আরম্ভ: মালা রায়ের (ডান দিকে) জন্য দেওয়াল লিখনে হাত লাগালেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় (বাঁ দিকে)। বুধবার, বালিগঞ্জে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
শহুরে গলির ন্যাড়া অশ্বত্থে ঝাঁকে ঝাঁকে বাজপাখির অবস্থান চোখে পড়ে এমন ফাল্গুনী বিকেলে। কলকাতায় থেকেও অনেকেরই সেটা জানা নেই।
বুধবার সন্ধ্যায় সেই গলি ছেয়ে পরপর কাচ তোলা ঢাউস গাড়ির ভিড় বুঝিয়ে দিল শহরে ভোট এসেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনের নীড় থেকে যেন পাখির মতোই দলে দলে প্রার্থীরা তাঁদের ভোট-অভিযান শুরু করে দিলেন। ইংরেজি মতে মাসের তেরো তারিখ নিয়ে বিস্তর অপবাদ শোনা যায়! কিন্তু বাংলার শাসক দলের প্রার্থীদের সে সব বিজাতীয় কুসংস্কারে ভরসা নেই বলেই মালুম হল। বরং ‘মঙ্গলে উষা বুধে পা’ বলে তাঁর বাড়িতে বসেই নেত্রীর প্রার্থী-তালিকা ঘোষণায় চাঙ্গা কালীঘাটে ভিড় করা তৃণমূল কর্মীদের ঢল।
এখনই বিরোধী বাম-কংগ্রেস বা বিজেপি— কেউই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি। কিন্তু মমতা নিজে ৪২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা ইস্তকই কার্যত ভোট-দামামা বেজে উঠল শহরে। সকালে বিক্ষিপ্ত কর্মিসভা, প্রার্থীদের দেওয়াল-লিখনে হাতেখড়ি— শুরু হয়ে গিয়েছিল শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে। তবে বিকেলে মমতার বাড়িতে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রার্থী সমাগম থেকেই যেন প্রচারের ঢাকে কাঠি পড়ল। চুম্বকে, তৃণমূলনেত্রীর বাড়ির গলিই শুধু কলকাতা কেন, গোটা রাজ্যে ভোটযুদ্ধের ঝাঁঝাল মেজাজটা বেঁধে দিল।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কলকাতা তথা লাগোয়া তল্লাটে এ বার প্রধানত চেনা মুখেরাই লড়ছেন। ব্যতিক্রম যাদবপুরের প্রার্থী মমতা-ব্রিগেডে গ্ল্যামার জগতের আমদানি মিমি চক্রবর্তী। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় কিংবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটযুদ্ধের স্মৃতিজড়িত ঐতিহ্যশালী লোকসভা কেন্দ্রটিতে পরে মালিনী ভট্টাচার্য, কৃষ্ণা বসু, কবীর সুমন, সুগত বসুর মতো বিদগ্ধজন কিংবা সুজন চক্রবর্তীর মতো পোড়খাওয়া রাজনীতিক লড়ে জিতেছেন। মিমি কি জানেন এমন কেন্দ্রে লড়ার ওজন? মমতার বাড়িতে প্রাক-প্রচার বৈঠকে আসা টলি-নায়িকাকে সে প্রশ্ন করতেই তিনি হাসলেন! ‘‘এখনও অনেক কিছু আমাকে জানতে হবে। কিন্তু এই যে পায়ে স্নিকার্স দেখছেন! রানিং ট্র্যাকে দৌড়তে আমি তৈরি,’’ বললেন রাজনীতিতে নবাগতা।
সন্ধ্যায় যাদবপুর কেন্দ্র জুড়েই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের পরিকল্পনা মাফিক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল নামল। পাটুলি থেকে গড়িয়ার পথে স্থানীয় কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তীর কাছে অনেকেরই প্রশ্ন, মিমি কই? তরুণী অভিনেত্রী মঙ্গলবারই ১১০ নম্বর ওয়ার্ডে দেওয়াল-লিখনে হাত লাগিয়েছিলেন। এ দিন কিছু পেশাগত দায়িত্ব দ্রুত সেরে ফেললেন তিনি। আজ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অরূপ বিশ্বাসের অফিসে তৃণমূলের কর্মিসভায় প্রার্থী মিমির উপস্থিত থাকার কথা।
মমতার বাড়িতে আর এক রুপোলি পর্দার নায়িকা তথা বসিরহাট কেন্দ্রের প্রার্থী নুসরত জহানও জানিয়েছেন, শিগগিরই ভোট-প্রচারে তাঁকে দেখা যাবে। হাওড়া পুরসভার মাঠে সকালটা কর্মীদের চাঙ্গা করতে ফুটবল-ক্রিকেটে মশগুল থাকলেন খেলোয়াড় প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কলকাতা উত্তরের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, চেনা বামুনের পৈতের দরকার নেই! এই কেন্দ্রে লড়েই সুদীপের কাঁচা দাড়ি পাকা হয়েছে। তিনি হাসলেন, ‘‘আট বারের সাংসদ! আমার কি দেওয়ালে তুলি বুলিয়ে প্রচার করা সাজে!’’ জনসংখ্যার বিচারে গোটা দেশে এগিয়ে থাকা কেন্দ্র দমদমের প্রার্থী সৌগত রায় এ দিন দুপুর পর্যন্ত বরাহনগর পুরসভার কাছে একটি হলে কর্মিসভায় ব্যস্ত ছিলেন। তিনিও বললেন, ‘‘এখন কর্মিসভাটভাই সারতে হবে। দোলের কাছাকাছি গিয়ে পুরোদমে প্রচার শুরু হবে।’’ বাঁকুড়ায় ভোটপ্রচারে চলে যাচ্ছেন আর এক প্রবীণ রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তার আগে প্রচারের প্রথম দিনটা তিনি নিজের পাড়ায় একডালিয়ার প্যান্ডেলের কাছে কলকাতা দক্ষিণের নয়া প্রার্থী মালা রায়ের জন্য দেওয়াল-লিখনে হাত দিলেন।
কলকাতার প্রার্থীরা ভোট পরীক্ষায় বসার আগে দু’টো মাস সময় পাচ্ছেন। প্রচারের ওপেনিং স্পেলটা দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে জোর দিচ্ছেন কুশীলবেরা। ঢিমেতালেও সতর্কতায় কিন্তু মার নেই। মধ্য মার্চেই কলকাতার আকাশে ঝাঁঝাল রোদ ও গুমোট ভাব ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy