ফাইল চিত্র।
প্রস্তুতি পুরোদমে সারা হয়ে গিয়েছে। আলোচনাসভা, বক্তৃতা, পদযাত্রা —বাদ নেই কিছুই। বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব হেরিটেজ দিবস’ উদ্যাপন করতে পিছিয়ে নেই কলকাতা। কিন্তু বাদ সাধতে পারে নির্বাচনী বিধি। তাই আগেভাগে সমস্ত নিয়ম খুঁটিয়ে দেখে নিচ্ছেন একাধিক সরকারি সংস্থার কর্তারা। এমনিতে হেরিটেজ দিবস পালনে কোনও রকম বিধিনিষেধ থাকার কথা নয়, কিন্তু তা-ও কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না প্রশাসনের একাংশ। তাই নির্বাচনী প্রচারের আবহেই এ বছরের শহরে ‘বিশ্ব হেরিটেজ দিবস’ পালন হতে চলেছে।
তবে সেই আবহেই একটি প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে ছাড়া যে শহরের হেরিটেজ-চেতনাই এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়নি, সেখানে একদিনের জন্য হেরিটেজ দিবস পালনের সার্থকতা কোথায়? বিষয়টি আলাদা মাত্রা পেয়েছে হেরিটেজ সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞেরাও একই কথা বলায়। তাঁরা সরাসরি কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটির ঘোষণা করা হেরিটেজ মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের আরও প্রশ্ন, রাজ্য হেরিটেজ কমিশন ও পুরসভার হেরিটেজ কমিটির কাজের পরিধিও যেখানে বিতর্কের বিষয়, সেখানে শুধু একটি দিন পালন করে বাস্তবে কিছু কি ফারাক হবে?
রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের তরফে বৃহস্পতিবার একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতি বছরই কমিশন এই দিনটায় বিশেষ কিছু অনুষ্ঠান করে। তবে চলতি বছরে লোকসভা নির্বাচন থাকায় কমিশন আগে সমস্ত নিয়মকানুন খতিয়ে দেখেছে যে, নির্বাচনী বিধিতে কোথাও আটকাবে কি না। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘এটা এমনিতে দৈনন্দিন কাজ। তবু আমরা নিয়ম দেখে নিয়েছিলাম। নির্বাচনী বিধিতে আটকাচ্ছে না দেখেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’’ একই ভাবে সে দিন আলোচনাসভার আয়োজন করেছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কলকাতা বন্দর-সহ একাধিক সংস্থা। কলকাতা বন্দরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এখানে নির্বাচনী বিধিতে আটকানোর কোনও কথা ছিল না। তবু আদর্শ আচরণবিধির কথা মাথায় রেখে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই অনুষ্ঠান শেষ করে দেব।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তবে হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, কলকাতার মতো শহরে হেরিটেজের বিষয়টি একমাত্রিক নয়, বরং জটিল। ফলে যত ক্ষণ না হেরিটেজ সংরক্ষণের এক বিকল্প মডেল তৈরি হবে, তত ক্ষণ সভা-সেমিনার করে কিছু হবে না। এ শহরে অনেক পুরনো বাড়িরই হেরিটেজ মর্যাদা রয়েছে। কিন্তু সেই বাড়ির বর্তমান বাসিন্দারা হেরিটেজ তালিকা থেকে তাঁদের বাড়ি বাদ দিতে মুহুর্মুহু পুরসভায় আবেদন করছেন। তা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও চলছে। কারণ, বাড়ি একবার হেরিটেজ ঘোষণা হলে সেটি বিক্রি তো দূর অস্ত্, তা সারাতেও পুর হেরিটেজ কমিটির অনুমতির প্রয়োজন হয়। অথচ আর্থিক সমস্যায় পড়া সেই পরিবারের কাছে বাড়িটিই সম্বল। ফলে সে সব ক্ষেত্রে হেরিটেজ রক্ষায় একটি সার্বিক নীতির প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সেক্রেটারি-কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বিশ্ব হেরিটেজ দিবস উপলক্ষে সেমিনার, সভা হচ্ছে, ঠিকই আছে। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে যে হেরিটেজ মনস্কতা কিন্তু সারা বছরের ব্যাপার। শহরের হেরিটেজ কী ভাবে রক্ষা করা যাবে, বিকল্প কী নীতি হতে পারে, তা নিয়ে সকলকে আলোচনায় বসতে হবে।’’ রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সদস্য তথা হেরিটেজ স্থপতি পার্থরঞ্জন দাশ জানাচ্ছেন, হেরিটেজ-নীতির সঙ্গে যত ক্ষণ না বিকল্প আর্থিক মডেল সংযুক্ত করা যাবে, তত ক্ষণ হেরিটেজ রক্ষা করা যাবে না। অর্থের প্রয়োজন থাকলেও কোনও হেরিটেজ বাড়ির বাসিন্দারা হয়তো তাঁদের বাড়ি বিক্রি করতে পারছেন না, আইনে আটকাচ্ছে। সে সব ক্ষেত্রে বাড়ির মালিকদের বিকল্প উপার্জনের পথ দেখাতে হবে। পার্থরঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‘প্রয়োজনে পুর বিল্ডিং আইনও সংশোধন করতে হবে। যাতে সেই বাড়িতে কোনও দোকান বা রেস্তরাঁ তাঁরা চালাতে পারেন। না হলে শুধু হেরিটেজ মর্যাদা ঘোষণা করে কিন্তু শহরের হেরিটেজ-চেতনা আসবে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy