প্রতীকী ছবি।
কলকাতার নির্বাচনে নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে তৈরি ‘কুইক রেসপন্স টিম’ (কিউআরটি) নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকছে ডিভিশনাল ডিসি-দের উপরে। লালবাজারের অফিসারদের বদলে তাঁরাই প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যেতে নির্দেশ দেবেন। এর জন্য প্রতিটি থানায় তিন বা চারটি কিউআরটি দেওয়া হয়েছে, যাতে এক সেকশন কেন্দ্রীয় বাহিনী বা আট জন জওয়ান থাকবেন। তাঁদের সাহায্য করার জন্য থাকছেন কলকাতা পুলিশের এক জন করে লাঠিধারী কনস্টেবল। পুলিশ সূত্রের খবর, গত দু’টি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায় যাবে বা কোথায় টহল দেবে, তা নিয়ন্ত্রণ করত লালবাজারের বিশেষ কন্ট্রোল রুম। কিন্তু এ বারই সেই ব্যবস্থায় বদল ঘটছে। পুলিশের কর্তাদের দাবি, ডিভিশনাল কন্ট্রোল রুম পুরো বিষয়টি নিয়ে লালবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। লালবাজার জানিয়েছে, মঙ্গলবার ফের শহরে রুট মার্চ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, আগামী রবিবারের ভোটের জন্য ১৪৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে শহরে। এর মধ্যে দশ কোম্পানিকে বাদ দিয়ে বাকি ১৩৭ কোম্পানিকে ৯টি ডিভিশনে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তারাই ভোটের দিন কুইক রেসপন্স টিমের সদস্য হয়ে এলাকায় নজরদারি চালাবে। শহরে এমন ৪০টি থানাকে বেছে নেওয়া হয়েছে, যেখানে কিউআরটি থাকবে তিনটে করে। বাকি থানাগুলিতে দু’টি করে কিউআরটি মোতায়েন রাখা হবে। ডিভিশন থেকেই তাদের তদারকি চলবে। বুথের ভিতরে কলকাতা পুলিশের অস্ত্র নিয়ে প্রবেশাধিকার না থাকায় বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য এক জন করে লাঠিধারী কনস্টেবল থাকছেন বুথের বাইরে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের তুলনায় এ বার প্রায় তিন গুণ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান নামানো হয়েছে কলকাতায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার জন্য।
লালবাজার জানিয়েছে, ভোটের দু’দিন আগে থেকেই পূর্ণ শক্তিতে রাস্তায় নামছে কলকাতা পুলিশের টহলদার বাহিনী। কিউআরটি-র মতোই শুক্রবার থেকে এলাকায় এলাকায় টহল দেবে পুলিশের ২৭৪টি ‘সেক্টর মোবাইল’ এবং ৭৫টি ‘আরটি মোবাইল’ ভ্যান। গত বিধানসভা নির্বাচনে সেক্টর মোবাইলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা থাকলেও এ বার তাতে থাকছেন কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। মূলত বুথের ২০০ মিটারের বাইরের অংশের দায়িত্ব থাকবে ওই সেক্টর মোবাইলের হাতে। তাতে এক অফিসারের নেতৃত্বে থাকছেন দু’জন করে পুলিশকর্মী। কোথাও কোনও ঘটনা ঘটলে প্রথমেই তাঁদের সেখানে পৌঁছতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে থানার অফিসারদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘আরটি মোবাইল’ বাহিনী। প্রতিদিন দুই শিফটে ওই বাহিনীর চার জন করে সদস্য থানা এলাকায় বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গা
ঘুরে দেখবেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বেছে নিয়ে ওই দিন থেকে মোতায়েন করা হচ্ছে হেভি রেডিয়ো ফ্লাইং স্কোয়াড। প্রতিটি স্কোয়াডের দায়িত্বে
থাকছেন এক জন করে ইনস্পেক্টর। স্কোয়াডের অধীনে আবার থাকছে ছ’জনের একটি করে বাহিনী। কোথাও গোলমালের খবর পৌঁছলে আরটি মোবাইল কিংবা সেক্টর মোবাইলের পরে সেখানকার অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে ওই দলটি।
লালবাজার জানাচ্ছে, ভোটের আগের দিন থেকে অবশ্য পুরো বাহিনীকেই নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্য বারের মতো। প্রতিটি থানায় এক জন অফিসারের অধীনে দু’টি করে ‘মোটরসাইকেল মোবাইল’ তৈরি করা হয়েছে। যাতে অলিগলিতে গোলমালের খবর এলে দ্রুত তাঁরা সেখানে পৌঁছতে পারেন।
কলকাতা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতায় দু’দফায় ভোট হয়েছিল। ওই বছরের তুলনায় এ বারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি এ বারই প্রথম পুলিশ পিকেট করা হচ্ছে বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকায়। যা ভোটের আগের দিন সকাল থেকেই চালু হয়ে যাবে।’’ এ ছাড়াও কলকাতা পুলিশের ন’টি ডিভিশনের ডিসি-দের নেতৃত্বে থাকছে একটি করে বিশেষ স্ট্রাইকিং টিম। যারা নিজেদের নিজেদের এলাকায় ঘুরে নজরদারি চালাবে। ডিভিশনাল ডিসি ছাড়াও ১৮ জন ডিসি-কে তিন থেকে চারটি করে থানার দায়িত্বে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা শনিবার থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন, স্ট্রং রুম পাহারা-সহ বিভিন্ন কাজের তদারকি করবেন নিজেদের টিম নিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy