শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং। —ফাইল চিত্র।
সকাল থেকেই পারদ চড়ছিল। রাতে বিশ্বকাপের খেলা শুরু হতেই আর তাল রাখতে পারল না রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং তো হলই। যে সমস্ত এলাকায় লোডশেডিং হল না, সেখানে ভোল্টেজ নেমে গেল অনেকটা নীচে। ফলে খেলা দেখা তো হলই না, অস্বস্তিকর গরমে কার্যত না ঘুমিয়ে কাটাতে হল রাত। গ্রাহকদের অভিযোগ, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার হেল্পলাইনে ফোন করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেউ ফোন ধরেননি। ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ কী, কখন পরিষেবা স্বাভাবিক হবে, সে সম্পর্কেও তাঁরা কিছু জানতে পারেননি।
সোনারপুরের বাসিন্দা সঞ্জয় চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘খেলা দেখা তো মাথায় উঠল। ঘুমোতেও পারলাম না।’’ হরিনাভির তুহিনকান্তি শর্মার অভিযোগ, ‘‘অন্ধকারে বসে রইলাম। হেল্পলাইনে ফোন করলেও কোনও সদুত্তর পেলাম না।’’ সিইএসসি আওতাধীন এলাকার বহু গ্রাহকের অভিযোগ, হেল্পলাইনে ফোন করে সাড়া মেলেনি। অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিইএসসি। তারা জানিয়েছে, বিক্ষিপ্ত বিভ্রাট ঘটলেও দ্রুততার সঙ্গে পরিষেবা চালু করা হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, এমন বিপর্যয় হল কেন? এ-ও প্রশ্ন উঠেছে, যদি বিপর্যয় বা বিভ্রাটের পরে হেল্পলাইনে সাড়া না মিললে তা রেখে লাভ কী? বণ্টন সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ ভবনের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, অভিযোগ গুরুতর। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।
কিন্তু এমন বিভ্রাট হলই বা কেন?
বিদ্যুৎকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, আচমকা গরম বে়ড়ে যাওয়ার ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। বহু বাড়িতেই একাধিক এসি, পাখা চলেছে। রাতে একই সঙ্গে কয়েক লক্ষ টেলিভিশন চালু হওয়ায় এক ধাক্কায় আরও বেড়ে গিয়েছিল বিদ্যুতের ব্যবহার। সব মিলিয়ে আর চাপ সামলানো যায়নি। সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বণ্টন এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৫৮০০ মেগাওয়াটের মতো। রাত ১১টার পরে এসি-র সঙ্গে খেলা চালু হতেই সেই চাহিদা গিয়ে দাঁড়ায় ৬২০০ মেগাওয়াটে। অর্থাৎ, এক ধাক্কায় ৪০০ মেগাওয়াট বেড়ে যায়। সিইএসসি এলাকায় শুক্রবার সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ২০৯৯ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎকর্তাদের একাংশ বলছেন, ৬২০০ মেগাওয়াট চাহিদা মেটানো অসম্ভব নয়। কিন্তু গোলমাল হয়েছে হুকিং ও বেআইনি এসি-র জন্য। কোথাও কোথাও ট্রান্সফর্মারে আগুনও ধরে গিয়েছিল। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদের হাতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ রয়েছে। কিন্তু খবর পেয়েছি, অসংখ্য জায়গায় বেআইনি ভাবে লাইন টেনে রাতে বড় প্রোজেক্টরে খেলা দেখানো হয়েছে। আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। গরমের জন্য বেআইনি এসি-ও চালানো হয়েছে। তার ফলেই বহু জায়গায় লাইন ট্রিপ করে গিয়েছিল। তাতে মানুষের ভোগান্তি হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, রাতে কোথায় হুকিং হচ্ছে, জানা যাচ্ছে না বলেই আগাম ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তা-ও বণ্টন কর্তৃপক্ষকে খেলার সময়ে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে বলে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy