Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
North 24 Parganas

‘সবাই-ই তো বেরিয়েছে, তাই আমিও বেরোলাম’

বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার পর থেকে এ ভাবেই লকডাউন শুরু হল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন এলাকায়।

অবাধ: এলাকা কন্টেনমেন্ট জ়োন, তাই বসানো হয়েছে গার্ডরেল। বিকেল পাঁচটার পরেও অবশ্য ছেদ পড়েনি মানুষের যাতায়াতে। বৃহস্পতিবার, বারাসতের বিবেকানন্দ রোডে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

অবাধ: এলাকা কন্টেনমেন্ট জ়োন, তাই বসানো হয়েছে গার্ডরেল। বিকেল পাঁচটার পরেও অবশ্য ছেদ পড়েনি মানুষের যাতায়াতে। বৃহস্পতিবার, বারাসতের বিবেকানন্দ রোডে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০ ০৪:৩৭
Share: Save:

কোথাও পুলিশকর্তারা দাঁড়িয়ে থেকে ব্যারিকেড করে দিলেন, কোথাও আবার স্থানীয় বাসিন্দারাই করলেন সেই কাজ। কোথাও আবার দেখা গেল, বাসিন্দারা জানেনই না যে, তাঁদের এলাকা কন্টেনমেন্ট জ়োন হয়েছে কি না। ফলে সে সব এলাকায় অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক থাকল জনজীবন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার পর থেকে এ ভাবেই লকডাউন শুরু হল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন এলাকায়।

এ দিন সকাল থেকে বিভিন্ন রাস্তা ও বাজারে ভিড় থাকলেও বিকেল ৫টার পরে দমদম, নিউ ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রাম এবং বারাসতের কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলিতে ব্যারিকেড করে দেয় পুলিশ। মাইকে প্রচারও চালানো হয় ওই সব এলাকায়। কোথাও আবার স্থানীয় বাসিন্দারাই উদ্যোগী হয়ে ব্যারিকেড বসিয়ে দিয়েছেন গলির মুখে।

এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ বারাসত পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মিত্রপাড়ায় দেখা গেল, স্থানীয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যশোর রোডের মুখে বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে পুলিশ। একই ছবি দেখা গেল কাজিপাড়া ও সুকান্তনগরের মতো এলাকাতেও। শেঠপুকুর এলাকায় দেখা গেল, নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দোকান বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছেন বারাসত পুলিশ জেলার সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, কন্টেনমেন্ট জ়োনে কোনও দোকানপাট খোলা যাবে না। এলাকার বাইরে বেরোনোও বারণ। লকডাউনের মধ্যে কারও খাবারের প্রয়োজন হলে স্থানীয় পুরসভাগুলি সেই ব্যবস্থা করবে বলে বাসিন্দাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ট্যাক্সির ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ চালকদের​

এর ঠিক উল্টো ছবি শহরতলির দত্তপুকুর, আমডাঙা, দেগঙ্গার মতো এলাকায়। সেখানে কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলিতে অধিকাংশ বাসিন্দাই লকডাউন মানেননি। কোথাও চায়ের দোকানে চলেছে আড্ডা। কোথাও দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে হয়েছে জমায়েত। দত্তপুকুর থানার বহেড়া এলাকা কন্টেনমেন্ট জ়োন হলেও সন্ধ্যার পরে চায়ের দোকান-সহ বিভিন্ন জায়গায় জমায়েত দেখা যায় স্থানীয়দের। মাস্ক না-পরেই চায়ের দোকানে বসে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গির আলম। কেন? তাঁর উত্তর, ‘‘কেউ তো বলেনি যে, এখানে লকডাউন। সবাই-ই তো বেরিয়েছে, তাই আমিও বেরোলাম।’’

এ দিন বিকেল ৫টার পরে বারাসত-টাকি রোডের দেগঙ্গা বাজার ও বেড়াচাঁপা বাজারে দেখা গেল, হোটেল, রেস্তরাঁ, মিষ্টি ও পানের দোকানে উপচে পড়ছে ভিড়। কোথাও আবার ব্যারিকেড করে পাহারায় রয়েছে পুলিশ। এ দিকে, বারাসত মাছের আড়ত সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল বলে ঘোষণা করায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন। ওই আড়তের ব্যবসায়ী শুভেন্দু শাসমল বললেন, ‘‘বারাসত শহরের মধ্যে এ রকম একটি হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল করা ঠিক হয়নি। বরং ভিতরে যেখানে জনবসতি কম, সেখানে কোভিড হাসপাতাল করলে সুবিধা হত।’’

এ দিন লকডাউন শুরু হওয়ার আগে থেকেই বেসরকারি বাস, অটো বা টোটো রাস্তা থেকে হাওয়া হয়ে যায়। যার জেরে প্রবল ভোগান্তির মুখে পড়েন অসংখ্য মানুষ, বিশেষ করে নিত্যযাত্রীরা। মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা তপন চৌধুরী বলেন, ‘‘সবার পক্ষে নিজের গাড়ি করে কলকাতায় কাজে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই খুব সমস্যায় পড়েছি।’’ বামনগাছির মালিয়াকুড়ের বাসিন্দা, পেশায় একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী শুভঙ্কর ভদ্র বলেন, ‘‘সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাস ধরে অফিস যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু কোনও বাস পাইনি। অফিসেও যাওয়া হয়নি। অফিসে না-গেলে আমার এক দিনের বেতন কাটা যাবে।’’

জেলা পুলিশের দাবি, এখনও মাস্ক ছাড়া বেশ কিছু মানুষকে ঘুরতে দেখা গেলেও সেই সংখ্যাটা আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার বলেন, ‘‘লকডাউনের সময়ে রাস্তার মুখে পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা হয়েছে। বাড়ি থেকে অযথা বেরোলে কিংবা মাস্ক ছাড়া দেখা গেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

North 24 Parganas Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE