শিল্পীদের সৌজন্যে দেখা মিলছে অন্য রকম দেওয়াল লিখনের। যশোর রোড, তেঁতুলতলা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
আঁকায় তেমন পারদর্শী নন, কিন্তু ভোটের সময় দেওয়াল লিখতে চোস্ত। মূলত তেমন লোকজনই ভোটের সময় দেওয়াল লেখেন। কিন্তু এ বার ভোটে প্রার্থীদের হয়ে কোথাও কোথাও দেওয়াল লেখার কাজে যুক্ত হয়েছেন উঠতি চিত্রশিল্পীরাও। যাঁদের কেউ আর্ট কলেজের ছাত্র, কেউ আবার আঁকার শিক্ষক। দেওয়াল লিখনও যে ‘শিল্প’ তা ই যেন বোঝাতে চাইছেন তাঁরা। এমনকি ভোটের সময় পারিশ্রমিক নিয়ে দেওয়াল লেখা তাঁদের রোজগারের একটি দিক হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন চিত্রশিল্পীরা।
পাতিপুকুর এলাকায় এমনই একদল শিল্পী হলেন সায়ন, সমীরণ, সুমিত, তন্ময়রা। বছর কুড়ি-বাইশের এই যুবকেরা জানান, এক জন সাধারণ দলীয় কর্মীর আঁকা দেওয়াল এবং এক জন চিত্রশিল্পীর আঁকা দেওয়ালের ফারাকটা অনেকেরই চোখে পড়ছে।
তরুণ শিল্পীদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন বারাসত কেন্দ্রের কাকলি ঘোষ দস্তিদারের নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি শঙ্করনাথ সাহা বলেন, ‘‘তরুণ এই সব শিল্পীরা হয়তো কাজ করতে সময় বেশি নিচ্ছেন, কিন্তু তাঁদের হাতের কাজ এতটাই সুন্দর ও অন্য রকম যে দেওয়ালটা দেখতে খুব ভাল লাগছে। ওঁদের অন্য রকম তুলির টানে দেওয়ালের সৌন্দর্যও বাড়ছে। মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করছে।’’
লম্বায় কুড়ি ফুট, চওড়ায় দশ ফুট। এত বড় একটি লম্বা দেওয়ালে রাজনৈতিক দলের প্রতীক, প্রার্থীর নাম এবং সেই সঙ্গে দলের শ্লোগান কিংবা দল সম্বন্ধে দু’ এক কথা লেখা— সেটা খুব একটা সহজ কাজ নয় বলেই জানাচ্ছেন উঠতি চিত্রশিল্পীরাও। বি টি রোডের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসুয়াল আর্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সায়ন দাসের কথায়, ‘‘একটি দেওয়ালকে সাজিয়ে তুলতেও চিন্তাভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। কাজটা চ্যালেঞ্জিং।’’ আবার সমীরণ বিশ্বাস বলেন, ‘‘একটি দেওয়ালে এক একটা অক্ষর কত বড় হলে পুরো দেওয়াল জুড়ে লেখাটা হবে সেটা আমাদের আগে থেকে ধারণা করে নিতে হচ্ছে। সেই ধারণা সঠিক না হলে অক্ষরগুলো সমান মাপের হবে না। দেওয়াল দেখতে খারাপ লাগবে। প্রথমে সমস্যা হলেও এখন ধাতস্থ হয়েছি।’’
উত্তরের লেকটাউন, দমদম, থেকে শুরু করে দক্ষিণের টালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট। অন্য রকম তুলির টানের এই ধরনের দেওয়াল বেশ কিছু লক্ষ করা গিয়েছে। দমদমের সিপিএম প্রার্থী নেপালদেব ভট্টাচার্যের এক নির্বাচনী প্রচারকের মতে, ‘‘হরফগুলো অন্য রকম বলে দেওয়াল লিখনটা অন্য রকম লাগে। অনেক দূর থেকে নজরে আসে। তা ছাড়া এই সব তরুণ প্রজন্মের শিল্পীরা দেওয়ালে যে রং ব্যবহার করেন তাও প্রচলিত রঙের থেকে আলাদা।’’
এমন ভাবে অন্য রকম দেওয়ালের সন্ধান করতে গিয়ে কলকাতা শহরেই নজরে এসেছে একটি রাজনৈতিক দলের প্রতীক আঁকতে গিয়ে কর্মীদের কালঘাম ছোটার অবস্থা। প্রতীক হিসেবে একটি প্রাণীর ছবি আঁকতে গিয়ে আগে সেটির জলছাপ দেওয়ালে তুলে তাতে রং করছেন সেই দলের কর্মীরা।
বিশিষ্ট শিল্পী তথা থিম মেকার অমর সরকার মনে করেন দেওয়াল লেখায় সৃষ্টিশীলতার ছোঁয়া আনতে হলে চিত্রশিল্পীদের প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘যদি শুধুমাত্র নাম আর প্রতীক চিহ্ন লিখতে হয় তবে তা দলীয় কর্মীদের দিয়ে হতে পারে। কিন্তু একটি দেওয়ালকে একটু অন্য রকম রূপ দিতে শিল্পীর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’’
শুধুমাত্র দেওয়াল লিখিয়ে হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছেন শিল্পী সুশীল নাগ। রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু নিজের নির্বাচনের প্রচারের সূচনায় তাঁকে দিয়েই দেওয়াল লেখান বলে সুশীলবাবুর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘নতুন শিল্পীদের কাজ ভাল হচ্ছে। ওঁরা দ্রুত কাজটা শিখে নিচ্ছেন। আমরাও ওঁদের দেখিয়ে দিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy