Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা: কলকাতার পথ-বৃত্তান্ত

ইংরেজরা নাম দিয়েছিল ‘পিলগ্রিম রোড’। শুধু তীর্থযাত্রী কেন, যে ব্যবসার টানে চার্নকের আগমন, তার উপকরণ অভ্যন্তরীণ নদীপথ বেয়ে পৌঁছত শিয়ালদহে— সেখান থেকে আজকের বৌবাজার হয়ে লালবাজার পেরিয়ে সোজা চলে আসত হুগলি নদীর তীরে।

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০৬
Share: Save:

সে কালের চিৎপুর রোড তথা আজকের রবীন্দ্র সরণি। উত্তর সীমানার বাগবাজার খালধার থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন নামে নামাঙ্কিত এই পথ চৌরঙ্গি হয়ে কালীঘাট ছুঁয়ে চলে গিয়েছে শহরের দক্ষিণ প্রান্তের দিকে। জোব চার্নকের সুতানুটিতে পদার্পণের অনেক আগেই তীর্থযাত্রীদের পায়ে পায়ে এ পথের সৃষ্টি। ইংরেজরা নাম দিয়েছিল ‘পিলগ্রিম রোড’। শুধু তীর্থযাত্রী কেন, যে ব্যবসার টানে চার্নকের আগমন, তার উপকরণ অভ্যন্তরীণ নদীপথ বেয়ে পৌঁছত শিয়ালদহে— সেখান থেকে আজকের বৌবাজার হয়ে লালবাজার পেরিয়ে সোজা চলে আসত হুগলি নদীর তীরে। অর্থাৎ পুব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত এও আর এক প্রাক-ঔপনিবেশিক পথ। সিরাজের কলকাতা আক্রমণের আগে এমন রাস্তা আরও ছিল, যার হদিস লুকিয়ে আছে কোম্পানি আমলের নানা নথিতে। এ দিকে ১৭৪২ সালে মরাঠা বর্গিরা বাংলা আক্রমণ করে। কলকাতা বাঁচাতে কোম্পানি ঠিক করল, উত্তরে বাগবাজার থেকে দক্ষিণে কুলিবাজার (হেস্টিংস) পর্যন্ত সাত মাইল জুড়ে শহরটাকে গোল করে ঘিরে একটা পরিখা কাটা হবে। এন্টালি বাজার পর্যন্ত কাটতে কাটতেই বর্গি হাঙ্গামা স্তিমিত হয়ে আসায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দক্ষিণেও কিছুটা অংশ কাটা হয়েছিল। পরে এই ‘মরাঠা ডিচ’ বুজিয়ে তৈরি হয় সার্কুলার রোড। চিৎপুর রোড থেকে সার্কুলার রোড পর্যন্ত বিস্তৃত ভূভাগই আদি কলকাতা। ১৯৯৬ সালে এই আদি কলকাতার পথগুলি নিয়ে অজিতকুমার বসু (১৯২৯-২০০৮) লিখেছিলেন কলিকাতার রাজপথ/ সমাজে ও সংস্কৃতিতে (আনন্দ)। পুরসভার বহু দুষ্প্রাপ্য নথি ব্যবহারের সঙ্গে ক্ষেত্রসমীক্ষা ছিল তাঁর কাজের অবলম্বন। দ্বিতীয় একটি খণ্ডের পরিকল্পনা করলেও পূর্ণাঙ্গ পাণ্ডুলিপি তৈরি করে যেতে পারেননি তিনি। তাঁর পরিকল্পনার ভিত্তিতে সেই পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা করে গ্রন্থরূপ দিয়েছেন শ্রীময়ী গুহ ঠাকুরতা ও সোমদত্তা চক্রবর্তী (কলিকাতার রাজপথ/ সমাজে ও সংস্কৃতিতে, দ্বিতীয় খণ্ড। আনন্দ)। এই বইয়ে চিৎপুর রোড ও সার্কুলার রোড তো আছেই, সঙ্গে পাওয়া যাবে বিডন স্ট্রিট, কর্নওয়ালিস স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, বৌবাজার স্ট্রিট, ওয়েলিংটন স্ট্রিট, নিমতলা ঘাট স্ট্রিট, লালবাজার স্ট্রিট, ডালহৌসি স্কোয়ার ও বাগবাজারের কথা।

শতবার্ষিকী

‘‘আশ্চর্য এখানকার মানুষ।... এত লড়াই সত্ত্বেও ভারি সুন্দর শহর। এ পর্যন্ত কারো মুখ ভার দেখলাম না। সবাই হাসিমুখে।... না এলে সত্যিই এ কালের সবচেয়ে বড় তীর্থ অদেখা থেকে যেত।’’ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের চিঠি, ২১ মার্চ ১৯৭১-এ লিখছেন গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, হ্যানয় থেকে। (সুভাষ মুখোপাধ্যায়— চিঠির দূরত্বে। সম্পা: অনুপ বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুপমা প্রকাশনী)। ১৩ ফেব্রুয়ারি জন্মশতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে কবির... চৈতালী দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে শ্রাবস্তী-র উদ্যোগে ১৩-১৪ ফেব্রুয়ারি নারী সেবা সঙ্ঘের কৌশিক হলে প্রদর্শনী (১১-৮টা)। প্রথম দিন সন্ধে ৬টায় গানে-কবিতায় প্রতুল মুখোপাধ্যায় শ্রীজাত প্রমুখ। দে’জ়, আইজ়েনস্টাইন সিনে ক্লাব, সপ্তাহ ইত্যাদির উদ্যোগে গোর্কিসদনে শতবর্ষ পালন ১৩-১৬ ফেব্রুয়ারি। প্রথম দিন প্রদর্শনীর উদ্বোধনে শঙ্খ ঘোষ। নানা অনুষ্ঠানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, জয় গোস্বামী প্রমুখ। বাংলা আকাদেমিতে অনুষ্ঠান ১২-১৩ ফেব্রুয়ারি। প্রথম দিন স্মারক বক্তৃতায় প্রয়াগ শুক্ল, প্রকাশ পাবে শতবার্ষিকী সঙ্কলন ফুল ফুটুক। ১২-১৪ গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় প্রদর্শনী ‘যত দূরেই যাই’, উদ্বোধনে শাঁওলী মিত্র। আদি লেক পল্লি ক্লাবে উদ্‌যাপন শুরু ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় কবির মূর্তিতে মাল্যদানে, সমাপ্তি ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৬টায় কবিতা-গান-স্মৃতিচারণে, পরিচালনায় অভীক মজুমদার।

ছবির জগৎ

১৯৭৮ সালে পুজোসংখ্যা ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় প্রথম ইলাস্ট্রেশন ছাপা হয়। পছন্দ করেছিলেন সত্যজিৎ রায় স্বয়ং। পরের বছরেই ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’য় কর্মজীবন শুরু, অবসর নিয়েছেন বছর তিন। দেবাশীষ দেবের ছবিতে থাকে কার্টুনের মজা। সব রকম কাজের মধ্যে ছোটদের জন্য প্রচুর অলঙ্করণ করেছেন, বিশেষ করে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখার সঙ্গে তাঁর ছবির যুগলবন্দি খুবই জনপ্রিয়। সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে গবেষণাধর্মী বই রং তুলির সত্যজিৎ কিংবা বেড়ানোর গল্প আর ছবির বই ঘুরি বেড়াই ছবি আঁকি তাঁর কাজকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। এ বার বেরোল আঁকায় লেখায় চার দশক (বুকফার্ম)— তাঁর যা কিছু আঁকা ও লেখা তার বাছাই করা কিছু অংশকে বিভিন্ন পর্বে ভাগ করে সাজানো, সঙ্গে তাঁর নিজস্ব মূল্যায়ন, প্রাসঙ্গিক মন্তব্য, স্মৃতিচারণ ও আত্মকথা। রঙিন ও সাদাকালো মিলিয়ে অজস্র ছবিতে ভরা বইটি বাংলা অলঙ্করণ শিল্পের এক আশ্চর্য জগৎকে তুলে ধরেছে।

নাটকের গান

পাড়ার মঞ্চে কমবয়সি ছেলেটির অভিনয় দেখে নাট্যশিল্পী কেতকী দত্ত তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘‘আমার কাছে থিয়েটারের গান শিখবে?’’ এমন প্রস্তাব আসতে পারে ভাবতেই পারেননি অম্বরীশ ভট্টাচার্য। সেই শুরু থিয়েটারের গান শেখা। আজ সিনেমা ও সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেতা হয়েও তিনি ভুলতে পারেননি সেই গান। ১৯৯৯ থেকে টানা পাঁচ বছর ভারতের বিভিন্ন জায়গায় কেতকী দত্তের সঙ্গে এ গান গেয়েছেন তিনি। ২০০৩ সালে কেতকী মারা যাওয়ার পরে একাই এগিয়েছেন অম্বরীশ। সাহায্য পেয়েছেন কেতকী দত্তের ভাই চপল ভাদুড়ী ও সঙ্গীতকার মুরারি রায়চৌধুরীর। ‘‘শ্রোতা অনেকেই আছেন। কিন্তু গান শেখার আগ্রহ কারও নেই’’, গলায় হতাশা অম্বরীশের। শুধু অনুষ্ঠান নয়, থিয়েটারের গানের সংরক্ষণও চলছে। ‘‘সে কালের ‘বিদ্যাসুন্দর’, ‘শর্মিষ্ঠা’, ‘চন্দ্রগুপ্ত’, ‘শাজাহান’ থেকে শুরু করে ‘তিন পয়সার পালা’, ‘মারীচ সংবাদ’ ইত্যাদির শতাধিক গান সংরক্ষণ করেছি। সবই কেতকীদির কাছ থেকে শেখা। নিজেই গান গেয়ে রেকর্ড করে রেখেছি’’, বললেন অম্বরীশ। তাঁর ইচ্ছে থিয়েটারের গান নিয়ে অ্যালবাম করা। ১২ ফেব্রুয়ারি ‘কালিন্দী নাট্য সৃজন’-এর উদ্যোগে অ্যাকাডেমিতে থিয়েটারের গান গাইবেন তিনি।

লন্ডনের স্মৃতি

লন্ডনে অত দিন ছিলেন, সাহেবদের কেমন লাগল? একদা এ প্রশ্নের উত্তরে হিমানীশ গোস্বামী (১৯২৬-২০১২) বলেছিলেন, ‘‘সাহেব তো দেখেছি কলকাতায়, গোয়াতে— লন্ডনে বেশ কিছু ইন্ডিয়ান দেখেছি বটে।’’ এই স্বভাবসিদ্ধ বাক্‌ভঙ্গিমাই ছিল তাঁর সরস গদ্যের উৎস। ‘‘সেন্স অব হিউমার তাঁর মনের শুশ্রূষা করেছে আজীবন’’, জানিয়েছেন কন্যা হৈমন্তী। পঁচিশ বছর বয়সে লন্ডনে গিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনে প্রথম চাকরি, ১৯৫১-৫৭ পর্যন্ত ছিলেন সে শহরে। বহু কাল পর লন্ডনের স্মৃতিপথে চলা শুরু করেন তিনি, ধারাবাহিক লিখতেন ‘শিলাদিত্য’ পত্রিকায়। ভিড় করে আসা মজার সে সব স্মৃতিই গ্রন্থিত হল এ বার— অবিস্মরণীয় লন্ডন (প্রতিক্ষণ)। প্রচ্ছদ-সহ সারা বইতে ছড়ানো যাবতীয় ছবি তাঁরই তোলা।

রূপান্তর

‘‘এডওয়ার্ড লিয়রের Nonsense লিমেরিক/ পারমিতা অনুবাদ করেছেন terrific!’’ লেখক-পরিচিতিটি নিখাদ সত্যি। পারমিতা দাশগুপ্তের দাড়িওয়ালা বুড়োটার (ভাষালিপি) তাঁর নিজের আঁকা ছবি ও বাংলায় অনূদিত ছড়ার এক টইটম্বুর ভাণ্ডার। ‘‘ক্ষুদেবাবু ঝড়ের দাপট না পেরে আর সামলাতে/ উড়ে এসে পড়লো সিধে মাছের ঝোলের গামলাতে/ রাঁধুনি তার ছিপটি এনে/ বড়শি গেঁথে তুললো টেনে—/ প্রাণে বেঁচে বললো বাবু— ‘হইনি কাবু হামলাতে।’’ এমন করে পঞ্চাশটা লিমেরিক ছন্দে, শব্দে, অন্ত্যমিলে, মজাদার ছবি সমেত হাজির করেছেন পারমিতা। লিয়রের অন্য ছড়ারও স্বচ্ছন্দ অনুবাদ করেছেন তিনি। ‘‘এই ধরনের হরেক রকম আজগুবি সব ছড়া— এই বইতে ছড়িয়ে আছে রং-বেরঙে মোড়া।’’ পেশায় ভূগোলের অধ্যাপিকা, প্রথাগত ভাবে কখনও আঁকতে না শিখেও পারমিতা চমৎকার একটি বই পাঠককে উপহার দিয়েছেন। দেশকালের জারকে ভেজানো ছন্দে মোড়া শব্দের জাদু এমনই যে তাঁর কাজকে ভাষান্তর না বলে রূপান্তর বলাই বোধ হয় যথাযথ। সঙ্গে তারই প্রচ্ছদ।

ইতিহাসবিদ

বাণিজ্যের ইতিহাসে ছিল তাঁর অনুসন্ধিৎসা। তার জন্য ঢুঁড়ে ফেলেছিলেন দেশবিদেশের লেখ্যাগার। শিখেছিলেন বিদেশি ভাষা। সুশীল চৌধুরীর তন্নিষ্ঠ অনুসন্ধানের ফল ছড়িয়ে রইল তাঁর রচিত বইপত্রে। বাংলা, ভারত এবং সামগ্রিক ভাবে এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্য-সম্পর্কের ইতিহাস আর এ দেশের বাণিজ্যিক সংগঠন গড়ে ওঠার ইতিবৃত্ত মেলে তাঁর নানা বইতে— ফ্রম প্রসপারিটি টু ডিক্লাইন/ এইটিন্থ সেঞ্চুরি বেঙ্গল, দ্য প্রিলিউড টু এম্পায়ার/ প্লাসি রেভলিউশন অব সেভেনটিন ফিফটি সেভেন সমধিক পরিচিত। আনন্দ থেকে বেরিয়েছে তাঁর চারটি বাংলা বই: নবাবি আমলে মুর্শিদাবাদ, পলাশির অজানা কাহিনী, পৃথিবীর তাঁতঘর এবং সমুদ্রবাণিজ্যের প্রেক্ষিতে স্থলবাণিজ্য। আত্মজীবনী অকপট-এ (পুনশ্চ) লিখেছিলেন বিদ্যাচর্চার বৃত্তান্ত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে দীর্ঘদিন অধ্যাপনার পাশাপাশি নানা দেশে অধ্যাপনা, গবেষণা ও বক্তৃতা দিয়েছেন। এই যশস্বী শিক্ষক ৮১ পেরিয়ে প্রয়াত হলেন গত ২৩ জানুয়ারি (জন্ম ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৭)।

দেশভাগ

কাঁটাতারের আখ্যান। দেশভাগের যন্ত্রণার দিনলিপি। নানা ভাবে বার বারই শোনা ও দেখা। তবু সেই রক্তাক্ত অধ্যায়ের দিকে আবারও ফিরে তাকাতে বাধ্য করল ‘এবং অন্যকথা’ পত্রিকার ‘দেশভাগ’ সংখ্যা। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বাংলাদেশ, অসম, ত্রিপুরার মানুষের দেশভাগ সম্পর্কিত প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ব্যক্তিকথা, স্মৃতিচারণ, সাক্ষাৎকার, দেশভাগ সংক্রান্ত বইয়ের আলোচনা, গল্প, কবিতা, দীর্ঘ কবিতা, এ ছাড়াও কিছু কবিতা ও গল্পের পুনর্মুদ্রণ— সব মিলিয়ে সত্যিই বিশিষ্ট ছ’শোরও বেশি পাতার এই সংখ্যাটি। অতিথি সম্পাদক সুশীল সাহা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দুই বাংলার সেতুবন্ধনের কাজটি করে চলেছেন নিরন্তর।

মেচ সংস্কৃতি

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য নাটক সঙ্গীত ও দৃশ্যকলা অ্যাকাডেমির আয়োজনে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে শুরু হয়েছে কর্মশালা, ‘ফোক অ্যান্ড ট্রাইবাল পারফর্মিং আর্ট অব মেচ কমিউনিটি অব নর্থ বেঙ্গল।’ চলবে ১৭ পর্যন্ত। উত্তরবঙ্গের মেচ জনজাতি তাঁদের ঐতিহ্যবাহী ভাষা ও সংস্কৃতি আজও সীমিত গণ্ডিতে বহন করে চলেছেন। কর্মশালায় উৎসাহী ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মেচ নাটক, গান, বাদ্যযন্ত্রের পরিচয় করালেন রাজা সিংহ ঠাকুর, রাজীব ঠাকুর, হিরণবালা ঠাকুর নারজিনারি প্রমুখ মেচ শিল্পী। তাঁরা শেখাবেন বিখ্যাত পালাগান গুমরিমতি পালা— যা শিক্ষার্থীরা অভিনয় করবেন ১৫ ফেব্রুয়ারি। মেচ ভাষাতেই। তাই ভাষাশিক্ষাও চলছে পাশাপাশি। অধিকাংশ মেচ পালা পুরাণ বা ধর্মীয় গল্প নির্ভর। শিল্পীদের দুঃখ, নতুন প্রজন্মের কেউই এগিয়ে আসছেন না এই প্রাচীন সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।

মেলার মাঠেই

‘‘আভাঁ গার্দ লেখকদের রচনা তাঁর ‘রক্তকরবী’ পত্রিকায় ছাপতেনই না শুধু, তাঁদের নিরন্তর উৎসাহিতও করতেন লেখার জন্য... এমনই সম্পাদক ছিলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য।’’ বলছিলেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, তাঁর গদ্যগ্রন্থ অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রথম প্রকাশ করেন প্রদীপবাবুই, ১৯৮৯-এ। পরে পত্রিকার নাম দেন ‘একালের রক্তকরবী’, শুরু করেন ‘উর্বী প্রকাশন’। সেখানেও অন্য স্বরের লেখকদের সৃষ্টি গ্রন্থিত করতে ব্রতী ছিলেন তিনি। ছেপেছেন কমলকুমার মজুমদার, উদয়ন ঘোষ, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, ভাস্কর চক্রবর্তী অরূপরতন বসুর লেখা। ‘একালের রক্তকরবী’-র ৫০তম সংখ্যা প্রকাশের আগেই চলে গেলেন। মেলার মাঠে নিজের বইবিপণিতে, হঠাৎ। ক্রমশ পাঠবিমুখ এ শহরে তাঁর মতো মানুষের এটাই কি ভবিতব্য?

সত্যি গল্প

বিশাল দৈত্যাকৃতি স্টেজে একা দাঁড়িয়ে আছেন। হঠাৎ যান্ত্রিক প্রযুক্তিতে স্টেজ ফুঁড়ে বেরিয়ে এলেন নর্তকীরা, আর শুরু হল তাঁর বিখ্যাত ‘মুন ওয়াক স্টেপস’। এই দৃশ্য দেখে দর্শক একেবারে পাগলপারা। সমস্ত কারিগরি ও মঞ্চসজ্জা, অবিশ্বাস্য নিখুঁত কোরিয়োগ্রাফি সবই কিন্তু পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের কল্পনাপ্রসূত। শুধু তা-ই নয়, পপ সম্রাট তাঁর নিজের নাচের প্রত্যেকটি ভঙ্গি বার বার রিহার্সাল দিতেন, যত ক্ষণ না পর্যন্ত নিজের সেরাটুকু সম্পর্কে তিনি নিঃসংশয় হতেন। তিনি ছিলেন এক জন পারফেকশনিস্ট, অক্লান্ত পরিশ্রমী, সুদক্ষ এবং অফুরন্ত প্রাণশক্তিপূর্ণ প্রতিভাশালী। তাঁর কাছে প্রতিটি শো-ই ছিল শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবিদার। তিনি বলতেন, লক্ষ্যে পৌঁছতেই হবে, কবরের নীচে বিশ্রামের অনেক সময় পাওয়া যাবে। শেষের দিকে আবার এটাও বলেছিলেন, আমি নিজের ও আমার সন্তানদের জীবন নিয়ে আতঙ্কিত, আমার ভয় করছে। ঠিক এর পরই এল সেই দিনটি ২০০৯, ২৫ জুন। এক মুহূর্তের জন্য পৃথিবী নিস্তব্ধ। বিশ্বের সর্বকালের সেরা পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যু। প্রশ্ন উঠল: ‘‘কেন মারা গেলেন মাইকেল?’’ এ বার জ্যাকসনের বহু দিনের ম্যানেজার, অনুগামী এবং বন্ধু ডিটের উইজ়নার সেই কাহিনি শুনিয়েছেন মাইকেল জ্যাকসন/একটি সত্যিকারের গল্প (আনন্দ, অনুবাদ: শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়) বইয়ে। প্রকাশ্যে এসেছে অজানা অনেক কিছু, যেমন সঙ্গীত নিয়ে তাঁর ভবিষ্যতের ভাবনা, আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন। শুনিয়েছেন গভীর, খোলামেলা, অকপট এক মাইকেলের কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE