Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা: জনশিল্পের নতুন দিগন্ত

উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষ থেকেই তাই বাঙালির ঘরে ঘরে পঞ্জিকার চল। ‘‘গোলাপি কাগজে মোড়া পাতলা কাগজে ছাপা নিরীহ চেহারার এই বইটিকে কেউ ঘাটাতে সাহস পেত না। এখনও পায় না।’’

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৮ ২৩:৩৪
Share: Save:

তীর্থস্থানে গঙ্গায় স্নান করলে যে পুণ্য অর্জন হয় এই পঞ্জিকা পাঠ শুনলে একই পুণ্য অর্জন হয়।’’ একটা পাঁজি কিনলে সারা বছর নিশ্চিত পুণ্য অর্জন। এমন সুযোগ কেউ কি ছাড়ে? উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষ থেকেই তাই বাঙালির ঘরে ঘরে পঞ্জিকার চল। ‘‘গোলাপি কাগজে মোড়া পাতলা কাগজে ছাপা নিরীহ চেহারার এই বইটিকে কেউ ঘাটাতে সাহস পেত না। এখনও পায় না।’’ লিখছেন অসিত পাল, তাঁর আদি পঞ্জিকা দর্পণ (সিগনেট প্রেস) বইটিতে। কাটতিতে সংবাদপত্রকেও হারিয়ে দিত পঞ্জিকা। ব্যবসায়ীরা তো এমন সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলেন। পাঁজির পাতায় বিজ্ঞাপন মানে গৃহস্থের ঘরে তার নিশ্চিত প্রবেশ, সারা বছর ধরে নিয়মিত চোখে পড়ার ব্যবস্থা, আর কোথাও একটা বাড়তি বিশ্বাসেরও জায়গা পেয়ে যাওয়া তো বটেই। প্রচুর বিজ্ঞাপন মানে প্রকাশকেরও লক্ষ্মীলাভ। আস্তে আস্তে বিজ্ঞাপন গ্রাস করল পঞ্জিকাকে। পাঁজির বিজ্ঞাপনে উঠে আসে সমসাময়িক সমাজচিত্রের টুকরো টুকরো ঝলক। বিজ্ঞাপনকে জনমোহিনী করতে সঙ্গে এসেছে ছবি। কাঠখোদাই শিল্পীরা অসামান্য দক্ষতায় তুলে এনেছেন নানা পণ্যের দুনিয়াকে। উনিশ শতকের শেষ ভাগ থেকে প্রাক-স্বাধীনতা পর্ব পর্যন্ত এই বিজ্ঞাপনের ছবির সম্ভার খুঁজে এনেছেন অসিত পাল তাঁর বইয়ে। আছে বিজ্ঞাপনের চরিত্র ধরে আলোচনা। আবার অন্য দিকে পঞ্জিকাকে জনপ্রিয় করার জন্য কত কিছুই না করেছেন প্রকাশকেরা। ১৮১৮ সালেই পঞ্জিকায় যুক্ত হয়েছে ছবি। অসিত পাল তাঁর বইয়ে ১৮৪২ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত পঞ্জিকা ঘেঁটে তুলে এনেছেন শ’দুই দিনপঞ্জির ছবি— অর্থাৎ বিশেষ বিশেষ পালাপার্বণের চিত্রায়ণ। বইপত্রের পাশাপাশি কাঠখোদাই ছবির এ এক সমান্তরাল জগৎ— যেখানে শিল্পীদের বিবর্তনের আঁচও কিছুটা পাওয়া সম্ভব। এখানেও ছবি ধরে ধরে আছে বিশ্লেষণী মন্তব্য। সব মিলিয়ে ছ’শো পাতার বইয়ে শ’চারেক ছবিতে ‘পপুলার আর্ট’ বা জনশিল্পের এক নতুন দিগন্ত উদ্ভাসিত। বইটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ১৮ মে সাড়ে ৫টায় স্টারমার্ক, সাউথ সিটি মল-এ। থাকবেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় যোগেন চৌধুরী জহর সরকার, সঞ্চালনায় দেবদত্ত গুপ্ত। সঙ্গের ছবি বই থেকে, ‘মহরম’ পালন, ১৯২৩-২৪ খ্রিস্টাব্দের ‘নববিভাকর পঞ্জিকা’, শিল্পী আর কে পাল।

উদ্‌যাপন

এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন মৃণাল সেন: ‘ঘরের টোপোগ্রাফি এমনভাবে গুলিয়ে দেওয়া হয়েছে যে চরিত্রগুলো কোনো দিশা না পেয়ে একই জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা প্রথম আমি মনের মতো করে ব্যবহার করি একদিন প্রতিদিন-এ।’ (মৃণাল সেনের ফিল্মযাত্রা)। শুধু শিল্পরূপই নয়, বিষয়বস্তুর অভিনবত্বের কথাও আছে তাঁর আত্মস্মৃতিতে: ‘‘আমার ভেতরে যে শত্রু আছে তাকেও ধরবার চেষ্টা করলাম।... সৃষ্টি হল ‘একদিন প্রতিদিন’। এক নতুন অধ্যায় শুরু হল।’’ (তৃতীয় ভুবন)। আশির দশকের শুরুতেই মৃণাল সেনের এই ছবিটি ভারতীয় সিনেমায় যে পর্বান্তরের সূচনা করেছিল, তারই উদ্‌যাপন আজ তাঁর ৯৬তম জন্মদিনে: ‘ট্রিবিউট টু দ্য লিভিং লিজেন্ড’, নন্দন-৩-এ বিকেল ৫টায়। তাতে ছবিটি দেখানোর আগে বলবেন গৌতম ঘোষ মমতাশঙ্কর চিন্ময় গুহ। উদ্যোক্তা ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ। অন্য দিকে আজ তাঁর বাসভবনে তাঁকে নিয়ে তৈরি একটি ক্যালেন্ডার ও পুস্তিকা শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসাবে তাঁর হাতে অর্পণ করবেন অরিন্দম সাহা সরদার, উত্তরপাড়ার জীবনস্মৃতি ও ফোকাস-এর পক্ষে। মৃণালবাবুর আলোকচিত্র ও হিরণ মিত্র-কৃত রেখাচিত্র সংবলিত সুবিন্যস্ত এই পুস্তিকাটিতে লিখেছেন তাঁর পুত্র কুণাল সেন।

যুগের স্মারক

‘মেঘে ঢাকা তারা’-য় নীতার জন্মদিন ছিল জগদ্ধাত্রী পুজোর দিন, সে কথা উঠলেই সুরমা ঘটকের মুখে গর্বের ছায়া জমত, তাঁর জন্মও তো এক জগদ্ধাত্রী পুজোয়, ১৯২৬-এর ১৪ নভেম্বর।— বলছিলেন ঋত্বিক ঘটকের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোত সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, ‘সুরমা ঋত্বিকের সঙ্গী থেকেছেন তাঁর মৃত্যুর পরেও প্রায় দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর, দেশি-বিদেশি ঋত্বিক-গবেষকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতেন সানন্দে। তাঁরই চেষ্টায় গড়ে উঠেছিল ঋত্বিক মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। পরিবারে মৃত্যুশোক, পুত্রের অসুস্থতা সত্ত্বেও অতন্দ্র পাহারায় আগলে রাখতেন ঋত্বিকের গ্রন্থাদি, চিত্রনাট্যের খসড়া, আরও নানা উপকরণ।’ আদতে শিলং-এর মেয়ে সুরমা ভট্টাচার্য একই সঙ্গে ছিলেন সুঅভিনেত্রী ও রাজনৈতিক কর্মী। প্রায় দেড় বছর কারান্তরালে ছিলেন, সেখানে মেয়ে কয়েদিদের নিয়ে তাঁর বই শিলং জেলের ডায়রি। পদ্মা থেকে তিতাস, ঋত্বিক— তাঁর অন্য বই দু’টি ঋত্বিকচর্চার জরুরি সম্পদ। ভারতীয় গণনাট্য সংঘের ‘বিসর্জন’ নাটকে রঘুপতি-র ভূমিকায় তরুণ ঋত্বিক তাঁর চোখে যে কী আলো লাগালেন! আর ঋত্বিকেরও মনে হল ‘দাস ক্যাপিটাল’-মার্কা এই তরুণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া বিষম জরুরি। একদা সাউথ স্কোয়াডের সেই কমবয়সি সুরমা তাঁর অনমনীয় ব্যক্তিত্বের গুণে হয়ে উঠেছিলেন আইপিটিএ-যুগের এক স্মারক। সুবক্তা সুলেখক ও শিক্ষক মানুষটি চলে গেলেন সদ্য। তাঁকে নিয়ে স্মরণসভা ১৭ মে সন্ধে ৬টায় চেতলার অহীন্দ্র মঞ্চে।

ভাষারসিক

‘দেশ’ পত্রিকায় দেড় দশক আগে ‘ভট্টোজি’ ছদ্মনামে ধারাবাহিক ভাবে যখন বাগর্থকৌতুকী (আনন্দ) লিখছিলেন তখন পাঠকের কৌতূহল ছিল একটাই— কে এই ভাষারসিক? গ্রন্থপ্রকাশের পর জানা গেল তিনি জ্যোতিভূষণ চাকী। বহুভাষী পণ্ডিত, শ্রুতকীর্তি বৈয়াকরণ, অভিধানকার, অনুবাদক এবং বিশিষ্ট এই সম্পাদক প্রয়াত হয়েছেন দশ বছর আগে। মোট বইয়ের সংখ্যা বত্রিশ, তবে অগ্রন্থিত রচনা ছড়িয়ে আছে নানা পত্রিকায়। শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে গালিব অনুবাদ বা কৈফি আজমি-র কবিতার অনুবাদ করেছেন, লিখেছেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী বা বাংলা ভাষার ব্যাকরণ। আছে ছোটদের জন্য অনেক বই। তাঁকে নিয়ে সদ্য প্রকাশিত হয়েছে শুভাশিস চক্রবর্তী সম্পাদিত ভাষা-জ্যোতিষ্ক জ্যোতিভূষণ (সুতরাং)। এই শিরোনামেই ‘অহর্নিশ’ পত্রিকা ১৫ মে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জীবনানন্দ সভাঘরে আয়োজন করেছে স্মৃতিতর্পণের। তাঁকে নিয়ে বলবেন কল্যাণ দাশগুপ্ত, সুভাষ ভট্টাচার্য, প্রণব বিশ্বাস, উত্পল ঝা, চিন্ময় গুহ, অনির্বাণ রায়, সর্বানন্দ চৌধুরী প্রমুখ। থাকবেন শঙ্খ ঘোষ।

সংস্কৃতির বৈচিত্র

ভারতের শিল্পসংস্কৃতির বৈচিত্রের মধ্যেই রয়েছে ঐক্য। এই বৈচিত্রের সূত্র ধরেই গোলপার্কের রামকৃষ্ণ মিশন মিউজিয়াম গ্যালারিতে শুরু হয়েছে বার্ষিক প্রদর্শনী ‘ওয়ান্ডার দ্যাট ইজ ইন্ডিয়া’, পরিকল্পনায় শঙ্খ বসু। ঐতিহ্য সংরক্ষণের বার্তা, একই সঙ্গে নিজের শিকড়ের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের পরিচয় ঘটাতেই এই আয়োজন, জানালেন সংগ্রহশালাধ্যক্ষ তত্ত্বাতীতানন্দ মহারাজ। এতে স্বামী বিবেকানন্দ, নিবেদিতা, বেলুড়মঠ বা শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গেই প্রদর্শিত হয়েছে ভারতশিল্পের নানা নিদর্শন। কাঠের নকশা করা দরজা, শিকে, সেরপাই, শোলার কাজ, সন্দেশের ছাঁচ, কাঁথা, পোশাক, মুখোশ, মূর্তি, পট, আধুনিক এবং আদিবাসী বা লোকচিত্রকলা, বয়ন শিল্প, মাদুর-ঝুড়ি ইত্যাকার নান্দনিক উপাদানে সমৃদ্ধ প্রদর্শনীটি। সঙ্গে রয়েছে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের বিবরণ, ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইন এবং পশ্চিমবঙ্গের নানা স্থানের ভ্রমণ বিবরণ। প্রদর্শনী ৩১ মে পর্যন্ত, ১১-৫.৩০, রবি ও ছুটির দিন বাদে।

সঙ্গীতবোধ

শৈশবে নারায়ণগঞ্জে থাকতে দাদুর গলায় মালসি গান শুনে সুরের জগতে প্রবেশ। তার পর টিফিনের পয়সা জমিয়ে এস্রাজ কেনা, সেই এস্রাজে ‘তুমি যে গিয়াছ বকুল বিছানো পথে’র সুর তুলে নেওয়া। এ ভাবেই একে একে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতগুণীদের সান্নিধ্যে আসা। শিখেছেন বাউল-বৈরাগীর কাছেও, সংগ্রহ করেছেন রকমারি বাংলা গান। কিন্তু দেশভাগের ধাক্কায় কলকাতায় চলে আসতে হল দিলীপকুমার চৌধুরীকে, ঠাঁই হল দক্ষিণ শহরতলির এক উদ্বাস্তু পল্লিতে। বাঁশের বেড়ার ঘরে বসে তানপুরা বেঁধে সুর করতেন, এক গভীর ঈশ্বর-বিশ্বাস থেকে উঠে আসত তাঁর এই সুরের যাপন। পল্লির ছেলেমেয়েদের নিয়ে গড়ে তুললেন শখের দল— সর্বানন্দ সংগীতসমাজ। সেই সমাজের পক্ষেই তাঁর স্মরণে স্মারক সঙ্গীত-বক্তৃতামালার উদ্বোধন ১৯ মে সন্ধে সাড়ে ৫টায় গোলপার্কে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের শিবানন্দ প্রেক্ষাগৃহে। সূচনা করবেন শঙ্খ ঘোষ, সূচনা-ভাষণে স্বামী বলভদ্রানন্দ। প্রথম বক্তৃতাটি দেবেন সৌরীন ভট্টাচার্য: ‘সঙ্গীতবোধ-শিক্ষা’। আমাদের দৈনন্দিন যাপনে কী ভাবে উন্মেষ হয় সঙ্গীতবোধের, তা নিয়েই বলবেন সৌরীনবাবু।

নতুন ইতিহাস

১৯৭১-এ স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, বিজয়— সব কিছুর অন্তরালে যে গণহত্যা, তার কথা রাজনৈতিক ভাবে স্বাধীন মানুষ যতটা জানেন, তত বলেন না। সবটা জানেনও কি? বলছিলেন মুনতাসীর মামুন। বাংলাদেশের ‘বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক’, ইতিহাসবিদ-গবেষক গত কয়েক বছর ধরেই কাজ করছেন ১৯৭১-এ বাংলাদেশে গণহত্যার ‘নতুন হিসাব’ নিয়ে। খুলনায় তৈরি হয়েছে ১৯৭১ গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ, জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের এক-একটি জেলা ধরে এক দল নবীন-প্রবীণ অক্লান্ত নিষ্ঠায় গণহত্যার ইতিহাস সন্ধান করে চলেছেন। মুনতাসীর বলছিলেন, শুধু দশটি জেলায় গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্রের প্রাথমিক জরিপে যে তথ্য উঠে আসছে তা থেকে পরিষ্কার, এত দিন প্রচারিত গণহত্যার সংখ্যা আর ‘ত্রিশ লক্ষ’তে থেমে থাকবে না। কলকাতার বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা ওঁকে দিলেন সেরা গবেষকের ‘বি এম বড়ুয়া সম্মান’, সে উপলক্ষেই সম্প্রতি ছুঁয়ে গেলেন এ শহর।

চালিকাশক্তি

নব্বই পার হওয়া এক জন মানুষ, দীর্ঘ অসুস্থতায় যাঁর দৃষ্টি ক্ষীণ হয়েছিল, রহিত হয়েছিল শ্রবণশক্তি, চলাচলের ক্ষমতা সীমিত হয়েছিল বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যেই— তাঁর মৃত্যুতেও একটা শহর, একটা রাজ্য, এবং বৃহত্তর অর্থে বাঙালি জাতি কতখানি দরিদ্র হয়ে যেতে পারে, অশোক মিত্র তার নজির। প্রশিক্ষণে অর্থনীতিবিদ, জীবনচর্যায় আনখশির বামপন্থী অশোক মিত্রকে বিশিষ্ট করেছিল তাঁর বহুধাবিস্তৃত আগ্রহ আর বাংলা-ইংরেজিতে সমান দখল। সমমনস্ক সমাজদর্শন ও অর্থনীতি-রাজনীতির চর্চা অব্যাহত রাখতে প্রবীণ বয়সে সম্পাদনা করতে আরম্ভ করেছিলেন ‘আরেক রকম’ নামক পাক্ষিক পত্রিকার। শেষ দিন অবধি পত্রিকাটির চালিকাশক্তি ছিলেন তিনিই। আরেক রকম ও সমাজচর্চা ট্রাস্টের আয়োজনে ১৫ মে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে অশোক মিত্রের স্মরণসভা। কিছু কথা ও রবীন্দ্রগানের মধ্যে দিয়ে স্মরণ করা হবে তাঁকে।

শিল্পজীবন

‘আমার বাবু-বিবি ছবির ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি সাহায্য পেয়েছি যামিনী রায়ের ছবি আর কালীঘাটের পট থেকে।’ এক সাক্ষাৎকারে এ-মন্তব্যের পরে লালুপ্রসাদ সাউ তা ব্যাখ্যাও করেছেন: ‘কালীঘাট পটের যে ব্যাপারটা আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছিল, তা হল, ওইসব ছবির সিম্পলিসিটি। ওই সিম্পলিসিটি একমাত্র গগনবাবুর লিথোগ্রাফে পাওয়া যায়। এমনকী অবনীন্দ্রনাথের মধ্যেও পাওয়া যায়।’ শিল্পীর জন্ম বীরভূমের সিউড়িতে, ওঁদের বাড়ির পাশেই ছিল মালাকারদের পাড়া। ওখানে মালাকাররা দুর্গা ও কালীপ্রতিমা, চালচিত্র, কলাবৌ এ সব বানাতেন। ওঁদের করা কলাবৌ শিল্পীকে সব থেকে আকর্ষণ করত। তিন বছর আগে নেওয়া সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে দেবভাষা থেকে গ্রন্থাকারে, সাক্ষাৎকার/ লালুপ্রসাদ সাউ, দেবভাষা বই ও শিল্পের নতুন আবাসে, ‘নববর্ষের চিত্র প্রদর্শনী’র শুভারম্ভে। প্রদর্শনীর শেষ দিন, ২০ মে সন্ধে ৬টায় অশীতিপর শিল্পী লালুপ্রসাদ সাউ আলাপচারিতায় বসবেন শিল্পরসিকদের সঙ্গে, তাঁর শিল্পজীবন ও শিল্পচিন্তার আলোহাওয়া নিয়ে। অনুষ্ঠানটির শিরোনাম: ‘শিল্পী এবং শিল্পরসিক’।

আনন্দময়

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরির পরই ভাবনাটা মাথায় আসে শান্তনু বসুর, চিত্রনাট্যটির কথা খেয়াল করিয়ে দিয়ে তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এমন কোনও বইও তো নেই যাতে সংক্ষেপে, অথচ গুরুত্বপূর্ণ কোনও কিছু বাদ না দিয়ে, সহজে জানা যাবে তাঁর জীবন।’ চিত্রনাট্যের জন্যে বিপুল তথ্যাদি চয়ন করাই ছিল শান্তনুর, ফলে কাজে লেগে পড়লেন, তৈরি হয়ে গেল রবীন্দ্রনাথ/ জীবন ও কর্মকাণ্ড (অভিযান)। ‘‘এক দিকে রবীন্দ্রনাথের বিপুল সৃষ্টির ভান্ডার, পাশাপাশি তাঁর বৈচিত্রময় ব্যক্তিজীবন... সেই বটবৃক্ষের একটি ‘বনসাই’ প্রতিবিম্ব তৈরি করাই উদ্দেশ্য ছিল’’, জানালেন শান্তনু। এ-বইয়ের শুরুতেই সৌরীন ভট্টাচার্য লিখেছেন, ‘‘রবীন্দ্রজীবনের ছোটো জীবনী দরকার... ছোটো কিন্তু অসম্পূর্ণ নয়।... কল্পনার জোরে এই ছোটো রবীন্দ্রজীবনী থেকে পাঠক বড়ো রবীন্দ্রজীবনের স্বাদ পাবেন...।’’ গানের ভিতর দিয়েই রবীন্দ্রনাথের প্রতি তীব্র আগ্রহ, সম্পৃক্তি শান্তনুর। ইতিমধ্যেই রবীন্দ্রগান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজও করেছেন, তরুণ মজুমদারের ‘আলো’, ‘ভালবাসার অনেক নাম’, ‘চাঁদের বাড়ি’তে সহকারী সঙ্গীত পরিচালনার পর হালফিল ‘ভালবাসার বাড়ি’তে সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তিনি। ছেলেবেলা থেকেই বাড়ির পরিবেশ সঙ্গীতময়, তালিম ছাড়াই বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে ও সে সবের সঙ্গে গাইতে পারতেন শান্তনু, অনেক পরে প্রথাগত তালিম নিয়েছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েও তা পেশা হিসাবে নেননি, সঙ্গীত— এই আনন্দময় শিল্পই আজ তাঁর নেশা ও পেশা দুই-ই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE