Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা: বাঙালির ছবি তোলা

পত্রিকার ফোকাস পেশাদার আলোকচিত্রীদের উপর, রঘু রাই বাদে যাঁরা সকলেই বাঙালি। রঘু রাই, নিমাই ঘোষ, অরুণ গঙ্গোপাধ্যায়, তপন দাস, সনৎ ঘোষ, রনি সেন মুখোমুখি আলাপচারিতায় উজাড় করেছেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

অনেক খদ্দের তাঁদের মা বা স্ত্রী-র পুরোনো ফোটো আনতেন, যা-তে কেবল তাঁদের মুখটুকুই আবছা দেখা যায়। এই মুখকে আরেকটি ফোটোর কাঁধে বসিয়ে একটা সম্পূর্ণ ছবি তৈরি করা হত। মহিলার কাঠামো অনুযায়ী মা কিংবা জেঠিমা মডেলের কাজ করতেন।’’ লিখছেন হাংরি আন্দোলনখ্যাত সাহিত্যিক মলয় রায়চৌধুরী। সৈকত মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘হরপ্পা লিখন চিত্রণ’ পত্রিকার সাম্প্রতিক ফোটোগ্রাফি সংখ্যায় তাঁর ‘ফোটোগ্রাফার পূর্বপুরুষদের গল্প’ তুলে এনেছে ভারতীয় ফটোগ্রাফির ইতিহাসে বিস্মৃত ব্যক্তিত্ব লক্ষ্মীনারায়ণ রায়চৌধুরী (১৮৬৬-১৯৩৩) আর তাঁর উত্তর প্রজন্মের কথা। পত্রিকার ফোকাস পেশাদার আলোকচিত্রীদের উপর, রঘু রাই বাদে যাঁরা সকলেই বাঙালি। রঘু রাই, নিমাই ঘোষ, অরুণ গঙ্গোপাধ্যায়, তপন দাস, সনৎ ঘোষ, রনি সেন মুখোমুখি আলাপচারিতায় উজাড় করেছেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা। আছেন ‘ছায়াজগতের স্থিরচিত্রের চিত্রগ্রাহক’ সুকুমার রায় (সঙ্গে তাঁরই তোলা ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র শুটিংয়ে সত্যজিৎ-সৌমিত্র-শর্মিলা), বাণিজ্যিক ছবির বিবেক দাস, খবরের শিরোনামে চলে আসা বাংলাদেশের শহীদুল আলম, সত্যেন মণ্ডলের মতো প্রবীণের পাশাপাশি নবীনরাও। আছেন ডার্করুমে সাদাকালোর সংস্কৃতিকে এখনও টিকিয়ে রাখা বিকাশ বসু, কিংবা ডিজিটাল প্রযুক্তির কাছে মাথা না-নুইয়ে চুপচাপ বিদায় নেওয়া জ্যোতিষ চক্রবর্তী। আছে অনেক ঐতিহ্যবাহী স্টুডিয়োর কথা— দার্জিলিঙের দাস স্টুডিয়ো কি রানাঘাটের ডি এন মিত্র, কলকাতার বোর্ন অ্যান্ড শেফার্ড, সি গুহ, ডি রতন ও সি ব্রাদার্স। অভীককুমার দে-র ‘মানববিজ্ঞান বিভাগের ফোটো-ইউনিট’ ও সত্যশ্রী উকিলের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের ফোটো-ইউনিট’-এর কথা প্রাতিষ্ঠানিক আলোকচিত্র চর্চার আভাস দেয়। পেশাদার আর নেশাদারদের নিয়ে চমৎকার স্মৃতিকথন দেবাশিস বসুর, অরুণ নাগের ‘টুকরো চিন্তা’য় ছবি তোলার নানা দিক, সাহিত্যে ছবি-তোলা সুমন ভট্টাচার্যের লেখায়। তথ্যসমৃদ্ধ লেখার পাশাপাশি বহু দুর্লভ ছবির নিখুঁত মুদ্রণে বাঙালির আলোকচিত্র চর্চার জগৎ কিছুটা অন্তত ধরা রইল এ সঙ্কলনে।

মহানায়ক

উত্তমকুমারকে ভেবেই সত্যজিৎ রায় ‘নায়ক’ ছবি করার কথা ভেবেছিলেন। সেই ‘নায়ক’-এর অভিনয় দেখে এলিজ়াবেথ টেলর পর্যন্ত মুগ্ধ। উত্তমকুমার শুধু অভিনেতাই ছিলেন না, প্রযোজক, পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছিলেন। এ বার মহানায়কের ৯২তম জন্মদিন উপলক্ষে ৩ সেপ্টেম্বর সাড়ে ৫টায় উত্তম মঞ্চে ‘সুরের আকাশে তুমি যে গো শুকতারা’ শীর্ষক সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন শ্যাম সরকার। গান শোনা যাবে সুতপা ভট্টাচার্য, শম্পা কুণ্ডু প্রমুখের কণ্ঠে। থাকবেন মাধবী মুখোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, গৌরব চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। প্রকাশ পাবে উত্তম-অভিনীত ছায়াছবির ২৪টি পোস্টারে সাজানো ক্যালেন্ডার। এতে তাঁর জনপ্রিয় ছায়াছবি ‘হারানো সুর’ ‘দুই ভাই’ ‘শাপমোচন’ ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ ‘সপ্তপদী’ ‘নায়ক’ ‘সাগরিকা’ ইত্যাদির পাশে জায়গা পেয়েছে ‘কঙ্কাবতীর ঘাট’ ‘শিকার’ ‘পুত্রবধূ’র মতো ছবির পোস্টারও। প্রকাশক ও সংগ্রাহক সুদীপ্ত চন্দ।

প্রাসঙ্গিক

“আমরা এই সময়ে দাঁড়িয়ে ছবিটা করেছি, সেখান থেকেই সরোজ দত্তের সময়টাকে ফিরে দেখছি। এই সময়ের গল্প ওই সময়ের গল্পের সঙ্গে যেন কথা বলেছে ছবিতে।’’ বলছিলেন কস্তুরী বসু, তিনি আর মিতালি বিশ্বাস মিলে করেছেন ‘সরোজ দত্ত অ্যান্ড হিজ় টাইমস’ ছবিটি। সত্তর দশকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে নিহত নকশাল কবি সরোজ দত্তের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ছবিটি তৈরি হলেও এটি প্রচলিত বায়োপিক নয়; “একটি মানুষের কথা নয়, তাঁকে নিয়ে সমবেত লড়াইয়ের, যে সমবেত লড়াই এখনও চলছে এবং সমান প্রাসঙ্গিক, তা নিয়েই গোটা ছবিটা।’’ ম্যাক্সমুলার ভবনের গ্যোটে ইনস্টিটিউটে ডকু ফোরাম-এর উদ্যোগে ছবিটি দেখানো হবে ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায়। সঙ্গের ছবিতে সরোজ দত্ত।

নির্মোহ বিশ্লেষণ

‘‘গান্ধিজির মধ্যে পাই ভারতের নিজস্ব আধুনিকতার ভারতীয় পদ্ধতি, সে হল ভারতীয় সমাজতত্ত্বের উৎস সন্ধান।’’ কবি রাম বসুর (১৯২৫-২০০৭) কবিতার কেন্দ্রে আছে ব্যক্তি মানুষের আত্মিক সঙ্কট, তার উত্তরণের পথ তিনি খুঁজেছেন ইতিহাসের নির্মোহ বিশ্লেষণে। বিচরণ করেছেন সমাজতত্ত্বের আঙিনায়। এই অন্বেষণের অন্যতম ফসল তিনি পাণ্ডুলিপি আকারে তৈরি করে গিয়েছিলেন, এ বার তা প্রকাশিত হচ্ছে— গান্ধিজির দৃষ্টিতে আধুনিকতা ও ক্ষমতাতন্ত্র (অন্যতর পাঠ ও চর্চা)। ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় মহাবোধি সোসাইটি হলে বইটি উদ্বোধন করবেন শোভনলাল দত্তগুপ্ত, বইয়ের ‘মুখবন্ধ’টিও তাঁরই লেখা। প্রধান অতিথি অভ্র ঘোষ।

নাগরিক পঞ্জি

অসমে নাগরিক পঞ্জির খসড়া বেরিয়েছে সম্প্রতি। ৪০ লক্ষ মানুষ তাতে জায়গা পাননি। এই নাগরিক পঞ্জির পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে একটি আলোচনা সভা ৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমিতে (কালীঘাট পার্ক)। ১৯৮৩-র নেলি গণহত্যা ও আশির দশকের অসম আন্দোলন নিয়ে শুভশ্রী কৃষ্ণণের একটি তথ্যচিত্র দেখানো হবে। তার পর বিষয়টি নিয়ে বলবেন আই আই টি গুয়াহাটির অধ্যাপক দেবর্ষি দাস। থাকছে প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই দিনই প্রকাশিত হবে পিপল্‌স স্টাডি সার্কেল প্রকাশনীর বই, আসামে নাগরিকপঞ্জির সাতকাহন। লেখা দেবর্ষি দাস, ছবি সোমশঙ্কর। আয়োজক পিপল্‌স ফিল্ম কালেকটিভ ও সংহতি অভিযান।

বর্ষামঙ্গল

১৯৩৭ সালের ১৪ অগস্ট। শান্তিনিকেতনের সাঁওতাল গ্রামে রবীন্দ্রনাথের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত হল হলকর্ষণ ও বৃক্ষরোপণ উৎসব। পর দিন বর্ষামঙ্গল হওয়ার কথা। কিন্তু ১৪ তারিখ রাতে আশ্রমিক পণ্ডিত নিত্যানন্দবিনোদ গোস্বামীর একমাত্র পুত্র বীরেশ্বরের আকস্মিক মৃত্যুতে অনুষ্ঠান স্থগিত হয়ে গেল। আলমোড়া থেকে ফিরে এসে কবি ১৫ থেকে ৩০ শ্রাবণের মধ্যে এই বর্ষামঙ্গলের জন্য রচনা করেছিলেন ১৬টি গান, এমনটাই অনুমান। স্থগিত সেই বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠিত হল ৪-৫ সেপ্টেম্বর কলকাতার ছায়া রঙ্গমঞ্চে, কবির উপস্থিতিতে। সেটিকেই ৮১ বছর পর পুনর্নির্মাণ করছে সোহিনী সংস্থা, ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধে ৬টায় রাসবিহারী মোড়ে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক সংলগ্ন অভীক ঘোষের বাড়িতে। প্রযোজনা ও উপস্থাপনায় সত্যকাম সেন।

ট্রামযাত্রা

রবিবারে কলকাতার সকাল তখনও আড়মোড়া ভাঙছে। আকাশে মেঘ, ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি! তারই মধ্যে টিং-টিং ঘণ্টি বাজিয়ে এগিয়ে চলল হেরিটেজ ট্রামবনলতা। যাত্রী ছিলেন শহরে ঘুরতে বা পড়তে আসা বিদেশিরা। সম্প্রতি এই ঐতিহ্যযাত্রা আয়োজিত হয়েছিল আইসিসিআর এবং ফ্রিড-এর যৌথ উদ্যোগে। ওঁদের কলকাতা দর্শন হল ধর্মতলা-শ্যামবাজার ভায়া বিধান সরণি। কলেজ স্ট্রিটের বইবাজার আর বিবেকানন্দের বাড়ির সামনে ট্রাম দাঁড়াল কিছু ক্ষণ। উঠল দেদার ছবি-সেলফি। পোল্যান্ড, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, সুইডেন, আমেরিকা, সুদান, ফ্রান্স এবং বাংলাদেশ থেকেও ছিলেন যাত্রীরা। সুদানের জোয়েল স্মিথ আর ওয়াফেগ তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে পড়ছেন যাদবপুরে, ওঁদের এই প্রথম ট্রাম-সফর। দলের সব চেয়ে খুদে উইলসনের জন্ম অবশ্য মুম্বইয়ে। মাঝপথে ঘুমিয়ে পড়ে সে, কিন্তু ওর বাবার মতোই মা মলির উৎসাহ ছিল প্রবল। কলকাতা সফর জমে গেল মুড়ি-বাদাম, গরম শিঙাড়া, মাটির ভাঁড়ে আদা-চা আর জাম সন্দেশ-সহ আড্ডায়। বেশ যত্ন করেই অতিথি-সেবা করলেন ট্রাম পরিচালক আফজল আহমেদ খান।

দুই শিল্পী

বাড়ির কাছেই কবরস্থান, তার পুব দিকের দেওয়াল ভাঙছিলেন শ্রমিকেরা। মাটি ফেলে উঁচু করা হবে পুরো জায়গাটা। দেখেই মনে হয়েছিল— আলো, মানে জীবন আসছে পুব দিকের ভাঙা দেওয়াল দিয়ে; মাটি ফেলে উঁচু করা হচ্ছে মাটি, যার গভীরে শুয়ে মৃতেরা। জীবন, মৃত্যু আর মাটির এই চক্র নিয়েই শিল্পী পার্থ দাশগুপ্তের নতুন কাজ ‘রেকালেক্টিং দ্য ম্যানাস্ক্রিপ্ট’। ছ’ফুট বাই ছ’ফুটের দেওয়ালে গাঁথা ন’টি কুঠুরি (সঙ্গের ছবি), মর্গের ড্রয়ারের মতো কয়েকটা টেনে খুললে চোখে পড়ে খণ্ডিত দেব-দেহাংশ। শিল্পী অসীম পালের ‘অস্তিত্ব অনস্তিত্ব’-এর বিষয় দেশভাগ; সীমান্তপথ, কাঁটাতার, স্মৃতিফলক হয়ে উঠেছে শিল্পবস্তু। কলকাতার দুই সেরামিক্স-শিল্পী এখন জয়পুরে, সেখানেই শুরু হয়েছে সেরামিক্স ত্রিয়ানাল, ভারতে এই প্রথম। বিশ্বের ৪৭ জন শিল্পীর মধ্যে পূর্ব ভারত থেকে গর্বিত উপস্থিতি কলকাতার দুই শিল্পীর।

প্রাক-শতবর্ষ

স্কুলে পড়তে পড়তেই কবিতা লেখা শুরু। একে একে দৈনিক আজাদ, বসুমতী, বঙ্গশ্রী, যুগান্তর-এ তাঁর গল্প, নাটক ও নিবন্ধ প্রকাশ পেল। তাঁর লেখা ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে’, ‘পৃথিবী আমারে চায়’, অথবা ‘শুনি তাকদুম তাকদুম বাজে’ ইত্যাদি গান আজও আম বাঙালির কাছে অমর। মতিলাল ও গোলাপকামিনীর পুত্র মোহিনী চৌধুরীর (১৯২০-৮৭) জন্ম ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়ায়। পড়াশোনা কলকাতায়। তবে পড়া শেষের আগেই চাকরি জিপিও-তে। ১৯৪৩ থেকে গ্রামোফোন, রেডিয়ো ও সিনেমার গীতিকার, কাহিনিকার ও চিত্রপরিচালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ। শৈলজানন্দের ‘ঘুমিয়ে আছে গ্রাম’ ছবিতে প্রধান সহকারী। ‘রং বেরং’ ছবিতে অন্যতম প্রযোজক। ১৯৫৬-য় তাঁর নিজের কাহিনি-প্রযোজনা ও পরিচালনায় ‘সাধনা’-র মুক্তিলাভ। এ বার তাঁরই ৯৯তম জন্মদিন উপলক্ষে ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় নন্দন-৩-এ ‘মোহনীয়া’র আয়োজনে তাঁর জীবন ও সৃষ্টি নিয়ে বলবেন পবিত্র সরকার। প্রদর্শিত হবে তাঁর গান নিয়ে একটি চিত্র নিবেদনও।

তাল-বেতাল

‘‘...এখন সবই শান্ত, সবই ভাল।/ তরল আগুন ভরে পাকস্থলী/ যে-কথাটাই বলাতে চাও বলি/ সত্য এবার হয়েছে জমকালো।...’’ শঙ্খ ঘোষের এই কবিতাটি-সহ অসহিষ্ণু সময়ের নানা মুহূর্তে লেখা তাঁর কবিতাগুলি থেকে এবং শ্রীজাত-র ধ্বংস কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতা নিয়ে একটি কবিতা-কোলাজ, ‘নিষেধ শুধু বিরুদ্ধতায়’, উপস্থাপন করবে ‘তাল বেতাল’— আবৃত্তি, শ্রুতিনাটক ও নৃত্যের চর্চাকেন্দ্র। প্রায় পনেরো বছর ধরে কাজ করছে এই কেন্দ্রটি। কোলাজ ছাড়াও আছে শ্রুতিনাটক ‘স্ত্রীর পত্র’। ৮ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবনে সন্ধে ৬টায় পঞ্চম বার্ষিক অনুষ্ঠান। উপস্থিত থাকবেন শঙ্খ ঘোষ। কেন্দ্রটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক দিতিপ্রিয়া সরকার প্রয়াত আবৃত্তিকার অমিতাভ বাগচীর ছাত্রী, তাঁর ঝুলিতে বাইশ বছর ‘স্বপ্নসন্ধানী’ নাট্যগোষ্ঠীতে নাটক করার অভিজ্ঞতা।

নব্বই পেরিয়ে

জন্ম মুর্শিদাবাদ জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে, ১৯২৭ সালে। চার দশকের শিক্ষকতা, লেখালিখির জীবন আরও অনেক বিস্তৃত। বিশেষত বাংলার পুরাকীর্তি চর্চার জগতে মুর্শিদাবাদের অবহেলিত কাহিনি তুলে আনার ক্ষেত্রে বিজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ই পথিকৃৎ। ১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর পশ্চিমবঙ্গের পুরাসম্পদ: মুর্শিদাবাদ বইটি। ২০০০ সালে সরকারি পর্যায়ে বাংলা ভাষায় মুর্শিদাবাদের গেজ়েটিয়ার প্রকাশেও তাঁর অগ্রণী ভূমিকা— সৌমিত্রশঙ্কর সেনগুপ্ত ও প্রকাশ দাস বিশ্বাসের সঙ্গে এই বিশাল গ্রন্থটি সম্পাদনা করেন তিনি। কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ তাঁকে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কারে সম্মানিত করেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর মুর্শিদাবাদের মন্দির, আর ৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশ পাবে তাঁর নির্বাচিত প্রবন্ধ সংগ্রহ (আকাশ)। নব্বই-উত্তীর্ণ মানুষটি এখনও পড়াশোনার মধ্যে থাকতেই ভালবাসেন।

বীরাঙ্গনা

হেমাঙ্গ বিশ্বাস তাঁকে ডাকতেন ‘তোভারিশ’ (রুশ ভাষায় কমরেড) বলে। ‘ভারতে ফার্মাসির জনক’ প্রেমানন্দ দাসের কন্যা অঞ্জলি লাহিড়ী (১৯২২-২০১৩)সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিয়ে বামপন্থী আন্দোলনের জনপ্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন। বৃহত্তর অসমের ছাত্রী সংগঠনের সম্পাদিকা অঞ্জলিকে নিয়ে হেমাঙ্গ কবিতাও লিখেছিলেন: ‘‘তুমি, আমি আর যারা চলি এক সাথে/ কংকাল কাঁকড় পথে যত বিপর্যয়/ তার মাঝে আমাদের ঘটে পরিচয়।’’ পার্টি তখন নিষিদ্ধ। দিনের পর দিন খাসিয়া পাহাড়ে লুকিয়ে থেকেও কারাবাস এড়াতে পারেননি অঞ্জলি। সেই বিবরণ আছে সহবন্দিনী সুরমা ঘটকের শিলং জেলের ডায়েরি বইয়ে। পার্টি ভাগের পর সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শরণার্থী আর মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে যে ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তা শিলং পাহাড়ে মিথ হয়ে আছে আজও। সেই সময় ধরা আছে তাঁর স্মৃতি ও কথা: ১৯৭১ সংকলনে এবং জগজ্যোতি উপন্যাসে। এ ছাড়া লিখেছেন বিলোরিস, সোনার সিঁড়ির উপকথা, পাম ভিউ নার্সিংহোম, সুবর্ণপ্রভা দাস ও তৎকালীন নারীসমাজ, অনুবাদ গ্রন্থ অসমের মহিলা কথাকার। অসম-শিলঙের এই বাঙালি বীরাঙ্গনাকে স্মরণ করবে অহর্নিশ এবং উত্তরপাড়া জীবনস্মৃতি, ১০ সেপ্টেম্বর, জীবনানন্দ সভাঘরে, বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। তাঁকে নিয়ে কথা বলতে গুয়াহাটি-শিলং-দিল্লি-মুম্বই থেকে আসবেন ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য, সুকুমার বাগচী, অনিন্দ্য বিশ্বাস প্রমুখ, আর কলকাতার শঙ্কর চক্রবর্তী, বাসুদেব দাস। গান শোনাবেন প্রিয়াঙ্গী লাহিড়ী। প্রধান অতিথি শঙ্খ ঘোষ। ছবি সুরজিৎ দত্তের সৌজন্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE