Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দমকল যেন ‘নিমিত্ত মাত্র’, আগুন ঠেকালেন বাসিন্দারা

বাসিন্দাদের দাবি, দমকলকর্মীরা প্রথমেই ওই ফিডার পিলার বক্সের একেবারে সামনে থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রয়োগ করলেও আগুন নেভেনি।

দাউদাউ: বালির গোস্বামী পাড়ায় জ্বলছে ফিডার পিলার বক্স। নিজস্ব চিত্র

দাউদাউ: বালির গোস্বামী পাড়ায় জ্বলছে ফিডার পিলার বক্স। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৪৮
Share: Save:

আচমকাই বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছিল গোটা এলাকা। শব্দ শুনে বাসিন্দারা রাস্তায় বেরিয়ে দেখেন, দাউদাউ করে জ্বলছে এলাকার ফিডার পিলার বক্স। একের পর এক বিস্ফোরণে বাড়ছে আগুনের মাত্রাও।

বুধবার রাত ১২টা নাগাদ বালির গোস্বামী পাড়ার হরিসভা এলাকায় এই ঘটনার খবর পেয়ে কিছু ক্ষণের মধ্যেই দমকলের একটি ছোট ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে আসে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহকারী বক্সের আগুন নেভাতে যে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল তা নেননি দমকলকর্মীরা। এমনকি, দমকলের গাড়িতেও ওই ধরনের আগুন নেভানোর যথাযথ রাসায়নিকের ব্যবস্থাও ছিল না বলেও অভিযোগ।

বাসিন্দাদের দাবি, দমকলকর্মীরা প্রথমেই ওই ফিডার পিলার বক্সের একেবারে সামনে থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রয়োগ করলেও আগুন নেভেনি। এর পরে বাসিন্দারা মোনোঅ্যামোনিয়াম ফসফেট জাতীয় পাউডার স্প্রে-এর দাবি তোলেন। স্থানীয় বাসিন্দা মনোজ শী বলেন, ‘‘তখন দমকলকর্মীরা সামান্য দূরে থাকা দমকল কেন্দ্রে গিয়ে ওই রাসায়নিকের একটি সিলিন্ডার নিয়ে আসেন। সেটি শেষ হয়ে গেলেও আগুন নেভেনি।’’ আর এক বাসিন্দা সনাতন গোস্বামী জানান, অন্ধকারে ডুবে থাকা এলাকায় মাঝেমধ্যেই বিস্ফোরণের শব্দ ও আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকায় আতঙ্ক ছড়াতে থাকে। রাস্তায় বেরিয়ে আসেন অসংখ্য মানুষ। কোনও ভাবে তা সামাল দেওয়া হলেও আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তিনি জানান, দমকলকর্মীদের কাছে আর সিলিন্ডার নেই জেনে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের ব্যবসায়ী তথা স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত গোস্বামী নিজের বাড়ি থেকে বেশ কয়েকটি মোনোঅ্যামোনিয়াম ফসফেট পাউডার ভর্তি সিলিন্ডার এনে ওই ফিডার পিলার বক্সে প্রয়োগ করেন। তাতে আগুনের তীব্রতা কিছুটা কমতেই স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরা নির্মীয়মাণ একটি বহুতল থেকে বালি এনে ঢালেন।’’ বাসিন্দারা জানান, ইতিমধ্যে সিইএসসি-র কর্মীরা গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে আগুন সম্পূর্ণ নিভে যায়। এর পরে দমকল জল ঢেলে বক্সটি ঠান্ডা করে।

বালি দমকলের স্টেশন অফিসার রামকৃষ্ণ সাহার দাবি, ‘‘ওই সব পাউডারে তেমন কোনও কাজ হয় না। তবে ব্রোকেন জেট ব্যবহার করে আমরা আগুন নিভিয়েছি। স্থানীয়েরাও আগুন নেভাতে সহযোগিতা করেছেন।’’ এ সব ক্ষেত্রে জলের স্রোতে বিদ্যুতের প্রবাহ ঠেকাতে ব্রোকেন জেট ব্যবহার করে কিছু ক্ষণ অন্তর জল ছোঁড়া হয়। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ ব্রোকেন জেটের ব্যবহার দমকল করেইনি।

বক্সের একদম সামনে থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড, মোনোঅ্যামোনিয়াম ফসফেট প্রয়োগ করা সঠিক পদ্ধতি নয় বলেই অভিমত প্রাক্তন দমকল কর্তাদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, বাড়ি কিংবা কারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী যন্ত্রের আগুন নেভাতে ওই সব জিনিসের প্রয়োজন। ফিডার বক্সে আগুন লাগলে প্রথমেই ভিড় হটিয়ে অনেকটা দূর থেকে ব্রোকেন জেট ব্যবহার করতে হয়। না হলে বিস্ফোরণে যে কারও জখমের আশঙ্কা থাকে। ১৯৮০ সাল নাগাদ মানিকতলায় এক ফিডার বক্সের আগুন সামনে থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড দিয়ে নেভানোর সময় বিস্ফোরণে ঝলসে গিয়েছিলেন অজিত গঙ্গোপাধ্যায় নামের এক কর্মী। প্রাক্তন কর্তারা আরও জানাচ্ছেন, দমকলের নিয়মানুযায়ী এমন ঘটনায় খবর পেয়েই দমকলের দু’টি ইঞ্জিনের যাওয়ার কথা। কিন্তু বালির ওই ঘটনায় গিয়েছিল একটি ইঞ্জিন।

ঘটনার খবর পেয়ে সিইএসসি-র হাওড়া আঞ্চলিক অফিস থেকে ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মী-সহ ৫টি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। সংস্থার এক কর্তার পর্যবেক্ষণে কর্মীরা তৎপরতার সঙ্গে কাজ শুরু করে রাত সাড়ে ৩টা নাগাদ বিকল্প উপায়ে এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন। ওই দিন রাত থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ওই ফিডার পিলার বক্স বদলানোর কাজ চলেছে। ইঞ্জিনিয়ারেরা জানাচ্ছেন, অন্য কোনও সংস্থা রাস্তা খুঁড়ে কাজ করার সময়েই কোনও ভাবে বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। তাতেই বিপর্যয় ঘটেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire আগুন Fire Brigade
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE