Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Jadavpur University

চা-কফি-কম্বল নিয়ে ওঁদের পাশে শহর

শনিবার রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছিল ঠান্ডা। একটা সময়ে তাপমাত্রা নেমে যায় ১১ ডিগ্রিতে।

প্রতিবাদ: আগুন জ্বেলে রাতভর অবস্থানে পড়ুয়ারা। শনিবার, ধর্মতলায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

প্রতিবাদ: আগুন জ্বেলে রাতভর অবস্থানে পড়ুয়ারা। শনিবার, ধর্মতলায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

দীক্ষা ভুঁইয়া ও ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ০২:১৪
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রানি রাসমণি রোডের ধর্না মঞ্চ ছেড়ে বাড়িতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বেলুড়ে। যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম সংগঠনগুলির পড়ুয়ারা কিন্তু শহরের রাজপথ ছাড়লেন না। বরং রাত জুড়ে হাড় হিম করা ঠান্ডায় মেট্রো চ্যানেল দখলে রেখে চালিয়ে গেলেন আন্দোলন। আর তাঁদের পাশে এসে সারা রাত ধরে থাকলেন স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে দোকানের কর্মচারী, মালিক। এমনকি ট্যাক্সিচালকেরাও। অনেক স্থানীয় বাসিন্দা আবার সারা রাত ধরে আন্দোলনকারীদের চা, কফি, বিস্কুট জুগিয়ে গেলেন।

শনিবার রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছিল ঠান্ডা। একটা সময়ে তাপমাত্রা নেমে যায় ১১ ডিগ্রিতে। কিন্তু তাতেও হেলদোল দেখা যায়নি পড়ুয়া ও আন্দোলনকারীদের। উল্টে একটা সময়ের পরে মেট্রো চ্যানেলের সামনে ত্রিপল, বস্তা পেতে তার উপরেই বসে পড়েন। আগুন জ্বেলে কোথাও চলল গান, কেউ সেখানেই বসে বই নিয়ে পড়তে শুরু করলেন। আবার কোথাও কলকাতা পুলিশের ব্যারিকেডের জন্য রাখা রেলিংকে গোলপোস্ট করে শুরু হল ফুটবল খেলা। কোথাও ক্রিকেট। কোথাও আবার চলল নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে স্লোগান। যা শুনে এবং দেখে স্থানীয় অনেকেই বাড়ি থেকে ফের এসে বসে রইলেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। এমনকি, জমায়েতে থাকা ছাত্রছাত্রীরা যাতে অসুস্থ না হয়ে পড়েন, তার জন্য স্থানীয় মানুষ ও দোকানদারদের দেখা গেল মোটরবাইক আর স্কুটারে করে কম্বল নিয়ে আসছেন। কেউ নিয়ে এলেন নিজের বাড়ি থেকে, কেউ আবার রাতেই দোকান খুলিয়ে চাঁদা তুলে প্রতিবাদীদের জন্য নিয়ে এলেন কম্বল। আবার তালতলার প্রৌঢ় মহম্মদ আলতাফকে দেখা গেল পকেট থেকে দেশলাই বার করে গোল হয়ে বসে থাকা ছাত্রছাত্রীদের সামনে কাঠের টুকরো দিয়ে আগুন জ্বেলে দিতে। তবে শুধু আগুন জ্বেলে দিয়েই কাজ সারেননি তিনি। এলাকার আরও লোকজনকে নিয়ে ওই ঠান্ডায় পড়ুয়াদের সঙ্গে রাত জেগেছেন মেট্রো চ্যানেলেই। আর মেট্রো চ্যানেলের এক চায়ের মহিলা দোকানদারকে দেখা গেল নিজের দোকানে জমা হওয়া কাঠের ছোট্ট ছোট্ট বাক্সগুলিকে পড়ুয়াদের হাতে তুলে দিতে। যাতে সেগুলি ভেঙে আগুন জ্বালতে পারেন তাঁরা। তবে শুধু পড়ুয়া, স্থানীয়েরাই নন। তাঁদের সঙ্গে রাত জেগে, রাস্তায় বসে প্রতিবাদে অংশ নিলেন বরাহনগর, যাদবপুর-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কয়েক জন বৃদ্ধও। অন্য দিকে মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চ ছাড়তেই তৃণমূলের ধর্না মঞ্চ রীতিমতো ফাঁকা হয়ে যায়। সেখানে জনা কুড়ি সমর্থককে দেখা যায় মঞ্চের পিছনের তাঁবুতে কম্বল মুড়ি দিয়ে চেয়ারে বসে থাকতে।

অন্য দিকে মেট্রো চ্যানেলে বিক্ষোভকারীদের জন্য সারা রাত ধরে জল, বিস্কুট, কেকের পাশাপাশি চা-কফির ব্যবস্থাও করেছিলেন স্থানীয়েরা। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বাপন আহমেদ স্থানীয় মানুষদের সহযোগিতা পেয়ে বললেন, ‘‘স্থানীয়দের এই সহযোগিতায় জমায়েতের রাত সুষ্ঠু ভাবে কেটেছে।’’ ধর্মতলা বাস ডিপো সংলগ্ন দোকানের কর্মচারী কেশব তিওয়ারি অবশ্য বলছিলেন, ‘‘ওরা আমাদের ছেলেমেয়ের বয়সি। এই ঠান্ডায় সারা রাত রাস্তায় থাকছে দেখে চাঁদা তুলে সামান্য ব্যবস্থা করেছি।’’ সকালের দিকে আকাশ পরিষ্কার হওয়ার সঙ্গেই ফের নতুন উদ্যমে বসলেন পড়ুয়ারা। বাড়তে থাকল ভিড়। ট্রেন চলাচল শুরু হতেই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মতলা চত্বরে জড়ো হলেন প্রতিবাদীরা।

আরও পড়ুন: ৭০ লক্ষ টাকার বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার, আটক ৪

এই শীতেও কী করে সারা রাত ধরে অবস্থান সফল ভাবে চালালেন? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী হিমন মিত্র বললেন, ‘‘হেরে যেতে এখানে আসিনি। যখন অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা সফল ভাবেই শেষ হবে।’’

আরও পড়ুন: ধর্মের ‘জুজু’, পুণ্যার্থীদের শিবির এ বারও সেই ময়দানে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE