Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আতঙ্কের স্মৃতি পিছু ছাড়েনি কিছু এলাকার

গত লোকসভা ভোটের দিন ঝামেলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল উত্তর কলকাতার কাশীপুর এলাকা। সিপিএম কর্মীদের বুথ থেকে মেরে তুলে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে গণ্ডগোলের শুরু। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠি চালাতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। ভাঙচুর হয় ওই এলাকার দু’টি সিপিএম কার্যালয়।

নিরাপত্তা: বেলেঘাটার দেশবন্ধু বয়েজ স্কুলের বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী। শনিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিরাপত্তা: বেলেঘাটার দেশবন্ধু বয়েজ স্কুলের বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী। শনিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০১:৫৬
Share: Save:

২০১৪ সালের ১২ মে। গত লোকসভা নির্বাচনে ওই দিনই ভোট হয়েছিল কলকাতায়। পাঁচ বছর সাত দিন আগের সেই স্মৃতি এক কথায় মনে করতে পারেন না শহর কলকাতার অনেকেই। তবে সে দিনের কথা ভুলতে পারেননি তাঁরা। তাঁদের কেউ কেউ বাড়িছাড়া হয়েছিলেন ভোটের দিন থেকেই। বোমার স্‌প্লিন্টারে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল কারও পিঠ। কারও আবার মাথায় সেলাই পড়েছিল বেশ কয়েকটি। রক্তাক্ত সে দিনের স্মৃতি ভোলেনি তাঁদের পাড়াও। আজ, রবিবার আরও একটা ভোটের আগে তাঁরা বলছেন, ‘‘নতুন করে ঝামেলা চাই না। নিজের ভোটটা নিজে দিতে পারলেই হল।’’

গত লোকসভা ভোটের দিন ঝামেলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল উত্তর কলকাতার কাশীপুর এলাকা। সিপিএম কর্মীদের বুথ থেকে মেরে তুলে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে গণ্ডগোলের শুরু। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠি চালাতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। ভাঙচুর হয় ওই এলাকার দু’টি সিপিএম কার্যালয়।

শনিবার, এ বারের ভোটের ঠিক আগের দিন দুপুরে যাওয়া হয়েছিল ওই এলাকায়। জানা গেল, পাঁচ বছরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। এখনও খোলেনি রতনবাবু রোডের একটি সিপিএম কার্যালয়। সেই কার্যালয়ের অর্ধেক জুড়ে এখন কলকাতা উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। বামপ্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষের পোস্টারের জায়গা হয়েছে দূরের এক বাতিস্তম্ভের গায়ে। এলাকায় বাম নেতা কে আছেন? খোঁজ মিলল কলকাতা পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডে ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কাউন্সিলর থাকা কানাইলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের। গরমের দুপুরে খালি গায়ে বসে টিভি দেখছেন। পার্টি অফিস খোলা যায়নি? খানিক বিব্রত সত্তরোর্ধ্ব। বললেন, ‘‘এ সব প্রশ্নের উত্তর দিতেও এখন ভয় করে। নতুন করে ঝামেলায় পড়তে চাই না। ভোটের পরে দু’বছর বাড়িছাড়া ছিলাম।’’ ভোট কেমন হবে? বৃদ্ধের উত্তর, ‘‘গত দশ বছর ধরে যেমন হচ্ছে। আপনারাই বরং বুথে নজর রাখুন।’’

বুথের খোঁজ নিতেই যাওয়া হয়েছিল বেলেঘাটার দেশবন্ধু বয়েজ স্কুলে। গত বারের ভোটে এই বুথ ঘিরেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় আশপাশের এলাকা। রিগিংয়ের অভিযোগ ওঠায় ঘটনাস্থলে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয় সংবাদমাধ্যমকেও। এ দিন অবশ্য সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর দখলে ওই বুথ। পাশেই রয়েছে দেশবন্ধু গার্লস স্কুল। সেখানে কর্তব্যরত কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দায়িত্ব বোঝাতে আসা এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘বেলেঘাটা থানাও সজাগ রয়েছে। তেমন কিছু হবে বলে মনে হয় না।’’ স্কুলের পাশেই একটি খাতা-বইয়ের দোকান। তার মালিক বললেন, ‘‘এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনী দেখছি খুব সক্রিয়। আগের বার এমন ছিল না।’’ স্থানীয় এক বাসিন্দা অবশ্য বললেন, ‘‘যে বাহিনীই দিক, ঝামেলা এখানে হবেই। প্রশাসন নজর না রাখলে সাধারণের ভোট দেওয়া এখানে শক্ত।’’

গত বছর বিক্ষিপ্ত ঝামেলার সঙ্গে বোমাও পড়েছিল দক্ষিণ কলকাতার তাড়িখানা মোড় এলাকায়। সেখানে স্‌প্লিন্টারে পিঠ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় প্রকাশ রায় নামে এক যুবকের। ঘটনাস্থলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেই যুবক এখন আর এলাকায় থাকেন না। তবে শম্ভু মিত্র নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বললেন, ‘‘ওর কী অবস্থা হয়েছিল, চোখের সামনে দেখেছি। মনে করলেও রক্ত ঠান্ডা হয়ে যায়। এই সব দেখে ভেবেছিলাম, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে আর ভোট দিতেই যাব না।’’ একই আতঙ্ক বড়বাজারের কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিটে। সেখানে লোকসভা ভোটে গত বার বোমা পড়েছিল বিজেপি কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিতের বাড়ির সামনে। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়েই তো সেই হিংসা এখনও চলছে।’’

ঝামেলা হয়েছিল রাজাবাজার এলাকাতেও। বিধানসভা ভোটেও সেখানে প্রবল গন্ডগোল হয়। এ বার ভোটের ১০ ঘণ্টা আগেই সেখানে এ দিন বন্দুকধারী নিরাপত্তা বাহিনীর ভিড়। স্থানীয় খুদের সঙ্গে খেলায় ব্যস্ত এক নিরাপত্তারক্ষী হিন্দিতে বললেন, ‘‘আমরা এখানে ঝামেলা করতে আসিনি। শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে এসেছি।’’

ক্ষমতা দখলে রাখার মেজাজে সেই শান্তি কত ক্ষণ বজায় থাকে, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE