Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বৈশাখী রোদের সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছে ভোট-প্রচারের জোশ

ভোটযুদ্ধের নতুন মুখ কংগ্রেস প্রার্থী মিতা চক্রবর্তীর ভাগ্যে আবার ছুটির দিনে রোড শোয়ের দরকারি পুলিশি ছাড়পত্রটাই ফস্কে গিয়েছে। শহরের আর এক প্রান্তে কলকাতা দক্ষিণের প্রার্থী মিতা তবু অকুতোভয়।

বাগুইআটিতে টোটো নিয়ে প্রচারে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী। রবিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

বাগুইআটিতে টোটো নিয়ে প্রচারে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী। রবিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫৯
Share: Save:

ভোটের বাজারে কেউ ছত্রপতি, কেউ বা পদাতিক!

রবিবার সকালে, চারবারের পোড়খাওয়া সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহচর অতীন ঘোষ ডগমগ। প্রার্থীর সঙ্গে খোলা জিপে শ্যামবাজারের মোড় থেকে ফড়েপুকুরে ঢুকতে ঢুকতে ডেপুটি মেয়র অতীন হাসলেন, ‘‘আমাদের কপাল ভাল। রবিবারের ছুটিতেই আমার ওয়ার্ডে রোড-শোয়ের দিনটা পড়েছে। কাজের দিন হলে পাড়ায় এত ভিড় হত না!’’ উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার-হাতিবাগানে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের অলিগলি ঘুরতে তাই খোলা জিপে আসীন প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গী অতীন ও মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। সাংসদের দু’জন নিরাপত্তারক্ষী তাঁদের মাথার উপরে দু’টো প্রকাণ্ড লাল-নীল-হলুদ ছাতা মেলে ধরেছেন।

ভোটযুদ্ধের নতুন মুখ কংগ্রেস প্রার্থী মিতা চক্রবর্তীর ভাগ্যে আবার ছুটির দিনে রোড শোয়ের দরকারি পুলিশি ছাড়পত্রটাই ফস্কে গিয়েছে। শহরের আর এক প্রান্তে কলকাতা দক্ষিণের প্রার্থী মিতা তবু অকুতোভয়। ‘‘বয়স খানিক কম হওয়ার অ্যাডভান্টেজ কেন ছাড়ব,’’ বলে গটগটিয়ে হাঁটছিলেন পেশায় কর্পোরেট কর্ত্রী ভদ্রমহিলা। পায়ে হাওয়াই চটি নাকি! মজা করে প্রশ্নটা করতেই মিতা হাসলেন, ‘‘কারও অনুপ্রেরণায় হাওয়াই চটি না পরলেও হাওয়াই চটিতে আমার হাঁটতে সমস্যা নেই। এখন চামড়ার চপ্পল পরেই হাঁটছি।’’ তবে একটু থেমে কবুল করলেন, ইদানীং প্রচলিত শাড়ির সঙ্গে পায়ে স্নিকার্স পরার ফ্যাশনবোধটা ঠিক মেনে নিতে পারেন না তিনি।

কলকাতা দক্ষিণের জাঁদরেল ভোটস্পর্ধী শাসক দলের মালা রায়কেও কিন্তু ঢাকুরিয়া সেতুর নীচে এসে জিপ থেকে নামতে হল। মন্ত্রী জাভেদ খানকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চাননতলা বস্তির অলিগলিতে ঘুরে জলের সমস্যার সাতকাহন শুনলেন তিনি। মাঝে একটু বিরতি, কাচের গেলাসের লাল চা কিংবা আখের রস! মিতাও কিলোমিটার দু’-তিন পদব্রজে চষে বেড়িয়ে ডাবের জল খাবেন বলে থেমেছেন। কলকাতা উত্তরের বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহও সকালটা তাঁর পদযুগলের উপরেই ভরসা রেখেছিলেন। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরের সামনে হাঁটতে শুরু করে আশপাশের বস্তি এলাকার আঁতিপাতি হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেলা ১১টা নাগাদ মুরলীধর সেন লেনে পার্টির রাজ্য অফিসে ঢুকে পড়েছেন।

ভোট মানে তো শুধু দলে দলে টক্কর নয়। বৈশাখের গনগনে রোদের সঙ্গে যুদ্ধটাও যুদ্ধ বটে! রোড শোয়ে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথার ছাতার মতোই খোলা জিপে মালা রায় তাঁর মুখের সামনে বিদ্যুৎচালিত ফ্যানের ব্যবস্থা করেছেন। কলকাতা দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বসুও ছাতার আশ্রয় নিয়েছেন। তবে তাঁর দলের বাইকবাহিনীর সওয়ারিদের কারও গেঞ্জির পিঠে জ্বলজ্বল করছে ‘হাউ ইজ় দ্য জোশ’! তলায় রোম্যান হরফেই লেখা, ‘হাই স্যর’!

ভোট উপলক্ষে ‘জোশ’-এর বিচিত্র নমুনা অবশ্য উত্তর কলকাতায় অতীন ঘোষও দেখিয়েছেন। হাতিবাগানে বন্ধ দর্পণা সিনেমার সামনে দাঁড়িয়ে অতীন পরিচালিত সুদীপের রোড শোয়ে প্রথমে মহিলা ঢাকশিল্পীদের চোখে পড়ল। তার পরে মাথায় ঘটি নিয়ে আদিবাসী নাচের শিল্পীর দল, গাড়ি থেকে স্প্রে করে রঙিন কাগজের বৃষ্টি, দু’জন রণপা শিল্পীর পিছুপিছু জোড়াফুল চিহ্নধারী শাড়িসজ্জিতা বাহিনী! সব শেষে দেখা গেল, চেনা মুখের এক যুবককে দেখে জিপ থেকেই তাঁর হাতে চাঁপা ফুল তুলে দিচ্ছেন সহাস্য সুদীপ।

এ সব চটকে না থাকলেও রবিবাসরীয় প্রচারের ‘জোশ’-এ বামেরাও কম যাচ্ছেন না।

সকাল থেকে সন্ধ্যা, কার্যত নাগাড়ে প্রচার করছেন কলকাতা উত্তরের প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষ। একটা ছোট মালবাহী গাড়িতে চেপেই সকালটা বেলেঘাটা এলাকার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে নিলেন তিনি। কলকাতা দক্ষিণের সিপিএম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায় তখন জিপে কবরডাঙা থেকে মল্লিকপুরের দিকে জনসংযোগ করছেন। একটু বেলা বাড়লে ১৪২ নম্বর ওয়ার্ডে কৃষ্ণপুরে পৌঁছেছেন নন্দিনী। অনেক দিন বন্ধ থাকা একটা পার্টি অফিস খোলা হল তাঁর উপস্থিতিতে।

এ দিন দুপুরে হাজরার কাছে মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াত স্ত্রীর শ্রাদ্ধবাসরেও রাজ্যের শাসকদের নেতা-প্রার্থীর চাঁদের হাট। ভোট-সৈনিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অনেকেই আগাম অভিনন্দন পর্যন্ত জানিয়ে বসলেন। ঘরে-বাইরে, সকাল-সন্ধে কলকাতার রোজনামচা জুড়ে এখন ভোট আর ভোট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE