Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
উদ্বেগে চিকিৎসকেরা

সচেতনতার অভাবই ডেকে আনছে শিশুদের থাইরয়েডের রোগ

জন্মগত রোগ হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জন্মের ঠিক পরেই সমস্যাটা বোঝা যায় না। কিন্তু সেই সমস্যার জেরে ভুগতে হয় আজীবন। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে হরমোনের নিঃসরণ স্বাভাবিক না হওয়ায় শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক বৃদ্ধি— পিছিয়ে থাকে সবটাই।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০১:১৯
Share: Save:

জন্মগত রোগ হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জন্মের ঠিক পরেই সমস্যাটা বোঝা যায় না। কিন্তু সেই সমস্যার জেরে ভুগতে হয় আজীবন। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে হরমোনের নিঃসরণ স্বাভাবিক না হওয়ায় শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক বৃদ্ধি— পিছিয়ে থাকে সবটাই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই রোগের নাম কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম বা সি এইচ। সরকারি-বেসরকারি সব স্তরেই এ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উপরে জোর দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ইতিমধ্যেই চিকিৎসকদের একটি দল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে এ ব্যাপারে চিঠিও পাঠিয়েছে।

কী এই কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম?

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, থাইরো হরমোনের ত্রুটির জন্যই এই রোগ দেখা যায়। স্বাভাবিক ভাবে থাইরয়েড গ্রন্থি থাকে মানবদেহের গলায়। কিন্তু যাঁদের থাইরয়েড গ্রন্থি জিভের তলায় বা অন্য অংশে থাকে, তাঁরাই এই সমস্যায় আক্রান্ত হন। আবার গ্রন্থিতে সঠিক পরিমাণ হরমোন উৎপাদন না হলেও এই সমস্যা দেখা দেয়।

চিকিৎসকদের মতে, জন্মের পরেই রোগটা ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসার সুযোগ থাকে। তাতে সব সময়ে পুরো সুস্থ না হলেও সমস্যা অনেক কমার সম্ভাবনা থাকে। আর পাঁচ জনের মতো ‘স্বাভাবিক’ জীবনযাপনের ক্ষেত্রেও অসুবিধা হয় না। কিন্তু মাত্র এক চতুর্থাংশ রোগীর ক্ষেত্রে জন্মের কয়েক দিনের মধ্যে এই রোগ ধরা পড়ে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়তে দেরি হয় কেন?

চিকিৎসকেরা জানান, জন্মের পরে বেশ কিছু সদ্যোজাতের মধ্যে এমন উপসর্গ দেখা যায়, যার জেরে বোঝা যায় শিশুটির সি এইচ রয়েছে। যেমন, শিশুর জিভ বড় হওয়া। যে সব শিশু এই রোগে আক্রান্ত, তাদের কান্নার শব্দ কর্কশ হয়। জন্মের পর পরই অনেক শিশু জন্ডিসে আক্রান্ত হয় কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে তারা সুস্থ হয়ে ওঠে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস’। কিন্তু যে সব শিশু জন্মের পরে জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয় না,
তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সি এইচে আক্রান্ত হয়। এ ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা হওয়া দরকার। কিন্তু রোগটা সম্পর্কে সচেতনতা না থাকায় ডাক্তারের কাছে যেতে দেরি হয়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জন্মের পরে এক ধরনের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেও জানা যায় শিশু এই রোগে আক্রান্ত কি না।

এই শিশুরা অনেকেই স্কুলে ভর্তির পরে অন্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না বলে জানিয়েছেন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট নীলাঞ্জন সেনগুপ্ত। আর এক এন্ডোক্রিনোলজিস্ট শুভঙ্কর চৌধুরী বলেন, ‘‘যারা সিএইচে আক্রান্ত, তাদের শারীরিক বৃদ্ধিতে সমস্যা হয়। অনেকেরই শ্রবণশক্তি ঠিক মতো তৈরি হয় না। অনেকে আবার স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারে না। প্রত্যেকেই আজীবন বৌদ্ধিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকে। তবে জন্মের তিন মাসের মধ্যে এই রোগ ধরা পড়লে এবং সময়ে চিকিৎসা শুরু করতে পারলে মানসিক বিকাশের সমস্যা হয় না।’’

এন্ডোক্রিনোলজিস্ট মৌটুসি রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এই রোগে আক্রান্তদের খানিকটা স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে একটি ওষুধও আছে। কিন্তু রোগের ব্যাপারে অন্ধকারে থাকার জন্যই অনেককে আজীবন ভুগতে হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

thyroid children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE