Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

প্রেম ও সন্তান হারিয়ে দেশে ফিরছেন তরুণী

হাসপাতালের ছ’তলায় জানলার পাশে বসে গত পাঁচ দিন ধরে একটানা আকাশ দেখে গিয়েছেন রেনামি। অচেনা শহরের অচেনা আকাশ।এ ক’টা দিন যত বার তাঁর মোবাইল বেজে উঠেছে, ফোন কানে চেপে ধরে ওই জানলার পাশে বসেই অঝোরে কেঁদেছেন রেনামি কালো নামে ৩২ বছরের ফিলিপিনো এই যুবতী।

অপেক্ষা: হাসপাতালে রেনামি কালো। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

অপেক্ষা: হাসপাতালে রেনামি কালো। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৭ ০২:০৭
Share: Save:

হাসপাতালের ছ’তলায় জানলার পাশে বসে গত পাঁচ দিন ধরে একটানা আকাশ দেখে গিয়েছেন রেনামি। অচেনা শহরের অচেনা আকাশ।

এ ক’টা দিন যত বার তাঁর মোবাইল বেজে উঠেছে, ফোন কানে চেপে ধরে ওই জানলার পাশে বসেই অঝোরে কেঁদেছেন রেনামি কালো নামে ৩২ বছরের ফিলিপিনো এই যুবতী। কলকাতা শহর ছেড়ে তিনি ফিরে যেতে চান ফিলিপিন্সের দক্ষিণে, সমুদ্র ঘেরা জেনারেল স্যান্তোস শহরে। তাঁর বাবা-মায়ের কাছে।

গত শুক্রবারের ঘটনা। ৩৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা রেনামি মাঝ আকাশেই যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠেছিলেন। সামলানো যায়নি তাঁকে। কুয়েত থেকে ম্যানিলা যাওয়ার পথে ফিলিপিন্সের বিমান কলকাতায় নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিল রেনামিকে— একা। কলকাতায় নামার পরে তড়িঘড়ি তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল বিমানবন্দরের কাছে চার্নক হাসপাতালে। রেনামির প্রাণ বাঁচাতে সেই রাতেই অস্ত্রোপচার করে মৃত সন্তানকে বার করে আনা হয়।

শুক্রবার বিমানবন্দরের অফিসারেরাই নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলেন, ‘‘কেমন স্বামী! আসন্ন প্রসবা স্ত্রীকে এ ভাবে একা বিমানে তুলে দিয়েছেন!’’ প্রথম দু’-তিন দিন কাটার পরেও সন্তানের বাবা যোগাযোগ না করায় বা নিজে সশরীরে কলকাতায় এসে হাজির না হওয়ায় অবাক হয়েছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরাও।

আরও পড়ুন:রেণুর ছেলে ঘুমোচ্ছে আনোয়ারার কোলে

বৃহস্পতিবার হাসপাতালে বসে এখন একটু সুস্থ রেনামি উদ্ঘাটন করলেন সেই রহস্যের। কোথায় তাঁর সন্তানের বাবা, আজ তা জানেন না রেনামি। স্যান্তোস শহরের দরিদ্র খ্রিস্টান পরিবারের ছোট মেয়ে রেনামি। চাকরির আশায় সাত বছর আগে সাগর পেরিয়ে উড়ে গিয়েছিলেন কুয়েত। একটি বাড়িতে দু’বছর পরিচারিকার কাজ করার পরে একটি হোটেলে রান্নার কাজ শুরু করেন। এখন তিনি ‘শেফ’। চকোলেট এবং চকোলেট থেকে বিভিন্ন খাবার তৈরিতে তাঁর হাতযশ রয়েছে।

কুয়েত শহরের এক রেস্তোরাঁয় এক দিন তাঁর আলাপ হয়েছিল শন পার্কারের সঙ্গে। মার্কিন সেনা শন লম্বা, সুঠাম। গায়ের রঙ মাজা। রেনামির কথায়, ‘‘বেশি দিন নয়। গত বছরের অগস্ট মাসে প্রথম দেখা। প্রেম।’’ মাস সাতেক আগে আচমকাই কুয়েত ছেড়ে চলে যান শন। তাঁকে মার্কিন দেশে বার কয়েক ফোন করার পরে, এক দিন শনের বোন বলে পরিচয় দিয়ে এক মহিলা ফোন করেন রেনামিকে। তিনি বলেন, ‘‘বিরক্ত করবেন না।’’ জানান, শন বিবাহিত। আমেরিকায় তাঁর স্ত্রী ও পরিবার রয়েছে।

রেনামি বলেন, ‘‘আমি যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছি, তা প্রথমে বুঝতেও পারিনি। মাস কয়েক পরে দেখি পেটটা একটু একটু করে ফুলে উঠছে। আমার সহকর্মীরা ওষুধ দেন। কিন্তু, কমে না। শেষে আমার এক মহিলা সহকর্মী পরীক্ষা করে জানান, আমি মা হতে চলেছি। শনের সন্তানের মা।’’

ভয়ে কুয়েতের চিকিৎসকদের কাছে যেতে পারেননি রেনামি। জানতে পারলে শাস্তির মুখে পড়তে হতো। রেনামির কথায়, ‘‘ও দেশের নিয়ম-কানুন খুব কড়া।’’ তিনি সত্যিটা লুকিয়ে কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। বাবা-মা জানতে পারলে তাঁরা বলেন দেশে ফিরতে। সহকর্মীরাই টিকিট কেটে তুলে দেন বিমানে।

ভুলে যেতে চান শনকে। বাড়ি ফিরে ছোটখাটো কাজ পেলে করবেন। বিয়ে? মাথা নীচু করে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন রেনামি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pregnant Philippines Newborn Flight
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE