প্রতীকী ছবি।
শান্ত, নিঝুম পাড়া। রাজারহাট-নিউ টাউন বিধানসভা এলাকার তথাকথিত সিন্ডিকেট পাড়ায় নির্বাচনের সময়ে সিন্ডিকেট চাঁইদের যেমন উপস্থিতি কিংবা সক্রিয়তা চোখে পড়ে, তেমনটা এ বার দেখা যাচ্ছে না। চোখে পড়ছে না মোটরবাইকের দাপাদাপি কিংবা সিন্ডিকেটের অফিসগুলির সামনে দাঁড় করানো বাইকের ভিড়। অফিসগুলিতে সিন্ডিকেটের ছোট-বড় দাদাদের জটলাও উধাও। কোথায় গেলেন সবাই?
দুপুর ১টা। নিউ টাউন বিধানসভার মহিষবাথানের ঢালিপাড়ায় সমীর ওরফে ভজাই সর্দারের অফিসে গিয়ে দেখা গেল অফিস তালাবন্ধ। দীর্ঘদিনই নিউ টাউনের ওই এলাকায় ভজাইবাবু সিন্ডিকেট ব্যবসার বেতাজ বাদশাহ বলেই পরিচিত। প্রতি নির্বাচনের আগেই তাঁর ওই অফিসে থেকেই এলাকার ভোটের রণকৌশল ঠিক হয়। অথচ এ বার অফিসই বন্ধ। লোকজনেরও তেমন দেখা নেই।
অফিসের বাইরে একটি গাছের নীচে বাঁশের বেঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সমীর সর্দারের ছেলে প্রসেনজিৎ সর্দার। সঙ্গে কয়েক জন যুবক। প্রসেনজিৎ আবার বিধাননগর পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ (ক্রীড়া)।
বাবা কোথায়? প্রসেনজিৎ বললেন, ‘‘বাবা, ভেলোরে গিয়েছেন চিকিৎসা করাতে। শরীর ভাল নয়। ভোটের পরে ফিরবেন।’’
যদিও প্রসেনজিতের দাবি মানতে নারাজ অনেকে। কারও কারও কথায়, ‘‘ভজাই এলাকার আশপাশেই কোথাও গা ঢাকা দিয়েছেন। ভোটের দিন আড়াল থেকেই সক্রিয় থাকবেন।
সমীরবাবুর অনুগামীদেরও কেন নির্বাচনের কাজে দেখা যাচ্ছে না?
অভিমান ভরা গলায় প্রসেনজিতের জবাব, ‘‘ভোটের কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমাদের কেউ ডাকার প্রয়োজনই মনে করল না। আফতাবউদ্দিন তো এখন ভোটের দায়িত্বে। তবে আমরা তৃণমূলের সৈনিক হিসেবে ভোট দিতে যাব।’’
বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ছে রাজারহাট-নিউ টাউন বিধানসভা। বিধাননগর পুরসভার ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায় এবং নিউ টাউনে তৃণমূলের যুব নেতা তথা রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ আফতাবউদ্দিন নির্বাচনী প্রচারের মূল দায়িত্বে। এই আফতাবউদ্দিনও কিন্তু নিউ টাউনের সিন্ডিকেটে এক সময়ে অন্যতম চাঁই হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গোষ্ঠীগত ভাবে তিনি আবার ভজাইবাবুদের বিরোধী বলেই এলাকায় পরিচিত।
আফতাবউদ্দিনকে অবশ্য দেখা গেল নিজের অফিসে বসে কর্মীদের নিয়ে রবিবার ভোটের রণকৌশল তৈরি করতে। আফতাব বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার হয়েছে। আমি সিন্ডিকেট ব্যবসার সঙ্গে কোনওদিন জড়িত ছিলাম না। আমি রাজারহাট নিউ টাউন তৃণমূলের যুব সভাপতি।’’
সিন্ডিকেট ব্যবসায় বহুল ভাবে নাম জড়ানো সইফুল ইসলাম জানান, তিনি রাজারহাট বিষ্ণুপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে দলের হয়ে কাজ করছেন। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে ‘সিন্ডিকেটের চাঁই’ হিসেবে দেগে দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, ভোটের সময়ে কোনওদিনই তিনি এলাকায় দাপট দেখাতেন না।
প্রশ্ন উঠেছে, ভোটের আগে এতটা নিষ্পৃহ কেন এক সময়ের সিন্ডিকেটের চাঁইরা? স্থানীয়দের একাংশের কথায়, এও এক ধরনের গোষ্ঠী কোন্দল। বিরোধী গোষ্ঠীর হাতে এলাকায় নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব চলে যাওয়ায় ভজাই সর্দার, সইফুলেরা এ পর্যন্ত তেমন ভাবে ভোটে নেই। ফলে তাঁদের বাহিনীর সক্রিয়তাও চোখে পড়ছে না। নিউ টাউনে এমন ছবি এই প্রথম বলেই দাবি স্থানীয়দের।
তা হলে কি রাজারহাট নিউ টাউন এলাকায় দলীয় বিভাজনের জন্যই সিন্ডিকেট দাদারা চুপচাপ? দলীয় বিভাজনের জন্যই কি এলাকায় ঢুকছেন না সিন্ডিকেটের দাদারা?
এলাকার লোকজনের একাংশ মনে করছেন কে কতটা চুপ থাকবেন সেটা রবিবার, ভোটের দিন বোঝা যাবে। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বের বিভাজনকে ঘিরে সিন্ডিকেট পাড়ার দাদাদের মধ্যে অশান্তির আশঙ্কাও একেবার উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে ভোটের বাজারে সিন্ডিকেট পাড়ার এমন ‘মৌন’ পরিবেশ ঝড়ের পূর্বাভাস বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy