Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

অপহরণ-তদন্তে নম্বর প্লেট নিয়ে বিভ্রান্তি পুলিশের

বুধবার রাতের সেই অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক আধিকারিক শুক্রবার বলেন, ‘‘মানিকতলার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ওই নম্বরটাই একমাত্র সূত্র হিসেবে হাতে এসেছিল। তার ভিত্তিতেই লালবাজার রাজ্য জুড়ে খবর পাঠিয়ে দেয়। নম্বর ধরে রাতেই গাড়ির মালিকের বাড়িতে গিয়ে দেখি, একই রকম একটি গাড়ি গ্যারাজে রাখা। নম্বর প্লেটও এক!’’

এই গাড়িতে করেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ব্যবসায়ীকে। ফাইল চিত্র

এই গাড়িতে করেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ব্যবসায়ীকে। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০৯
Share: Save:

ভরসা ছিল একটি গাড়ির সাত সংখ্যার নম্বর। সেই নম্বর ধরে ব্যবসায়ী অপহরণের তদন্ত করতে গিয়ে বুধবার রাতে বেকুব বনে গিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। নম্বরের সূত্র ধরে গাড়ির মালিকের বাড়িতে হানা দিয়ে তদন্তকারীরা দেখেন, যে গাড়িতে গিরিশ পার্কের ব্যবসায়ীকে নিয়ে অপহরণকারীরা চম্পট দিয়েছে বলে অভিযোগ, সেই গাড়ি গ্যারাজে রাখা! অথচ, সিসি ক্যামেরার ফুটেজের গাড়ির সঙ্গে সেটির হুবহু মিল। মালিক বলছেন, ‘‘আমার গাড়ি! অপহরণ! হতেই পারে না।’’ মালিকের বাড়িতে তখন বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে।

বুধবার রাতের সেই অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক আধিকারিক শুক্রবার বলেন, ‘‘মানিকতলার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ওই নম্বরটাই একমাত্র সূত্র হিসেবে হাতে এসেছিল। তার ভিত্তিতেই লালবাজার রাজ্য জুড়ে খবর পাঠিয়ে দেয়। নম্বর ধরে রাতেই গাড়ির মালিকের বাড়িতে গিয়ে দেখি, একই রকম একটি গাড়ি গ্যারাজে রাখা। নম্বর প্লেটও এক!’’ পরে ভোরের দিকে পশ্চিম বর্ধমানে নাকা তল্লাশির সময়ে ধরা পড়া গাড়ির ছবি হাতে পেয়ে কলকাতার তদন্তকারীরা দেখেন, রাতে হানা দিয়ে দেখা গাড়ি আর এই গাড়ি হুবহু এক! এর পরেই পুলিশ বুঝতে পারে অপহরণে ব্যবহৃত গাড়িটি আদতে চোরাই। তাতে নকল নম্বর প্লেট লাগানো হয়েছিল। ধৃতদের হাতে পাওয়ার পরে এই নম্বর-রহস্যও খতিয়ে দেখবেন তদন্তকারীরা।

গত বুধবার রাতে গিরিশ পার্ক এলাকা থেকে অপহৃত হন ব্যবসায়ী মনোজ খান্ডেলওয়াল। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাঁর গাড়িতে উঠে পড়েছিল দুষ্কৃতীরা। পরে গাড়ি বদল করে ব্যবসায়ীকে নিয়ে চম্পট দেয় তারা। মনোজের গাড়ির চালক যাদব কিশোর মানিকতলার কাছে কোনও মতে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে পুলিশে খবর দেন। মানিকতলার সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে অপহরণে ব্যবহৃত গাড়ির নম্বরটি। পশ্চিম বর্ধমানে নাকা তল্লাশি চলাকালীন ধরা পড়ে যায় অপহরণকারীরা। উদ্ধার করা হয় ব্যবসায়ীকে।

অপহরণকারীদের এখনও হেফাজতে না পেলেও মনোজকে নিয়ে এ দিন সকালে কলকাতায় ফিরে এসেছেন পুলিশের প্রতিনিধিদলের সদস্যেরা। কলকাতায় আর এক দফা স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে ওই ব্যবসায়ীকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বর্ধমান পুলিশের কাছ থেকে ধৃতদের হেফাজতে পেতে আইনি প্রক্রিয়াও শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। তাদের ধারণা, এই অপহরণের পিছনে আন্তঃরাজ্য কোনও চক্র থাকতে পারে। ব্যবসায়ীকে ‘পার্সেল’ হিসেবে রাজ্যের বাইরে কোথাও পৌঁছে দেওয়া ছিল অপহরণকারীদের দায়িত্ব। তার পরে সেখান থেকে টাকা দাবি করা হত বলে পুলিশের অনুমান। তবে অপহরণকারীরা নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পুলি‌শের আরও অনুমান, পশ্চিম বর্ধমান পুলিশের কাছে ধৃতেরা নিজেদের বিহারের ঠিকানা দিলেও আদতে তারা কলকাতারই কোথাও দীর্ঘদিন থেকে রয়েছে। তাদের ছবি ও নাম ধরে অপরাধের পুরনো রেকর্ড খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Kidnapping Kolkata Police Businessman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE