Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা: ধর্মীয় ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে

নিকটবর্তী গড় মান্দারনের ইদগায় ইদের নমাজে এক বার উপস্থিত হন শ্রীরামকৃষ্ণ। সেখানকার পিরের আস্তানায় তিনি অনেক সময়ই যেতেন।

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩০
Share: Save:

শৈশব থেকেই ইসলামি সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগ ঘটেছিল শ্রীরামকৃষ্ণের। তাঁর মামাবাড়ি ছিল আরামবাগের কাছে সারাটি-মায়াপুরে, মায়ের সঙ্গে মাঝেমাঝেই যেতেন সেখানে। সারাটির পিরের আস্তানায় তিনি এক বার ভাবাপ্লুত হয়ে গড়াগড়ি দিয়েছিলেন। কামারপুকুরের কাছেই আনুড় গ্রামের নাজিরপাড়ার মসজিদ ও ইদগায় পরমহংসদেব বহু বার গিয়েছেন, সেখানকার মতোয়ালি কাজি আবদুল গনির সঙ্গে তাঁর বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল। নিকটবর্তী গড় মান্দারনের ইদগায় ইদের নমাজে এক বার উপস্থিত হন শ্রীরামকৃষ্ণ। সেখানকার পিরের আস্তানায় তিনি অনেক সময়ই যেতেন। আর দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কাছেই ছিল গাজিপিরের স্থান, শ্রীরামকৃষ্ণ প্রতি দিন সকালে আবার কখনও বিকেলে গাজিবাবার স্থানে সেলাম জানিয়ে আসতেন বলে লিখেছেন প্রত্যক্ষদর্শী শশিভূষণ সামন্ত। কাছেই ত্রৈলোক্যনাথ বিশ্বাস রোডের মসজিদের সঙ্গে তাঁর বহু স্মৃতি জড়িত— সেখানে তিনি নমাজও পড়েছেন। আজ অনাদরে হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের প্রতীক এই মসজিদ বিলুপ্তপ্রায়। আর সুফিসাধক সৈয়দ ওয়াজ়েদ আলি খান ১৮৬৬ সালে দক্ষিণেশ্বরে এলে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর কাছে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন, তিন দিন এই সাধনা করেন। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের গ্যাঁড়াতলার মসজিদে তাঁর পরিচয় হয় মৌলানা মির মোশারফ হোসেনের সঙ্গে, পরে সেই ফকির নিয়মিত দক্ষিণেশ্বরে আসতেন। শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন, ‘‘বাউল সিদ্ধ হলে সাঁই হয়, তখন সব অভেদ’’ (কথামৃত)। ধর্মীয় অভেদতত্ত্বই তাঁর সাধনার মূল সুর। এ সব প্রসঙ্গ বহু আলোচিত, কিন্তু তড়িৎকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শ্রীরামকৃষ্ণ ও ইসলাম বইয়ে বিষয়টিকে সমগ্রতায় উপস্থাপন করেছেন। পরে শ্রীমা সারদা ও স্বামী বিবেকানন্দও কী ভাবে এই আদর্শকে পুষ্ট করেছেন, মুসলমানরাই বা কী চোখে শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখেছেন, আলোচিত হয়েছে সে সব প্রসঙ্গও। প্রকাশনা–প্রতিষ্ঠান সূত্রধরের উদ্যোগে ২ মার্চ বিকেল ৪:৪৫-এ রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কের বিবেকানন্দ হলে শ্রীরামকৃষ্ণের ১৮৪তম আবির্ভাব-বর্ষ স্মরণে আয়োজিত ‘মনন-অনুধ্যানে শ্রীরামকৃষ্ণ’ অনুষ্ঠানে তড়িৎবাবুর বইটি ছাড়াও প্রকাশিত হবে রবীন্দ্রনাথের রামকৃষ্ণ-স্মরণ, কুমুদবন্ধু সেনের শ্রীরামকৃষ্ণ ও রসিক মেথর, প্রসঙ্গ: কথামৃত (প্রাককথন প্রব্রাজিকা ভাস্বরপ্রাণা), সবুজকলি সেনের শ্রীরামকৃষ্ণ: নারীবাদী পরিপ্রেক্ষিতে, স্বামী বিমলাত্মানন্দের স্বামী গম্ভীরানন্দের লিখন-ভুবন এবং শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মশতবর্ষে (১৯৩৬) কালিদাস নাগ প্রদত্ত একটি দুর্লভ বক্তৃতার সিডি। থাকবেন স্বামী সুবীরানন্দ, স্বামী বলভদ্রানন্দ, স্বামী বিমলাত্মানন্দ, স্বামী দিব্যানন্দ ও স্বামী সুপর্ণানন্দ।

ইতিহাসবিদ

জন্ম ১৯৩২ সালে রাজশাহিতে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র রমাকান্ত চক্রবর্তী কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে চার দশকেরও বেশি ইতিহাসের অধ্যাপনা করেছেন। নানা বিষয়ে আগ্রহ ও গভীর অধ্যয়ন তাঁকে গবেষণার জগতে বিশিষ্ট মর্যাদা দিয়েছে। এক দিকে অসামান্য যত্নে সম্পাদনা করেছেন বিদ্যাসাগর কলেজ শতবর্ষ স্মরণিকা, অন্য দিকে লিখেছেন নিধুবাবু ও তাঁর টপ্পা। তাঁর বড় কাজ বৈষ্ণবিজ়ম ইন বেঙ্গল: ১৪৮৬-১৯০০ এবং পরে বঙ্গে বৈষ্ণবধর্ম— যার জন্য পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। তাঁর বাংলা প্রবন্ধগুলি সঙ্কলিত হয়েছে বাঙালির ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতি গ্রন্থে। সম্পাদনা করেছেন নানা গ্রন্থ। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘ কাল, সম্পাদক সভাপতি ও ন্যাসরক্ষক সমিতির সদস্য হিসেবে। এশিয়াটিক সোসাইটিতেও সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। ২ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হলেন এই ইতিহাসবিদ। স্মরণানুষ্ঠান হল দুই প্রতিষ্ঠানেই।

মৈত্রেয়ীদি

চলে গেলেন অধ্যাপিকা মৈত্রেয়ী সরকার (জন্ম ১৯৩৮)। বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন, তবে অবসর নেওয়ার আগে দীর্ঘ দুই দশক কলকাতার সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজের মতো একটি আদ্যন্ত ইংরেজি মাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মিশনারি আবহে নিজেকে উজাড় করে বাংলা পড়িয়েছেন ‘মৈত্রেয়ীদি’। না, তাঁর সময়ে বাংলায় অনার্স পড়ানো হত না সেন্ট জ়েভিয়ার্সে। কিন্তু তাতে কী? ‘পাস কোর্স’-এ যে মুষ্টিমেয় ছাত্রছাত্রী প্রতি বছর স্বেচ্ছায় বাংলা নিত, তাদের বাকি জীবনের জন্য অমূল্য অভিজ্ঞতার রসদ হয়ে থাকত তাঁর ক্লাস। তাঁরই প্রেরণায় সেখানে গড়ে উঠেছিল ‘বঙ্গ সাহিত্য সমিতি’। সমিতির উদ্যোগে কলেজে সাহিত্য-সভায় এসেছেন সুনীল-শীর্ষেন্দু-মহাশ্বেতা, প্রকাশিত হয়েছে হাতে-লেখা দেওয়াল পত্রিকা, কখনও বা মুদ্রিত সংখ্যা ‘অনাময়’। নিজে বিজ্ঞান ছেড়ে বাংলা পড়তে এসেছিলেন প্রেসিডেন্সিতে, এম এ ক্লাসের সহপাঠী পবিত্র সরকারকেই পরে জীবনসঙ্গী করেন। জীবন কাটালেন বাংলা ভাষার চর্চাতেই।

নাটকের বইমেলা

এখন কলকাতার নানা প্রান্তে বই ও পত্রপত্রিকার মেলা বসে হরবখত। কিন্তু শুধু নাটকের বই নিয়ে মেলা? তাও আবার নাট্যদলের উদ্যোগে? গত বছর বিশ্ব নাট্য দিবসে ছোট আকারে শুরু হয়েছিল। এ বার চার দশক পার করা ‘প্রতিকৃতি’ নাট্যদল গিরিশচন্দ্র ঘোষের জন্মদিনকে সামনে রেখে ২৬-২৮ ফেব্রুয়ারি ‘নাটকের বইমেলা’ (রোজ ৪টে-সাড়ে ৮টা) আয়োজন করেছে হাজরা মোড়ের সুজাতা সদন ও সংলগ্ন স্কুল প্রাঙ্গণে। নাটকের বই, পত্রপত্রিকা, নাট্যপ্রযোজনা ও নাটকের গানের সিডি ডিভিডি ছাড়াও থাকবে গিরিশচন্দ্রের উপর একটি প্রদর্শনী। শোনা যাবে নাট্যগীতি, নাটক নিয়ে আলোচনা। যোগ দিচ্ছে কলকাতা ও জেলার ছোটবড় নাট্যদল, নাটক ও নাট্যপত্র প্রকাশনা সংস্থা। উদ্বোধনে মনোজ মিত্র।

দুই শহর

জুলাই ১৯২৭। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে রবীন্দ্রনাথ পৌঁছলেন সিঙ্গাপুর। স্থানীয় ভারতীয়রা উচ্ছ্বসিত। ষোলো বছর পর সেখানে আর এক বাঙালিকে ঘিরে মাত্রাছাড়া উন্মাদনা। ৫ জুলাই ১৯৪৩, আইএনএ-র সেনাদের সম্ভাষণ করলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র। সে বছরেই ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরের ক্যাথে সিনেমায় নেতাজি ঘোষণা করলেন আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠার কথা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠা ১৮১৯-এ। মালয়ে কোম্পানির প্রথম ঘাঁটি ছিল পেনাং (১৭৮৬)। অঞ্চলটির স্থানীয় নাম পুলাউ পিনাং, আর কোম্পানি সেখানে অপরাধীদের নির্বাসনে পাঠাত বলে বাংলায় দ্বীপান্তরের চালু নামই হয়ে গেল ‘পুলি পোলাও’! সিঙ্গাপুর, মলাক্কা আর পেনাংকে নিয়ে ১৮২৬-এ তৈরি হল প্রেসিডেন্সি অব স্ট্রেটস সেটলমেন্টস, রাজধানী পেনাং। ১৮৩২-এ রাজধানী হল সিঙ্গাপুর। ১৮৬৭-তে আলাদা কলোনির মর্যাদা পেল স্ট্রেটস। ১৮৪০-১৯৪০ পর্বে অন্তত ৪০ লক্ষ মানুষ ভারত থেকে মালয়ে গিয়েছেন। এ সব নিয়েই ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৬টায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ‘আ টেল অব টু সিটিজ়: সিঙ্গাপুর অ্যান্ড ক্যালকাটা, পাস্ট অ্যান্ড প্রেজ়েন্ট’ শীর্ষকে বলবেন সিঙ্গাপুরের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ তান তাই ইয়ং। সভাপতিত্বে শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়।

পঁচিশ পেরিয়ে

ঋত প্রকাশন-এর আয়োজনে ‘একক নিবেদনে মৌসুমী ভৌমিক’। ‘‘আমি এককে বিশ্বাস করি না, সমষ্টিতে বিশ্বাস করি।’’— মৌসুমীর সঙ্গে অবশ্য সে দিন সন্ধ্যার সঙ্গীতানুষ্ঠানে থাকবেন আরও দুই শিল্পী... লোকগানের সাত্যকি বন্দ্যোপাধ্যায়, আর হরপ্রীত, গান করেন বুলে শাহ ও কবীর-এর কথা নিয়ে। ‘‘এঁরা দু’জনেই মৌসুমী ভৌমিকের গানের সঙ্গে নিজেদের মিলিয়ে এক আশ্চর্য মায়াবী আবহ তৈরি করেন’’: আয়োজকদের তরফে সুমিতা সামন্ত। গান গাওয়ার পাশাপাশি গান নিয়ে নিরন্তর গবেষণায় রত মৌসুমী, তাতে এসে মিশেছে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য-মাটির গান— সবই। একই সঙ্গে গ্রন্থ-সম্পাদনা, অনুবাদ, মানবাধিকারের সমর্থনে ব্যাপৃত তাঁর বারোমাস্যা। গড়ে তুলেছেন ‘ট্র্যাভেলিং আর্কাইভ’-এর মতো দুর্লভ সংগ্রহশালা। মৌসুমীর কথায়, ‘‘দিনানুদিনের বেঁচে-থাকা, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস আর গান গাওয়া আমার কাছে সমার্থক।’’ প্রথম অ্যালবাম প্রকাশের পঁচিশ বছর পেরিয়ে তাঁর এই অনুষ্ঠান ২৮ ফেব্রুয়ারি জ্ঞানমঞ্চে সন্ধে সাড়ে ৬টায়।

সকলের বিজ্ঞান

২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিজ্ঞান দিবস। সেই উপলক্ষে কলকাতার সিটি কলেজে আয়োজিত হয়েছে দু’দিনের জাতীয় আলোচনাচক্র। বিষয়— ভারতের ভবিষ্যৎ: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। যৌথ আয়োজক ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস অ্যাসোসিয়েশনের কলকাতা শাখা। শুধু বিজ্ঞান কংগ্রেস আয়োজন করা নয়, তারা প্রকাশ করে এভরিম্যান’স সায়েন্স পত্রিকাও। কিন্তু বিজ্ঞান কতটা ‘সকলের বিজ্ঞান’ হয়ে উঠতে পেরেছে? বিজ্ঞানকে সমাজমুখী আর সমাজকে বিজ্ঞানমুখী করতে প্রয়াসী বিজ্ঞান আন্দোলন। সে কাজ কী ভাবে কতটা এগিয়েছে তা বিচার করতে চেয়েছে সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ের বই বিজ্ঞান যখন আন্দোলন/ ইতিহাসের পথ বেয়ে (সেতু)। রামন এফেক্ট আবিষ্কারের ঘোষণা (১৯২৮) স্মরণে ২৮ ফেব্রুয়ারি যথারীতি এক দিনের জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞান গবেষণাগারে ঢুকতে পারবেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সারা বছর মনের দরজা খুলে রাখার জন্য জরুরি যে বিজ্ঞানচেতনা, তার প্রসার কতটুকু ঘটেছে?

আন্তর্জাতিক

শহরে প্রথম বসন্তেই সুবাতাস... কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফি ফেস্টিভ্যাল। সারা দুনিয়ার সেরা স্থিরচিত্রকারদের ছবি দিয়ে সাজানো এ-উৎসবে থাকবে ৪০টি দেশের ২৫০ জনের তোলা দেড় হাজার ছবি। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হ্যারিংটন স্ট্রিট আর্ট সেন্টার, আইসিসিআর, নন্দন, তথ্যকেন্দ্র ইত্যাদিতে চলবে প্রদর্শনী, ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ মার্চ, ২৭-এ সূচনা ভারতীয় সংগ্রহশালায়। এই আন্তর্জাতিকতার ভিতরেই বিভিন্ন ছবিতে প্রকাশিত হবে বঙ্গজীবনের সাংস্কৃতিক অবদান, তাতে রঘু রাইয়ের তোলা কলকাতার দুর্গাপুজোর ছবি। পাশাপাশি থাকছে সত্যজিৎ-সহ যোগেন চৌধুরী পরেশ মাইতি প্রমুখ চিত্রকরের তোলা ছবি, সুদীপ্তা সেনগুপ্তের তোলা অ্যান্টার্কটিকা-র ছবি। একই ছাদের তলায় ঠাঁই পাচ্ছে ভারতের সব ধরনের ছবি, জানালেন উৎসব অধিকর্তা কৌন্তেয় সিংহ। (সঙ্গের ছবি: অরুণ গঙ্গোপাধ্যায়)। অন্য দিকে গগনেন্দ্র শিল্প প্রদর্শশালায় ২৪-২৭ ফেব্রুয়ারি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবির প্রদর্শনী: কাবুল— আ ভিসুয়াল ল্যান্ডস্কেপ। কর্মসূত্রে কাবুলে থাকাকালীন প্রণবের তোলা ছবিগুলিতে নকশিকাঁথার মতো উঠে এসেছে সেখানকার দৈনন্দিন জনজীবন, স্থাপত্যের দুর্লভ বৈচিত্র, সজীব সংস্কৃতির ধারা।

নিজস্ব গায়কি

ফরিদপুরে জন্ম, স্বাধীনতার পর এই বাংলায়। কতই বা বয়স তখন, বছর বারো! ভর্তি হলেন বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে, পাশ করেই গান শেখা শুরু। প্রথমে অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে, তার পর যোগাযোগ জর্জ বিশ্বাসের সঙ্গে। ১৯৫০ থেকে ১৯৮০, অর্থাৎ শেষ দিন পর্যন্ত জর্জদার কাছেই গানের তরি বাওয়া। সেখানেই সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে পরিচয় এবং তাঁরও স্নেহভাজন হয়ে ওঠা। ‘‘প্রত্যেক রেকর্ডিং-এ সুচিত্রাদি থাকতেনই’’, জানালেন অর্ঘ্য সেন। নিজস্ব গায়কিতে, মধুর ওজস্বিতায় কখনও তিনি শ্যামা’র বজ্রসেন, আবার কখনও চিত্রাঙ্গদার অর্জুন। শম্ভু মিত্রের ‘রক্তকরবী’, ‘চার অধ্যায়’ ইত্যাদিতে সঙ্গীতের দায়িত্বে ছিলেন। কাজ করেছেন বহুরূপীতে কুমার রায়ের সঙ্গে, পঞ্চম বৈদিকেও। আজও রবীন্দ্রগান শিখিয়ে চলেছেন। তাঁর দুই তরুণ ছাত্র উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মানস পালের উদ্যোগে প্রায় এক যুগ পর একক অনুষ্ঠানে অর্ঘ্য সেন। কথার সূত্রে গানের মালায়, ‘মধুস্বরা’র উদ্যোগে ১ মার্চ ৫:৪৫-এ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতী সভাগৃহে।

মহাবিশ্বের রহস্য

ছো‌ট্ট পোকাদের সঙ্গে শুরু যাত্রা, গাছের ভিতরের অজানা জগতের খোঁজে। মাটির নীচের জল কত না উঁচুতে পৌঁছে যাচ্ছে, পাপড়ি মেলে ফুল ডাকছে প্রজাপতিকে। এই সবই হচ্ছে মাথার উপর ‘ডোম’-এ, ত্রিমাত্রিক ছবিতে। হাত বাড়ালেই যেন ছোঁয়া যায়, এমন করে জানাবোঝা বিজ্ঞানের কথা। ১৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের প্রথম ‘ফুল ডোম থ্রিডি ডিজিট্যাল থিয়েটার’-এর উদ্বোধন হল সায়েন্স সিটিতে। ‘লাইফ অব ট্রিজ়’ অ্যানিমেশন ছবিটি এমনই জলজ্যান্ত, যে বাজের কড়কড় আর বৃষ্টির ঝমঝম শুরু হতেই কচিকাঁচাদের মধ্যে গোলমাল উঠল, ‘‘পালা, পালা।’’ চলছে ‘গ্রহাণুর জীবন’ নামে একটি ছবিও। প্রযুক্তি দিয়ে প্রাণ আর মহাবিশ্বের অদেখা রহস্যকে একান্ত পরিচিত করে তোলার জন্য কুড়ি কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হল এই নতুন ‘ডোম’। স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে চাহিদা বাড়ছে ইতিমধ্যেই, জানালেন ডিরেক্টর শুভব্রত চৌধুরী।

পুতুলনাচ

আজ থেকে কুড়ি বছর আগে ইরানে দেখেছি, পাপেট্রি নিয়ে রীতিমতো পড়াশোনার কোর্স আছে। আর আমরা পুতুলনাচকে ছেলে-ভুলানো শিল্পের বেশি কিছু ভাবলাম না, অথচ কী অনায়াস সংযোগসাধনের ক্ষমতা এই সহজ সুন্দর মাধ্যমটার!’’ বলছিলেন সুদীপ গুপ্ত, পাপেট্রিতে ২০১৭-র সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার জয়ী। ১৯৮৩ সালে ‘ক্যালকাটা পাপেট থিয়েটার’-এ পদ্মশ্রী সুরেশ দত্তের কাছে পুতুলনাচে হাতেখড়ি সুদীপের। পাপেট্রি নিয়ে বিদেশি বইপত্র পড়ে‌ পুতুলনাচের প্রতি ভালবাসা ঘন হয়েছিল। ১৯৯০-এ দিল্লিতে পুতুলনাচের আন্তর্জাতিক উৎসবে রাশিয়া, বুলগেরিয়া, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া-সহ ২৮টা দেশের শিল্পীদের কাজ চোখ খুলে দিল। সে বছরেই শুরু সুদীপের ‘ডলস থিয়েটার’। তৈরি হল ‘টেমিং অব দ্য ওয়াইল্ড’, ১৫০০ শো পেরিয়েও জয়যাত্রা অব্যাহত যে পুতুল-নাটকের। ’৯৮-এ দিল্লির ‘কনটেম্পোরারি পাপেট ফেস্টিভ্যাল’-এ পদ্মশ্রী দাদি পদমজির মতো শিল্পীর পাশে আদৃত হয় সুদীপের কাজ। টুনটুনির গল্প থেকে করেছেন ‘নাক কাটা রাজা’, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা নিয়ে অ্যাডাল্ট পাপেট থিয়েটার ‘আগুনের পরশমণি’, মনোজ মিত্রের ‘সাহেববাগানের সুন্দরী’। গড়েছেন ‘পাপেট মঞ্চ’; ডলস থিয়েটার প্রতি বছর ‘সূত্রধার সম্মান’ দেয় এই শিল্পের কোনও মুখকে। স্ত্রী শ্রীপর্ণাও পাপেট্রিতে ২০১৪-র অকাদেমি যুব পুরস্কার জয়ী। দু’জনে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন পুতুলনাচের ইতিকথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE