Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

কেউ প্রচারে, কেউ বা নিলেন ‘ছুটি’

সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় শ্রীরামপুরের উত্তরপাড়া থেকে শুরু হওয়া ভোটপ্রার্থী কল্যাণের মিছিল রাত পৌনে ন’টা নাগাদ চাঁপদানি মোড়ে যখন থামল, তখন জোর হাওয়া বইছে।

তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় । শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় । শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৯ ০১:৪৭
Share: Save:

ফণী আর কত দূর!

শুক্রবার দুপুর থেকে টিভি খুলে বসে ছিলেন তৃণমূলের দু’বারের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এক বার টিভি দেখছেন, পরক্ষণেই সামনের টেবিলে রাখা ডায়েরি হাতে তুলে নিয়ে উসখুস করছেন। বিকেল চারটে নাগাদ বিরক্ত মুখে সঙ্গীদের বললেন, ‘‘ছাড় তো! ফণী-টনি দেখা যাবে। গাড়ি বল, প্রচারে বেরোব।’’

সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় শ্রীরামপুরের উত্তরপাড়া থেকে শুরু হওয়া ভোটপ্রার্থী কল্যাণের মিছিল রাত পৌনে ন’টা নাগাদ চাঁপদানি মোড়ে যখন থামল, তখন জোর হাওয়া বইছে। সঙ্গে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। ঘামে ভেজা পাঞ্জাবির হাতায় মুখের জল মুছে কল্যাণ বললেন, ‘‘সমস্ত কর্মসূচি আমি ডায়েরিতে লিখে রাখি। সোমবার ভোটের আগে শুক্রবার সন্ধ্যাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রচার বাতিল করা যায় নাকি?’’ এর পরে যুদ্ধ জিতে ওঠার কায়দায় বললেন, ‘‘ঝড় যে সামলাতে পারবে, সে-ই তো মানুষ। ঝড়ের মধ্যেই জোড়া ফুলের মিছিল হয়েছে।’’

রাত পোহালেই রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোটগ্রহণ। তার মধ্যেই শিরে সংক্রান্তি হিসেবে উদয় হয়েছে ফণী। প্রচারে বেরিয়ে বহু প্রার্থীকেই লড়তে হল ফণীর দাপটে সব এলোমেলো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার সঙ্গেও। উপায় না দেখে কল্যাণ শেষ মুহূর্তের প্রচার সারলেও অনেকেই শুক্রবার আর প্রচার-গাড়ি ‘স্টার্ট’ দেননি। যেমন, বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী নুসরত জাহান। শুক্রবার দিনভরের প্রচার তো বটেই, ‘ফণীর ভয়ে’ শনিবারের প্রচারও বাতিল করেছেন তিনি।

নুসরত জানান, বৃহস্পতি ও শুক্রবার বাঁকুড়া আর পুরুলিয়ায় প্রচার ছিল তাঁর। বৃহস্পতিবার নির্ধারিত সূচি মেনে বাঁকুড়ায় প্রচার করলেও শুক্রবার আর বেরোতে পারেননি। কর্মসূচি বাতিল করে কলকাতার নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে চলে এসেছেন অভিনেত্রী। ভোটের আগে হাতে থাকা সময় নিয়ে চিন্তিত নুসরত বলেন, ‘‘শনিবার বসিরহাটে আমার কেন্দ্রে প্রচার করার কথা ছিল। হল না। যে সময়ে ঝড় আসবে বলে শুনছিলাম, সেই সময়েই তো আমার প্রচারে বেরোনোর কথা ছিল। বাতিল করলাম। তবে রবিবার থেকে আবার পুরোদমে প্রচার করতে হবে। একটা দিনও অনেক।’’ সময়টা কী করে কাটল? অভিনেত্রী বললেন, ‘‘এখানে কিছু কাজ ছিল। ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে এক দিনের ছুটিটা কিন্তু মন্দ লাগল না!’’

ছুটি নেওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও ফণীর জন্য তাঁকেও প্রচার বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে জানালেন যাদবপুরের বাম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার সোনারপুরে জমিয়ে প্রচার করার ইচ্ছে ছিল। সকালে বেরিয়েওছিলাম। কিন্তু বৃষ্টি নামায় বন্ধ করে দিতে হল। আকাশের যা চেহারা দেখলাম, তাতে বিকেলের পরে আর বেরোনোর সাহস হল না। কর্মীদের জীবনটা তো আগে।’’ প্রাক্তন মেয়র এর পরে হেসে বললেন, ‘‘কিন্তু সময় এগিয়ে আসছে। এখন একটা দিনও অনেক।’’

সময় যে এখন খুব দামি, তা বুঝতে পেরেই ফণীকে বিশেষ পাত্তা দেননি বলে জানিয়েছেন বিকাশবাবুর দলেরই সদস্য তথা কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের বাম প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষ, তৃণমূলের রত্না দে নাগ বা বিজেপি-র লকেট চট্টোপাধ্যায়রা। কনীনিকাকে দেখা গিয়েছে ছাতা মাথায় প্রচার সারতে।

কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায় আবার মনে করেন, ফণীর জেরে প্রচার বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি হয়নি। তিনি জানালেন, আইনজীবীদের নিয়ে মিছিলের পাশাপাশি শুক্রবার ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডে রোড শো এবং পথসভা করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ফণী রাত ৯টার পরে আসবে বলল। তার আগে ফুরফুরে হাওয়ায় প্রচারটা ভালই হয়েছে।’’ এর পরেই তাঁর শ্লেষ, ‘‘ফণী তো আর এল না। ভাগ্যিস, প্রচারটা বাতিল করিনি।’’ দমদম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের আবার মত, ‘‘ফণী নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি হয়েছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছুই হয়নি।’’

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেও তো ফণীর জন্য রাতভর উদ্বিগ্ন সময় কাটিয়েছেন বলে খবর? প্রশ্নকর্তাকে থামিয়ে দিয়ে তৃণমূল প্রার্থীর যুক্তি, ‘‘তিনি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর উদ্বিগ্ন হওয়া সাজে। বাকিদের নয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE