Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে দুর্ভোগ, চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে

বৃহস্পতিবার চিকিৎসকেরা জানান, আপাতত তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ঠিক হয়, সে দিন সকালেই বরাহনগরের শশিপদ ইনস্টিটিউট লেনের বাড়িতে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে যাওয়া হবে ওই বৃদ্ধাকে। সেই জরুরি পরিষেবার ব্যবস্থা করতে গিয়েই অচিন্ত্যবাবু এবং তাঁর ভাই বৃহস্পতিবার দিনভর নাজেহাল হয়েছেন বলে অভিযোগ।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৯
Share: Save:

নিজেদের ‘স্বাস্থ্য-বন্ধু’ বলে দাবি করে লাগাতার প্রচার চালাচ্ছে কলকাতা পুরসভা। বৈঠক ডেকে জানানো হচ্ছে পুর স্বাস্থ্য দফতরের ‘ভাল কাজ’-এর খতিয়ান! অথচ, পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা পেতেই হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্স চেয়ে আবেদন জানাতে যাওয়া রোগীর আত্মীয়দের দীর্ঘক্ষণ পুরভবনে বসিয়ে রাখা হচ্ছে এবং দিনের শেষে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কর্তা-ব্যক্তিরা ‘মিটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন’। উপায় না থাকায় বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার উপরেই ভরসা করতে হচ্ছে ওই রোগীর পরিজনদের। অবস্থা এমনই যে, পরিস্থিতি বদলের আর্জি জানিয়ে এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখলেন বরাহনগরের বাসিন্দা এক রোগীর আত্মীয়।

অচিন্ত্যকুমার লাহা নামে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, গত ২৩ অগস্ট থেকে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে ভর্তি ছিলেন তাঁর মা অঞ্জলিদেবী। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি বয়সজনিত সমস্যাও রয়েছে ৬৭ বছরের ওই বৃদ্ধার। বৃহস্পতিবার চিকিৎসকেরা জানান, আপাতত তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ঠিক হয়, সে দিন সকালেই বরাহনগরের শশিপদ ইনস্টিটিউট লেনের বাড়িতে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে যাওয়া হবে ওই বৃদ্ধাকে। সেই জরুরি পরিষেবার ব্যবস্থা করতে গিয়েই অচিন্ত্যবাবু এবং তাঁর ভাই বৃহস্পতিবার দিনভর নাজেহাল হয়েছেন বলে অভিযোগ।

তাঁদের অভিযোগ, প্রথমে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য আবেদন করতে গেলে সেখান থেকে জানানো হয়, যে হেতু বরাহনগর কলকাতা পুর এলাকার বাইরে, তাই এস এন ব্যানার্জি রোডে পুরসভার প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে আলাদা করে অনুমতি নিতে হবে। সেই সঙ্গে ১৫০ টাকা ভাড়ার পাশাপাশি সিঁথির মোড় পার করার পর থেকে প্রতি কিলোমিটারে দিতে হবে আট টাকা করে। সেই মতো পুরসভার প্রধান কার্যালয়ের স্বাস্থ্য দফতরে যান অচিন্ত্যবাবুর ভাই। অভিযোগ, বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তাঁকে বসিয়ে রাখা হয় সেখানে। অচিন্ত্যবাবু বলেন, ‘‘প্রতিবারই জিজ্ঞাসা করলে বলা হয়েছে, বাবুরা সব মিটিংয়ে রয়েছেন।’’ তবে কত ক্ষণ? স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। অপেক্ষা করতে করতে এক সময়ে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন অচিন্ত্যবাবুরা। এ দিন বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ বেসরকারি সংস্থার অ্যাম্বুল্যান্সে মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তাঁরা।

একই অভিজ্ঞতা হয়েছে সল্টলেকের এক বাসিন্দারও। অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করতে গিয়ে কালঘাম ছুটেছে তাঁর। বললেন, ‘‘পুরসভার নাকি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। তবে সেগুলি কী করে পাওয়া যায় বা পেতে কোথায় যোগাযোগ করতে হবে, কেউ জানে না।’’ প্রয়োজনের সময়ে পুরসভার বিভিন্ন নম্বরে বারবার ফোন করেছিলেন তিনি। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স পাননি। শেষে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সেই মল্লিকবাজারের একটি হাসপাতালে শাশুড়িকে নিয়ে যান।

অ্যাম্বুল্যান্সের মতো একটি জরুরি পরিষেবা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভোগান্তি চলছে। দিন কয়েক আগেই হাওড়ায় আশঙ্কাজনক এক রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্স দিতে অস্বীকার করার অভিযোগ উঠেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, শহর কলকাতার একাধিক সরকারি হাসপাতালের চিত্রটাও প্রায় একই। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি ভাবে অ্যাম্বুল্যান্স চালকের পদে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। ফলে দ্বিগুণ বা তিন গুণ ভাড়ায় বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এই অবস্থায় পুর স্বাস্থ্য দফতরের হাতে ন’টি অ্যাম্বুল্যান্স থাকা সত্ত্বেও তা পেতে নাজেহাল হতে হচ্ছে কেন?

এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে ফোন করা হলে কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য-অধিকর্তা মনিরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘‘উপ মুখ্য স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বাসুদেব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলুন।’’ বাসুদেববাবু অবশ্য ফোন ধরে বলেন, ‘‘আমি এ ব্যাপারে বলার সঠিক লোক নই।’’ তবে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘কোথাও একটা বোঝার ভুল হয়েছে। ওই ব্যক্তি অফিসারকে দিয়ে চিঠিতে সই করিয়ে আনতে বললেই হয়ে যেত। সমস্যা হত না।’’ অচিন্ত্যবাবু বলেন, ‘‘যে আধিকারিক জরুরি পরিষেবা হাতে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন, তাঁকে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ সই করিয়ে আনতে বলবে কী করে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letter Patient Ambulance Complaint
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE