Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Lockdown in West Bengal

‘লকডাউনে বসে ছিলাম, সেই টাকাটা তুলে নিতে হবে তো!’

ভোগান্তি কমাতে রাজ্য পরিবহণ দফতর বাড়তি বাস নামানোর কথা বলেছে। বৃহস্পতিবার থেকে পথে নেমেছে কিছু বেসরকারি বাসও। কিন্তু অভিযোগ, তাতেও সমস্যা মেটেনি।

সবেধন: একটি ট্যাক্সির দেখা মিলতেই সেটি ধরার প্রতিযোগিতা যাত্রীদের। শুক্রবার বিকেলে, বি বা দী বাগে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সবেধন: একটি ট্যাক্সির দেখা মিলতেই সেটি ধরার প্রতিযোগিতা যাত্রীদের। শুক্রবার বিকেলে, বি বা দী বাগে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২০ ০৩:৩৯
Share: Save:

পঞ্চম দফা লকডাউন শুরুর পাঁচ দিন পরেও গণপরিবহণে যাত্রী-ভোগান্তির সার্বিক চিত্রটা বিশেষ বদলাল না। শুক্রবার দিনভর শহরে ঘুরে দেখা গেল অটো, ট্যাক্সি, অ্যাপ-ক্যাবের মতো বিকল্প গণপরিবহণেরও একই অবস্থা। প্রায় কোনও অটো রুটেই নির্দিষ্ট ভাড়া নেই। কখন কত জন যাত্রী তোলা হবে, তা ঠিক করে নিচ্ছেন অটোচালকেরাই। আর যাত্রীর সংখ্যা অনুযায়ী চাওয়া হচ্ছে ভাড়া! অ্যাপ-ক্যাব পেতেও একই রকম হয়রানি হচ্ছে বলে অভিযোগ।

ভোগান্তি কমাতে রাজ্য পরিবহণ দফতর বাড়তি বাস নামানোর কথা বলেছে। বৃহস্পতিবার থেকে পথে নেমেছে কিছু বেসরকারি বাসও। কিন্তু অভিযোগ, তাতেও সমস্যা মেটেনি। কালীঘাট রোডের বাসিন্দা, একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন বললেন, “দু’দিন কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়েও বাস পাইনি। আমাদের পাড়া কন্টেনমেন্ট জ়োন বলে কোনও অ্যাপ-ক্যাব আসতে চাইছে না। ভিড় এড়াতে বৃহস্পতিবার কালীঘাট থেকে অটোয় উঠেছিলাম। যাওয়ার সময়ে যে দূরত্ব যেতে ১০ টাকা নিল, রাতে ফেরার সময়ে একই পথে ভাড়া চাইল তিন গুণ। চালক দিনে চার জন করে যাত্রী নিচ্ছেন। অথচ রাতে পুরো উল্টো গেয়ে বলছেন, সরকার বলেছে দু’জন যাত্রী নিতে, তাই বেশি ভাড়া।” টালিগঞ্জ-গড়িয়া, গড়িয়া-গোলপার্ক, কালীঘাট থেকে বেহালা চৌরাস্তা, বেহালা-তারাতলা, টালিগঞ্জ থেকে কবরডাঙা-সহ বেশ কয়েকটি রুটে একই কারণ দেখিয়ে দ্বিগুণ ভাড়া চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

শোভাবাজার থেকে উল্টোডাঙা, গিরিশ পার্ক থেকে কাঁকুড়গাছি, আইডি-আর জি কর, চাঁদনি চক থেকে লোহাপুল, পার্ক সার্কাস থেকে গড়িয়াহাট এবং শিয়ালদহ ও কাশীপুরের একাধিক অটো রুটেও ছবিটা একই। শুভেন্দু ঘোষ নামে এক ভুক্তভোগীর দাবি, বি কে পাল থেকে কাশীপুর ৪বি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত অটোয় যেতে ১৪ টাকা ভাড়ার বদলে ৩০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, “চালকেরা দু’জনের বেশি যাত্রী নেবেন না ঠিক করে ৩০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন। অর্থাৎ, যে রুটে চার জন যাত্রী নিয়ে গেলে ৫৬ টাকা আয় হত, সেখানে এখন ৬০ টাকা হচ্ছে।”

আরও পড়ুন: অসুস্থ ও শিশুদের প্রবেশে আপত্তি শপিং মল কর্তৃপক্ষের​

বেশি ভাড়া হাঁকার অভিযোগ উঠেছে হলুদ ট্যাক্সিচালকদের বিরুদ্ধেও। কালীঘাট মোড়ে ট্যাক্সির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি বললেন, “অ্যাপ-ক্যাব তো ছেড়েই দিন, হলুদ ট্যাক্সিও দেখছি ঝোপ বুঝে কোপ মারছে। দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি, সকলেই উল্টোপাল্টা ভাড়া চাইছেন!” লেক টাউনের বাসিন্দা স্নেহা সরকারের অভিজ্ঞতা— “মায়ের কোমরে অস্ত্রোপচার হবে। বাইপাসের একটি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে হলুদ ট্যাক্সির চালক ৮০০ টাকা ভাড়া চাইলেন। অথচ এই দূরত্ব মিটারে গেলে কমবেশি ২৫০ টাকা ওঠার কথা। এত বেশি ভাড়া কেন, সেই প্রশ্নে ওই চালক বললেন, ‘লকডাউনে বসে ছিলাম, সেই টাকাটা তুলে নিতে হবে তো’!”

যাত্রীদের দাবি, এই ক’দিন শহরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত অ্যাপ-ক্যাব মিলছিল। তবে গাড়ির সংখ্যা কম। তাই আগাম গন্তব্য জেনে তবেই চালকেরা যাত্রীকে নিতে আসছেন। শেষ ‘ট্রিপে’ চাওয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা। শহরের অটো ও ট্যাক্সি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা মানা চক্রবর্তী বলেন, “লকডাউনে অনেক চালক দেশে চলে গিয়েছেন, তাই ট্যাক্সি পেতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে।” এ দিন সরকারের তরফে নয়া নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, এ বার থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অ্যাপ-ক্যাব চালানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

তবে ভাড়া নিয়ে অটোচালকদের জুলুমের অভিযোগ নিয়ে মানাবাবুর বক্তব্য, “বাড়তি ভাড়া তো কেউ এমনি এমনি চাইছেন না! তিন মাস ওঁদের অনেকেই না খেয়ে ছিলেন। যাত্রীদের উচিত ওঁদের একটু বেশি ভাড়া দেওয়া।” কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার যদিও বলছেন, “বেশি ভাড়া চাওয়া বরদাস্ত করা হবে না। সমস্ত ট্র্যাফিক গার্ডকে এ ব্যাপারে কড়া হতে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে।”

তবে ভুক্তভোগীদের পাঁচ দিনের অভিজ্ঞতা বলছে, নির্দেশ যা-ই থাকুক, ভোগান্তি চলছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lockdown in West Bengal App Cab Taxi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE