যাল ফিলাটেলি বিভাগে ক্যানসার সচেতনতা সংক্রান্ত স্ট্যাম্পের সংগ্রহ যেটি চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন বরিষ্ঠ সহ-অধিকর্তা উৎপল সান্যালের। সর্বাধুনিক তথ্য-সহ ক্যানসারের বিপদসঙ্কেত থেকে শুরু করে প্রতিরোধের উপায় ইত্যাদি সবই ডাকটিকিটে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিমা-প্রণতি

গত শতাব্দীর সমাজ ও সময়ের শেকল কেটে অগণিত বঙ্গবালা উড়ান দিয়েছিলেন সৃষ্টি ও মুক্তির আকাশে। তাঁদেরই এক জন প্রতিমা দেবী (১৮৯৩-১৯৬৯)। রবীন্দ্র-পুত্রবধূ ও রথীন্দ্রজায়া পরিচিতির অনেক ঊর্ধ্বে তাঁর যাপন। স্বয়ং কবি ও নন্দলাল বসুর তত্ত্বাবধানে তিনি মন দিয়েছিলেন অলঙ্করণে। প্যারিসে গিয়ে ফ্রেস্কো-কলায় দক্ষ হয়েছিলেন। তাঁর শিল্পীসত্তার ছায়ায় বিশ্বভারতীপ্রাঙ্গণ ঋদ্ধ হয়েছিল। নৃত্যনাট্য চর্চায়, বাটিক প্রিন্টের কুশলতায়, কবির শেষজীবনের স্মৃতিগ্রন্থনে তাঁর স্বাক্ষর। (সঙ্গের ছবিতে প্রতিমা দেবী ও নন্দিনী)। প্রতিমা-জীবনের নানা অনালোকিত পর্যায়ের শৈল্পিক মঞ্চায়ন ২৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায়, আইসিসিআর-এর সত্যজিৎ রায় প্রেক্ষাগৃহে। ভাবনায় এসপিসিক্রাফ্ট। প্রতিমা দেবীকে নিয়ে পাঠের মধ্যেই থাকবে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও আবৃত্তি। ভাষ্যে সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, চৈতালি দাশগুপ্ত ও সুপর্ণা দত্ত। একই অনুষ্ঠানে নীলিমা সেন তনয়া, রবীন্দ্রনৃত্যের অন্যতম নক্ষত্র নীলাঞ্জনা সেন (১৯৫৬-২০১৮)-কে নিয়ে আলোচনা করবেন শর্মিলা রায় পোমো। বীরুৎজাতীয় ও এসপিসিক্রাফ্ট আয়োজিত প্রথম নীলাঞ্জনা সেন পুরস্কার পাবেন বিশ্বজিৎ রায়।

নাগরিক উদ্যোগ

কলকাতার প্রান্তবর্তী আর পাঁচটা সাধারণ জনপদের থেকে দমদম অনেকটাই আলাদা। একদা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাম্রাজ্য বিস্তারে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল ‘বেঙ্গল আর্টিলারি’, আর তার জন্যই দমদমের গুরুত্ব। তবুও তা উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে। সেই ইতিহাস অনুসন্ধান করে তিনটি খণ্ডে প্রকাশ করেছে ‘দেশকাল’। এ বার ঐতিহ্য সংরক্ষণে এগিয়ে এসেছে দমদমের নাগরিক সমাজ। তৈরি হয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দমদম হেরিটেজ প্রিজ়ারভেশন সোসাইটি’, যার সভাপতি অলোক গুহ, কার্যনির্বাহী সভাপতি বারীন রায়চৌধুরী এবং সম্পাদক শ্যামলকুমার ঘোষ (‘দেশকাল’-এর সম্পাদক)। সংগঠনের উদ্দেশ্য দমদম অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী স্মারকগুলি যথাযথ ভাবে চিহ্নিত করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। ইতিমধ্যেই প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত হয়েছে শতাধিক স্মারক। পুরো প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে বিশ্ব ঐতিহ্য সপ্তাহ (১৯-২৫ নভেম্বর) উপলক্ষে ২৩ নভেম্বর আইসিসিআরে এক সম্মেলনে।

মুহূর্তের পরিসরে ফুটে ওঠে নাটকের ছন্দ

থিয়েটারের প্রত্যক্ষ অভিঘাত এতই দ্রুত লোকস্মৃতি থেকে মুছে যায় যে তা ধরে রাখবার জন্য আলোকচিত্রায়ণ, ভিডিয়োগ্রাফি, বা চলচ্চিত্রায়ণের প্রযুক্তিগত পন্থা বার বার গ্রহণ করা হয়, কিন্তু তাতে থিয়েটারের স্বাদ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হারিয়ে যায়। কোয়েলা আর তাঁর তোলা ছবি সে দিক থেকে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। ‘‘আমার চেষ্টা থাকে যেন আমার ছবি দেখে থিয়েটারের মূল সুরটা বোঝা যায়, আর একই সঙ্গে ছবিটা যেন আবার শিল্পও হয়ে উঠতে পারে।’’ বলছিলেন তিনি। একটি নাট্যপ্রযোজনা একাধিক বার দেখে নাটকীয় ‘মুহূর্ত’গুলি বেছে নিয়ে তাকে বিশিষ্ট ছবির মর্যাদায় চিহ্নিত করার দুর্লভ দৃষ্টি না থাকলে নাটকীয়তাহীন কিছু দৃশ্যমাত্র শেষ পর্যন্ত থেকে যায়। ‘‘কোয়েলার কিছু নাট্যচিত্রে সেই ‘দুর্লভ দৃষ্টি’র পরিচয় পেয়ে তৃপ্তি পেয়েছি। কোয়েলার ছবিতে থিয়েটারের সজীব ছন্দ মূর্ত হয়েছে।’’ মনে হয়েছে শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সতেরো-আঠারো বছর হয়ে গেল, কোয়েলা ছবি তুলছেন, ছবি তোলা তাঁর কাছে নেশা-পেশা দুই-ই। ‘‘আমায় প্রথম নাটকের ছবি তোলার সুযোগ করে দেন পঙ্কজ মুন্সী মহাশয়।’’ জানালেন কোয়েলা। ২৩-২৭ নভেম্বর তাঁর এই ছবির একক প্রদর্শনী (সঙ্গে সেই ছবিগুলির একটি: দ্রৌপদীর ভূমিকায় সাবিত্রী হেইসনাম), কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের তিন তলায় ‘বই-চিত্র’-এ, প্রতি দিন সাড়ে ৩টে থেকে সাড়ে ৭টা।

থিয়েটার ও সঙ্গীত

থিয়েটারে হাতেখড়ি শৈশবেই। সাড়ে তিন বছর বয়সে ‘অহল্যা’ নাটকে একটি বাচ্চা মেয়ের ভূমিকায়। ‘অলটারনেটিভ লিভিং থিয়েটার’-এর প্রবীর গুহই প্রথম শিক্ষাগুরু, পিতাও। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। বেড়ে ওঠার ফাঁকে ফাঁকেই থিয়েটারের সঙ্গে ওতপ্রোত। তবু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, মনে তখন সুরের নেশা, শুরু হল সঙ্গীতচর্চা, কথা-সুরে নতুন কিছু খোঁজার চেষ্টা। ক্লাস টেনে প্রথম ব্যান্ড ‘চক্রব্যূহ’। সেই সূত্রেই সুমনের গানের সঙ্গে পরিচয়, শুভদীপ জানান, সে গান তাঁর ভাবনাকে আমূল বদলে দিল। গানের ভিতর দিয়ে নতুন পথ ও মতের সন্ধান। পুরুলিয়া, কোচবিহার, বাঁকুড়া, বীরভূম, ত্রিপুরা, নেপাল, বাংলাদেশ, ফ্রান্স, ইজ়রায়েল, পাকিস্তানে ভ্রমণ। বুঝলেন সঙ্গীত কী ভাবে মানুষের জীবনের গান হয়ে ওঠে। সঙ্গে থিয়েটারে সঙ্গীত নিয়ে নানা কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ। ২০০১-এ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে নাটকের আবহ নির্মাণ শুরু করেন। পাশাপাশি ছিল নিজেদের লোকগীতির দল ‘আরশিনগর’। ২০১১-য় কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক থেকে ফেলোশিপ পান ‘মিউজ়িক ইন থিয়েটার’ নিয়ে কাজের জন্য। কাজ করেছেন অবন্তী চক্রবর্তী, দেবাশিস রায়, সোহিনী সেনগুপ্ত, শান্তনু দাস, সুমন মুখোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু প্রমুখের সঙ্গে। বাংলার বাইরে সত্যব্রত রাউত, বিপিন কুমার, চন্দ্রদাসনের সঙ্গে। ইতিমধ্যেই শতাধিক নাটকে আবহ নির্মাণ করে ফেলেছেন শুভদীপ। জীবনের অন্যতম নাট্যগুরু হেইসনাম কানহাইয়ালালের অনুপ্রেরণায় প্রথম নাট্য নির্দেশনার কাজ শুরু ২০১১-য়, ‘অলটারনেটিভ লিভিং থিয়েটার’-এর নাট্য নির্দেশক হিসেবে। নির্দেশিত প্রথম নাটক ‘কৃষ্ণকলি’। এর পর ২০১৩-য় ‘লং মার্চ’, ২০১৫-য় ‘রেড অ্যালার্ট’, ২০১৭-য় ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং ম্যাকবেথ’। পাশাপাশি ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (সিকিম)-এ গেস্ট লেকচারার হিসেবে ক্লাস করানো। সম্প্রতি শুভদীপকে ‘উস্তাদ বিসমিল্লা খান যুব পুরস্কার’-এ সম্মানিত করল সঙ্গীত নাটক অকাদেমি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE