তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছেন ছবি রাপ্তান মণ্ডল।
অটো নিয়ে যে ফের এ রকম তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হবে, এমনটা স্বপ্নেও ভাবিনি। বছর খানেক আগে এই রুটের অটো থেকেই আমাকে আমার ছেলের সঙ্গে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে দিনও আমি ছেলেকে নিয়ে এইট-বি থেকে স্কুলে যাচ্ছিলাম।
আমাদের দু’জনের ভাড়া ষোল টাকা। স্ট্যান্ডে অটোয় উঠে বসেই আমি কুড়ি টাকার নোট দিয়েছিলাম, যাতে নামার সময় আর দাঁড়াতে না হয়। অটো চালক বললেন খুচরো দিতে হবে। ওঁকে বারবার বললাম আমার কাছে কোনও খুচরো নেই। খাকলে নিশ্চয় দিতাম। কিন্তু সেই অটো চালক আমার কোনও কথাই শুনলেন না। আমাদের নামিয়ে দিলেন।
সে দিন মুখ বুজেই সেই অপমান, ওঁদের ঔদ্ধত্য মেনে নিয়েছিলাম। সে দিন থানা-পুলিশ করিনি। কিন্তু আজ আর নিজের মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। আজ আমার অপরাধটা কী ছিল? ছেলেকে নিয়ে তাড়াতাড়ি স্কুলে পৌঁছনোর জন্য অটো থেকে নেমে বাস ধরার চেষ্টা করেছিলাম। তার জন্য এত হেনস্থা! আজ ছেলের অঙ্ক পরীক্ষা ছিল। সওয়া সাতটা থেকে পরীক্ষা। তাই তাড়াহুড়ো ছিল। অটোতে ওঠার পর দেখলাম কোনও যাত্রী নেই। মিনিট খানেক বসার পর দেখি পেছনে একটা ১বি রুটের বাস আসছে। তাই অটো থেকে নেমে সেই বাসে উঠতে চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা অটো থেকে নেমে পৌঁছনোর আগেই বাস ছেড়ে দিল। ফিরে এলাম অটো ধরতে। আমি অটোতে উঠতে যেতেই অটোর চালক আমাকে উঠতে না করেন। আমি প্রতিবাদ করে ওঠার চেষ্টা করতেই আমাকে ধাক্কা মারেন সেই অটো চালক।
আরও পড়ুন: আবার অটো দৌরাত্ম, যাদবপুরে চরম হেনস্থা মা-ছেলেকে
এই অটো চালকদের এত ঔদ্ধত্য আসে কোথা থেকে? তাঁরা কোন সাহসে যাত্রীদের সঙ্গে এ রকম ব্যবহার করেন?
এঁদের এতটাই সাহস এবং এতটাই এঁরা বেপরোয়া যে— আমাকে রীতিমত শাসাল। বলল, আমাকে ওই স্ট্যান্ডে কোনও অটোতে উঠতে দেবে না। আমি তখন নিরুপায়। আমাকে সময়ের মধ্যে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে পৌঁছতেই হবে। ওর পরীক্ষা। তাই একের পর এক অটোতে ওঠার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু আমাকে নিরুপায় দেখে ওরা আরও মজা পেয়ে গেল। পর পর পাঁচ খানা অটো আমাকে উঠতে বাধা দিল। এ দিকে আমি তখন খালি ঘড়ির দিকে দেখছি। আমি হাত জোড় করে সবাইকে অনুরোধ করলাম, বললাম ছেলেটার পরীক্ষা। আপনারা এ রকম করবেন না। কিন্তু তাতে উল্টে কয়েকজন অটো চালক আমাকে ধাক্কা মারল, বিশ্রী কটূক্তি করল। আমি সত্যি আর পারছিলাম না। কেঁদে ফেলেছিলাম।
এই অপমান, দুর্ভোগের মধ্যে আমার আরও একটা কথা বলার আছে। আজ ওখানে অন্য অনেক যাত্রী ছিলেন। তাঁরা সব দেখে-শুনেও কোনও সাহায্য করেননি, প্রতিবাদ করা দূরে থাক। পাশ কাটিয়ে যে যার মতো চলে গিয়েছেন। তাঁদের আমি খালি মনে করাতে চাই, তাঁরাও কিন্তু যে কোনও দিন একই রকম ভাবে হেনস্থার শিকার হতে পারেন। আমার থেকেও খারাপ অভিজ্ঞতা হতে পারে তাঁদের। সে দিন কিন্তু তাঁদের পাশেও কেউ দাঁড়াবে না। সবাই পাশ কাটিয়েই চলে যাবে।
এই অটো চালকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আমাকে এঁরা আরও হেনস্থা করবে। কারণ আমাকে এই রুটে ছেলেকে নিয়ে রোজ যেতে হবে। আমি তাতে ভয় পাই না। এঁদের শাস্তি হওয়া দরকার। তাই পুলিশের কাছে গিয়েছি, অভিযোগ জানিয়েছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy