Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা: অনুবাদকদের অভিযান

বার্লিন থেকে আট জনের একটি দল এই শহরের অনুবাদক লেখক প্রকাশক ও সম্পাদকদের সঙ্গে ‘অনুবাদকদের শহর— বার্লিন-কলকাতা’ অভিযানে যোগ দিতে এসে গিয়েছেন। ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকেও আসছেন এক জন।

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৩১
Share: Save:

কলকাতায় তো কত বিদেশি আসেন, কেউ দেখেন ঐতিহ্য, কেউ ভিড় দারিদ্র জঞ্জাল। কিন্তু ভাবুন তো, বিদেশ থেকে অনুবাদক, কবি-লেখক, অনুবাদবিদ গবেষক, প্রকাশক, সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের একটি দল এসেছে, দশ দিন ধরে ঘুরে ঘুরে তাঁরা কথা বলছেন নানা জনের সঙ্গে, এমনকি কলকাতার বহুভাষী চরিত্রটা সরজমিন বুঝে নিতে পৌঁছে যাচ্ছেন টেরিটিবাজার-চিনাপল্লি, জ়াকারিয়া স্ট্রিট-নাখোদা মসজিদ, খিদিরপুর, কলেজ স্ট্রিট কি লেক মার্কেট? হ্যাঁ, এই প্রথম ঘটছে অনুবাদকদের অভিযান। কলকাতায়, ৫-১২ নভেম্বর। বার্লিন থেকে আট জনের একটি দল এই শহরের অনুবাদক লেখক প্রকাশক ও সম্পাদকদের সঙ্গে ‘অনুবাদকদের শহর— বার্লিন-কলকাতা’ অভিযানে যোগ দিতে এসে গিয়েছেন। ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকেও আসছেন এক জন। রবার্ট বশ ফাউন্ডেশন ও ডয়েচার য়ুবারজেৎসারফঁ-এর উদ্যোগে এই টোলেডো প্রোগ্রামের সূচনা গ্যোয়েটে ইনস্টিটিউট ম্যাক্সমুলার ভবনে আজ, ৫ নভেম্বর (গ্রন্থপাঠ), ও ১২ নভেম্বর সমাপ্তি (টোলেডো আলোচনা: বার্লিন-কলকাতা: অনুবাদকদের শহর?)। এর মাঝে রয়েছে ঠাসা অনুষ্ঠান: ‘ট্রানস্লেটিং কলকাতা’ বিষয়ে কানাডার কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেরি সাইমনের বক্তৃতা ও চিন্ময় গুহের কথোপকথন (৭ নভেম্বর, বাংলা আকাদেমি), ভারতীয় ভাষার লেখক ও অনুবাদকদের আলোচনাচক্র (৯ নভেম্বর, সাহিত্য অকাদেমি), অনুবাদ-প্রকাশক ও সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা (১০ নভেম্বর, বই-চিত্র) এবং অনুবাদ বিষয়ে আলোচনাচক্র (১২ নভেম্বর, সেন্টিল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)। পাশাপাশি বহুভাষী কলকাতার ভাষা ও ইতিহাসের চিহ্নগুলি চেনাবেন ‘হেরিটেজ ওয়াক ক্যালকাটা’র সদস্যরা। এক জন অনুবাদকের চোখে এক দিনের অভিযানে কলকাতার অনুবাদ-সংস্কৃতির রূপ তুলে ধরবেন জার্মান সাহিত্যের অনুবাদক সুব্রত সাহা। তিনিই টোলেডো-র পক্ষে সমগ্র পরিকল্পনা, সংগঠন ও পরিচালনার দায়িত্বে। সঙ্গে পরিমল গোস্বামীর তোলা পুরনো দিনের কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ার ছবি।

দেশবন্ধু স্মরণ

চিত্তরঞ্জন দাশ তখন কারাগারে। সহবন্দি সুভাষচন্দ্র বসুও। ‘বাংলার কথা’ সংবাদপত্রের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন চিত্তরঞ্জনের সহধর্মিণী বাসন্তী দেবী। পত্রিকার জন্য লেখা চাওয়ায় বিদ্রোহী কবি লিখলেন সেই বিখ্যাত গান—‘‘কারার ঐ লৌহকপাট/ ভেঙে ফেল কররে লোপাট।’’ আইন ব্যবসায়ী হিসেবে বিপুল অর্থোপার্জনের পরেও অসহযোগ আন্দোলনের সময় সেই পেশা ত্যাগের অনন্য নজির স্বদেশবাসীর কাছে চিত্তরঞ্জনের নতুন পরিচয় দিল— ‘দেশবন্ধু’। মহাত্মা গাঁধীর পথে দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করলেও পরে কংগ্রেস ত্যাগ করে ‘স্বরাজ্য দল’ গঠন করেন। দানবীর ও সাহিত্যপ্রাণ এই মনীষী ‘নারায়ণ’ পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করা ছাড়াও বেশ কিছু গ্রন্থেরও প্রণেতা। মাত্র পঞ্চান্ন বছরে প্রয়াত হন তিনি। আজ তাঁর ১৪৯তম জন্মদিন। মফস্‌সলের ‘প্রমিথিউসের পথে’ পত্রিকা দেশবন্ধু-স্মরণে উদ্যোগী। আট বছর আগে তাঁরা একটি বিশেষ সংখ্যা করেছিলেন, আগামী বছর প্রকাশ পাবে একটি জীবনীগ্রন্থ। ১১ নভেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় তাঁদের সাংস্কৃতিক চক্র উদযাপন করবে দিনটি। দেশবন্ধুকে নিয়ে বলবেন শঙ্কর ঘোষ, পরিমল হালদার প্রমুখ।

ইন্দ্ররঙ মহোৎসব

‘‘অনেক দিন থেকেই পেশাদারি থিয়েটার নিয়ে লেখালিখি করছি, ইন্দ্ররঙ মহোৎসব তারই প্রমাণস্বরূপ। দ্বিতীয় বছর হচ্ছে উৎসবের, ভারতীয় থিয়েটারের চালচিত্র তুলে আনছে এ উৎসব, আমাদের মূলস্রোত থিয়েটারকে করে তুলছে আরও গুরুত্বপূর্ণ। গত বার ও এ বার এখানে দাপিয়ে অভিনয় করে গিয়েছেন এবং করবেন পরেশ রাওয়াল, সৌরভ শুক্ল, মকরন্দ দেশপান্ডে-র মতো সর্বভারতীয় নাট্যব্যক্তিত্ব... কলকাতার মানুষের কাছে এ তো পরম পাওয়া।’’ বলছিলেন ব্রাত্য বসু, তিনিই এই জাতীয় নাট্যোৎসবের অধ্যক্ষ। আয়োজক ইন্দ্ররঙ্গ নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী জানালেন ‘‘অ্যাকাডেমিতে ১১ নভেম্বর উদ্বোধন। আছে কালিন্দী ব্রাত্যজন-এর সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‘মীরজাফর’ (সঙ্গের ছবিতে সে নাটকে ক্লাইভের ভূমিকায় ব্রাত্য বসু), ছোটদের নাটক ‘ভোম্বল সর্দার’, আর ইন্দ্ররঙ্গ-র ‘অদ্য শেষ রজনী’।’’ বাকি নাটকগুলি মঞ্চস্থ হবে পাইকপাড়ার মোহিত মৈত্র মঞ্চে। আছে সৌরভ শুক্ল অভিনীত ও পরিচালিত দু’টি নাটক: ‘টু টু ট্যাঙ্গো থ্রি টু ‌জ়াইভ’ ও ‘বর্ফ’। ১৮ নভেম্বর সমাপ্তি-নাটক মুম্বইয়ের মকরন্দ দেশপান্ডে অভিনীত ও নির্দেশিত ‘স্যর স্যর সরলা’।

শখের গোয়েন্দা

শার্লক হোমসের গল্পের অনুবাদ যেমন বাংলায় আমদানি করেছিল শখের গোয়েন্দাকে তেমন আবার মোড় বদল ঘটিয়েছিল বাংলা অপরাধ সাহিত্যেরও। সে কালের প্রকাশকরা কেন শার্লক হোমস তথা বাংলা গোয়েন্দা কাহিনি ছাপতে এতটা আগ্রহী হয়ে ওঠেন, সেটাও ভাবার। প্রকাশকরা কেন শুরু করলেন গোয়েন্দা-সিরিজ়, আর লেখকরাও কেন সায় দিলেন কিস্তিতে লেখার প্রস্তাবে, ছড়িয়ে থাকা টুকরো টুকরো সূত্র থেকে তার ইঙ্গিত মেলে। গোয়েন্দা কাহিনি নামক অত্যন্ত জনপ্রিয় এই পণ্যটিকে ঘিরে যেমন লেখকে লেখকে দেখা গিয়েছে রেষারেষি, আবার এক শ্রেণির শিক্ষিত মধ্যবিত্তের সমালোচনাতেও বার বার বিদ্ধ হয়েছে সাহিত্যের এই ধারাটি। ‘হোমস এল বাংলায়’ শিরোনামে ১১ নভেম্বর সন্ধে ৬টায় আলোচনা করবেন অরিন্দম দাশগুপ্ত, উত্তরপাড়া জীবনস্মৃতি সভাঘরে।

আনন্দম

মুম্বইয়ের সুপরিচিত নাট্যগোষ্ঠী ‘আনন্দম’ আগামী বছর ৪০ বছরে পদার্পণ করবে। এ পর্যন্ত প্রতিটি অনুষ্ঠান থেকে সংগৃহীত টাকা সংস্থাটি তুলে দিয়েছে দুঃস্থ ক্যানসার রোগাক্রান্তদের সাহায্যার্থে এবং অনাথ বালিকাদের শিক্ষাদানের সহায়তায়। এর আগে মুম্বই, কলকাতা, দিল্লি-সহ দেশের নানা শহরে আনন্দম মঞ্চস্থ করেছে ‘ঠাকুরের আলোয় নটী বিনোদিনী’, ‘বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ’, ‘ঠাকুরবাড়ির আলো আঁধারে’, ‘আলিবাবা’, ‘মুখোশ’ প্রভৃতি বেশ কিছু বাংলা নাটক। ১০ নভেম্বর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির রথীন্দ্র মঞ্চে সন্ধে ৬টায় আনন্দম মঞ্চস্থ করছে নাচে গানে সংলাপে ভরা ব্যতিক্রমী নাটক ‘কথায় গানে রবীন্দ্রনাথ’। পরের মঞ্চায়ন মধুসূদন মঞ্চে ১১ নভেম্বর। মুম্বইয়ের ৪০ জন প্রবাসী অপেশাদার বাঙালি শিল্পী এতে যোগ দিচ্ছেন। নাটকটি রচনা ও পরিচালনায় ৫৭ বছর প্রবাসী লাকি মুখোপাধ্যায়।

শীতলামঙ্গল

আরণ্যক সংস্কৃতির দেবী শীতলাই পুরাণে কৃষিদেবী। ভারতে বসন্ত রোগ যেমন সুপ্রাচীন, বসন্তদেবীর মন্দিরও তাই। বাংলার লোকায়ত সমাজে শীতলাপুজোর সঙ্গে ওতপ্রোত দেবীর প্রশস্তিমূলক গান— যা কালক্রমে শীতলার মহিমাজ্ঞাপক এক বিশেষ আখ্যানধারার জন্ম দিয়েছে: শীতলামঙ্গল। এ পর্যন্ত পাওয়া শীতলামঙ্গল কাব্যগুলির রচনা ও প্রচারকাল মোটামুটি আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধ। দশদিশি পত্রিকা (সম্পা: অতনুশাসন মুখোপাধ্যায়) ‘শীতলামঙ্গল সমগ্র’ সংখ্যা প্রকাশ করছে। বাংলা এবং বহির্বাংলার বিভিন্ন ধরনের শীতলামূর্তির ২১টি রঙিন ছবি সমেত ৭৪৪ পাতার এই সঙ্কলনটিতে শীতলামঙ্গলের উপর একটা সামগ্রিক আলোচনার ক্ষেত্র নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছে। শীতলামঙ্গল নিয়ে দেশেবিদেশে যা কাজ হয়েছে সেই চর্চার পাশাপাশি সঙ্কলনে চারটি অপ্রকাশিত পুঁথি প্রথম প্রকাশিত হল। ১১ নভেম্বর বিকেল চারটেয় ভবানীপুরে স্যর আশুতোষের বাড়ির প্রেক্ষাগৃহে বিশ্বভারতীর অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সুনীতিকুমার পাঠক সংখ্যাটি প্রকাশ করবেন। শীতলামঙ্গল বিষয়ক বক্তৃতা ও আলোচনার পাশাপাশি শোনা যাবে শীতলার পালাগান।

সুধীররঞ্জনের ছবি

নন্দলাল বসুর ছাত্র, ভারতীয় শৈলীর অনুসারী হলেও স্বকীয়তায় উজ্জ্বল চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর সুধীররঞ্জন খাস্তগীর (১৯০৭-১৯৭৪) দেশবিদেশে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বিশ্বভারতী কলাভবনে তাঁর শিল্পশিক্ষার সূচনা, বোম্বাইয়ে পাথরের ভাস্কর্য শেখেন গণপৎ কাশীনাথ মহাত্রের কাছে। ইউরোপ যান ডয়েশ অ্যাকাডেমি মিউনিখের বৃত্তি নিয়ে। দেহরাদূনে দুন স্কুলের সূচনাপর্ব থেকে দু’দশক (১৯৩৬-৫৬) সেখানে শিল্পশিক্ষক ছিলেন, তার পর ১৯৫৬-৬২ সরকারি আমন্ত্রণে লখনউ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফ্টসের ভার নেন। ১৯৫৭-য় পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন। শেষ জীবনে শান্তিনিকেতনে থাকতেন। গ্যালারি ৮৮-তে শুরু হয়েছে তাঁর ছবির প্রদর্শনী, চলবে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত (রবিবার বাদে)। সঙ্গে তারই একটি ছবি।

বিস্মৃত মনীষা

তাঁর জ্ঞান ও কর্ম্ম পড়ে রবীন্দ্রনাথ চিঠি লিখেছিলেন গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে: ‘‘এরূপ ভাষার সারল্য রচনার নিবিড়তা এবং যুক্তি বিচারের বিশদ সুশৃঙ্খলতা আপনার মত পাকা হাতে ছাড়া হইবার জো ছিল না।’’ আবার কবির ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধটি পড়ে গুরুদাস তাঁকে লিখেছিলেন ‘‘বঙ্গভাষায় এমন সকল সাহিত্যের ও বিজ্ঞান দর্শনাদির গ্রন্থ যথেষ্ট পরিমাণে রচিত হওয়া আবশ্যক যাহাতে মনের আশা, জ্ঞানের আকাঙ্ক্ষা মিটে।’’ রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত লিখেছেন ‘‘গুরুদাস সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা অনুশীলনের প্রস্তাব করেন...’’। স্যর গুরুদাস-ই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় উপাচার্য। জাতীয় শিক্ষা পরিষদ থেকে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ... এমত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সূচনা থেকে ক্রমবিকাশে ওতপ্রোত এই জাতীয়তাবাদী মানুষটিকে নিয়ে প্রকাশ পেয়েছে ‘ধ্রুপদী এষণা’ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা: স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (সম্পা: সৌরেন সমাজদার)। উনিশ শতকীয় বঙ্গদেশের জাগরণে বিদ্যাচর্চা-য় তাঁর উজ্জ্বল মনীষা নিয়ে মনোজ্ঞ রচনাদি বিদ্বজ্জনেদের। বিস্মৃত মানুষটিকে প্রাপ্য মর্যাদা দিয়েছেন তাঁরা। ধ্রুপদী এষণাই এই সঙ্গে পুনঃপ্রকাশ করেছে শরৎকুমার রায় রচিত তাঁর গুরুত্বপূর্ণ জীবনী বঙ্গগৌরব স্যর গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (পরি: দে’জ)।

সমান তালে

তিন মাস বয়েস থেকে এলাকার একটি শিশুকে মানুষ করছেন, এখন কন্যা তিন বছরের। কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী রমা পাল হুগলি জিরাটের কোবরো পাঁচপাড়া স্কুলে ছাত্রী থাকাকালীন পুতুল তৈরির শখে খড় বেঁধে দু’ফুটের সরস্বতী মূর্তি তৈরি করেন, যা ওই স্কুলেই পুজো হয়েছিল। কুমোরটুলির শিল্পী সঞ্জীব পালের সঙ্গে বিবাহ সূত্রে আগরপাড়ার শ্বশুরবাড়িতে এসে প্রথমে মেজবৌমা করতেন প্রতিমার সাজের কাজ। তার পরে দীর্ঘ বারো বছর শ্বশুর শান্তিপদ পাল (৮৮) ও স্বামীর সঙ্গে মেতেছেন মৃৎশিল্পের কাজে। বার্ধক্যজনিত কারণে শ্বশুরকে কাজ করতে মানা করা বৌমা, স্বামীর হাত শক্ত করতে সমান তালে কাজ করছেন। নারীশক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যেতে চান দূর, আরও অনেক দূর। মেয়ে ‘খুশি’-কে খুশি করতেই অনেক অসাধ্য সাধন।

কীর্তনশিল্পী

চার বছর বয়সে বাবা সন্তোষকুমার ভট্টাচার্যের কাছে কীর্তন শিক্ষায় হাতেখড়ি। সাতে তাঁর গাওয়া প্রথম কীর্তন ‘যবন হরিদাস’ পালা রেকর্ডবদ্ধ হয়। এর পরে নীলমণি দাস, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, বৃন্দাবন বণিক প্রমুখের কাছে কীর্তন শিক্ষা। পাশাপাশি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে অরুণ ভট্টাচার্য ও শেখর রায়ের কাছে ধ্রুপদ, বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায় অজিত সেন প্রতীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে খেয়াল, আর রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষা সুবীর মাইতি ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ২০০১-এ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। আদি নিবাস বাংলাদেশের যশোরে, তবে বরানগরে জন্ম ও বাসস্থান। এ হেন সুমন ভট্টাচার্য পরবর্তী কালে কীর্তন শিক্ষা আরম্ভ করেন মৃগাঙ্কশেখর চক্রবর্তী মনোরঞ্জন কংসবণিক দ্বিজেন দে সরস্বতী দাস প্রমুখের কাছে। বর্তমানে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গীত ভবনে কীর্তনের অধ্যাপক সুমন বালিগঞ্জ ফাঁড়ির ‘চৌধুরী হাউস’-এ সম্প্রতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মানভঞ্জন পালাকীর্তন শোনালেন। অভিসারিকা বাসকসজ্জিকা উৎকণ্ঠিতা বিপ্রলব্ধা খণ্ডিতা কলহান্তরিতা স্বাধীনভর্তৃকা প্রোষিতভর্তৃকা— এই আট পন্থায় সুস্পষ্ট বাচন অভিনয় বিশ্লেষণ-সহ মানভঞ্জনের পথ জানালেন। সাম্প্রতিক অস্থির পরিস্থিতির বিচারে শিল্পী মনে করেন, “গাছের মতো উদার হওয়া অসাধ্য, তবে তৃণসম হয়ে জীবনযাপন করা বাঞ্ছনীয়, প্রেম ভালবাসাতেই সম্ভব অসাধ্য সাধন। লঘু সঙ্গীতে মত্ত না হয়ে মূলধারায় শিক্ষিত হয়ে সাধনা করলে বহু মানুষের মনোরঞ্জন করা সম্ভব। জয়দেব বিদ্যাপতি চণ্ডীদাস হয়ে শ্রীচৈতন্যের সময়ে কীর্তন অন্য মাত্রায় উন্নীত হয়। আটশো বছরের ইতিহাসে বোঝা যায়, সাধারণ মানুষই কীর্তনকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথ কীর্তন গানের আখর নিয়েছেন, মাতন নেননি। নজরুল কীর্তনের জটিল তালেও গান বেঁধেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE