Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সেতুতে উল্টোল বালির লরি, মৃত্যু ৫ টোলপ্লাজা কর্মীর

একটি বালি ভর্তি দশ চাকার লরি উল্টে গিয়ে মৃত্যু হল পাঁচ ব্যক্তির। রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর উপরে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের মধ্যে তিন জন লরিটির ধাক্কায় মারা গিয়েছেন। অন্য দু’জন উল্টে যাওয়া বালির স্তূপে চাপা পড়ে মারা যান।

দুর্ঘটনার পরে। রবিবার, দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে। — নিজস্ব চিত্র

দুর্ঘটনার পরে। রবিবার, দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০০:৪৬
Share: Save:

একটি বালি ভর্তি দশ চাকার লরি উল্টে গিয়ে মৃত্যু হল পাঁচ ব্যক্তির। রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর উপরে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের মধ্যে তিন জন লরিটির ধাক্কায় মারা গিয়েছেন। অন্য দু’জন উল্টে যাওয়া বালির স্তূপে চাপা পড়ে মারা যান। রাত পর্যন্ত বালি চাপা পড়ে মৃত দুই ব্যক্তির পরিচয় সরকারি ভাবে জানায়নি পুলিশ। তবে স্থানীয় টোলপ্লাজার কর্মীরা জানিয়েছেন, ওই দু’জন তাঁদেরই সহকর্মী।

জানা গিয়েছে, লরির ধাক্কায় মৃতদের নাম শাকিল আহমেদ (৪৩), দেবব্রত ঘোষ (৩৮) এবং অনঙ্গ চক্রবর্তী (৫৩)। একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয় শাকিলকে। সেখানে ভর্তি করার তিন ঘণ্টার মধ্যে মারা যান দেবব্রত ও অনঙ্গ। তাঁরা তিন জনেই টোলপ্লাজার কর্মী। টোলপ্লাজার কর্মীদের দাবি, বালির তলায় চাপা পড়েছেন তাঁদের সহকর্মী ইব্রাহিম আলি নস্কর এবং শেখ মানিক। এই দু’জনের বয়স ২৫ থেকে ৩০-এর মধ্যে। তাঁদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পর থেকেই ইব্রাহিম ও মানিককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকী, তাঁদের মোবাইলে ফোন করলেও একটু আওয়াজ করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। এতেই আশঙ্কা বাড়ে।

রাতের মধ্যেই বালির তলায় চাপা পড়া দু’জনের দেহ উদ্ধার করা হয়। তবে শনাক্ত করার আগে তাঁদের পরিচয় জানাতে চায়নি পুলিশ। এই ঘটনায় আহত হন আরও দু’জন। তাঁদের নাম শেখ করিমুদ্দিন ও তন্ময় চট্টোপাধ্যায়। তাঁরাও টোলপ্লাজারই কর্মী। দুর্ঘটনার পর থেকে পলাতক লরির চালক
এবং খালাসি।

রবিবার সন্ধ্যায় এই দুর্ঘটনার পরে কলকাতা থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর দিকের রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। দাঁড়িয়ে যায় গাড়ি। হাওড়ার তৃণমূল নেতা, মন্ত্রী অরূপ রায় ও হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্র ঘটনাস্থলে পৌঁছোন। ওই এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেন শ্যামলবাবু। লরির তলায় দু’জন আটকে পড়েছেন জানতে পেরে উত্তেজিত জনতা তাঁদের দ্রুত উদ্ধারের জন্য পুলিশের উপরে চাপ বাড়াতে থাকে। লরি থেকে উল্টে বালি ছড়িয়ে পড়ে টোলপ্লাজার সামনে। ধোঁয়ায় ভরে যায় এলাকা।

পুলিশ এসে প্রথমেই লরি ও বালি সরিয়ে ওই দুই কর্মীকে উদ্ধারের কাজে নামে। প্রথমে তিনটি ক্রেন এনেও সরানো যায়নি লরি। পরে বড় ক্রেন এনে লরি কেটে কেটে সরিয়ে বালির তলা থেকে পাওয়া যায় দুই ব্যাক্তির দেহাংশ।

পুলিশের অনুমান, লরিটি ব্রেক ফেল করে উল্টে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, লরিটি কলকাতার দিক থেকে হুগলি সেতুতে উঠে সেতুর পশ্চিম প্রান্তের ঢাল দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে টোলপ্লাজার দিকে যাচ্ছিল। পশ্চিম ঢালেই পরপর স্পিড ব্রেকার আছে। তাতেও কমেনি লরির গতি। কলকাতা থেকে হাওড়ায় ঢোকার জন্য টোলপ্লাজার ১০টি লেন রয়েছে। লরিটি ৫ নম্বর লেনের পাশের ডিভাইডারে ধাক্কা মারতে মারতে এগিয়ে যায় টোলপ্লাজার দিকে। আর ওই ডিভাইডারের উপরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন টোলপ্লাজার কর্মীরা।

সাঁতরাগাছি সেতুতে এখন সারাইয়ের কাজ চলছে। ফলে, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সাধারণত ছোট গাড়ি ছাড়া অন্য কোনও গাড়ি যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এ দিন সকাল থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে কোনও গাড়িই যেতে দেওয়া হয়নি। সব গাড়ি আন্দুল বা অন্য দিক দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। ফলে, টোলপ্লাজার পূর্ব প্রান্তে দাঁড়িয়েই কর্মীরা গাড়িগুলিকে ৫ থেকে ১০ নম্বর লেনে ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন। যাতে গাড়িগুলি টোল দিয়ে সরাসরি আন্দুল, মন্দিরতলার দিকে চলে যায়।

ওই টোলপ্লাজার কর্মী ইকবাল আহমেদ বলেন, ‘‘আমি একটু দূরে ছিলাম। আচমকা দেখি হুড়মুড় করে একটি লরি বুলেভার্ডে রাখা গাছে ধাক্কা মারতে মারতে এগিয়ে আসছে। ওখানেই আমাদের সহকর্মীরা ছিলেন। একেবারে লেনে ঢোকার মুখে ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে লরিটি উল্টে পাশের লেনে পড়ে যায়।’’ জানা গিয়েছে, মূহূর্তের মধ্যে চারদিকে এতটা বালির ঝড়ের মতো পরিস্থিতি হয় যে মিনিট কয়েক কিছুই ভাল করে ঠাহর করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

accident vidyasagar setu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE