Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

নিয়মকে তুড়ি মেরে ‘শান্তিপূর্ণ’ ভোট কলকাতা উত্তরে

সকালে এন্টালিতে ভোট পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহ। তৃণমূল সমর্থকেরা তাঁকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়েন বলে অভিযোগ।

বুথের বাইরে জটলা। উত্তর কলকাতায় ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের সামনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

বুথের বাইরে জটলা। উত্তর কলকাতায় ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের সামনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০২:২৫
Share: Save:

ভোটকেন্দ্রের সামনে লম্বা লাইন। সেই লাইনের তদারকি করছেন হলুদ পাঞ্জাবি পরা এক মাঝবয়সী ব্যক্তি। তিনি কে? প্রশ্ন করতেই জবাব এল, ‘‘আমি এলাকার লোক।’’ কথা বলার ফাঁকেই নজরে এল, বুকে সাঁটা রয়েছে কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর নাম।

বেলেঘাটার একটি স্কুলের সামনে হলুদ পাঞ্জাবি পরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে জড়ো হয়েছিলেন আরও অনেকেই। নিয়ম বলছে, ভোটকেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকে। অর্থাৎ, পাঁচ জনের বেশি মানুষের জমায়েত বেআইনি। এ দিন শুধু বেলেঘাটা নয়, উত্তর কলকাতার বেশির ভাগ বুথ ঘুরেই দেখা গিয়েছে, ওই নিয়ম রয়েছে শুধু খাতায়-কলমেই। রাজাবাজারের ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের ভিতরেই রীতিমতো চেয়ার, বেঞ্চ পেতে আসর জমাতে দেখা গিয়েছে লোকজনকে। যাঁরা নিজেদের তৃণমূল সমর্থক বলে দাবি করে ভোটকেন্দ্রের সামনেই সিপিএম প্রার্থীর উপরে চড়াও হন। সেই জমায়েত কমিশনের সাধারণ পর্যবেক্ষক টি ভি সুভাষের নজরে এলেও তিনি মুখ খোলেননি। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বুথের দেওয়ালে তৃণমূলের পোস্টার নজরে এসেছে। কী ভাবে সেই পোস্টার এল, তারও সদুত্তর মেলেনি।

নিয়মের এমন বহু ‘ফাঁক’ নিয়েই রবিবার কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের ভোট উতরেছে মোটের উপরে শান্তিতে। সাতসকালে সিপিএমের এজেন্টদের মারধরের অভিযোগ, সিপিএম প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষ ও বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহকে ঘিরে বিক্ষোভ এবং বেলায় রবীন্দ্র সরণিতে বোমা ফাটানোর অভিযোগ থাকলেও বড় মাপের গোলমালের খবর নেই। তবে সারা দিন তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখা মেলেনি। রবীন্দ্র সরণিতে বোমা ফাটার কথা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে লালবাজার। তবে সকাল থেকে ইভিএম-বিভ্রাট এবং নানা বিভ্রান্তি ছিল। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ভোটারের কোন বুথ, তা ঠিক মতো লেখা না থাকায় ভোটারেরা বিভ্রান্ত হয়েছেন। মানিকতলা এলাকার সিপিএম নেতা চন্দন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের যে ল্যান্ডলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে, তাতে যোগাযোগ করা যায়নি।

এ দিন সকালেই উত্তেজনা ছড়ায় বেলগাছিয়া এলাকায়। সিপিএমের অভিযোগ, সকাল সওয়া সাতটা নাগাদ কলকাতা পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডে মনোহর অ্যাকাডেমি স্কুলে তাদের দুই পোলিং এজেন্ট দেবাশিস সেন ও চন্দন বসুকে মারধর করে বুথ থেকে বার করে দিয়েছে তৃণমূল। সব থেকে বেশি জটলা চোখে পড়েছে বেলেঘাটা ও বেলগাছিয়া এলাকায়। মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজের ভোটকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে একাধিক জমায়েত চোখে পড়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেই জমায়েত সাময়িক ভাবে সরলেও বাহিনী এলাকা ছাড়তেই ফিরে এসেছে জমায়েত।

সকালে এন্টালিতে ভোট পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহ। তৃণমূল সমর্থকেরা তাঁকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়েন বলে অভিযোগ। সেই উত্তেজনা মিটতে না-মিটতেই সাড়ে ১১টা নাগাদ পোস্তা এলাকার রবীন্দ্র সরণিতে একটি ভোটকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে বোমা পড়ার অভিযোগ ওঠে। ঘটনাস্থল থেকে স্‌প্লিন্টার কিংবা বোমার সুতলি না মিললেও রাস্তায় বারুদের দাগ এবং নাটবল্টু মিলেছে। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এন্টালি, শ্যামপুকুর ও জোড়াসাঁকো এলাকায় তৃণমূল বুথ দখল করেছে বলে অভিযোগ তোলে বিজেপি। যদিও দুপুরের পরে মধ্য কলকাতার জোড়াবাগান ও গিরিশ পার্ক এলাকায় গোলমাল দেখা যায়নি। ওই এলাকার বিজেপি নেতা নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘মানুষ ভোট দিতে পেরেছে। আমি নিজে একা একা ঘুরেছি। কোনও বাধা পাইনি।’’ কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের ভোট নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করা হলে তিনি এসএমএস করতে বলেন। এসএমএস করা হলেও রাত পর্যন্ত তার জবাব আসেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE