Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
LPG scam

এলপিজি ডিলারশিপ নিয়ে বড় ‘দুর্নীতি’! কলকাতায় গ্রেফতার রাজ্য বিজেপি নেতা, নজরে আরও

এলপিজি দুর্নীতি কাণ্ডে ডাকা হতে পারে দিলীপ ঘোষকেও।

গ্রাফিকঃ তিয়াসা দাস।

গ্রাফিকঃ তিয়াসা দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১২:০৫
Share: Save:

এলপিজি ডিলারশিপ পাইয়ে দেওয়া সংক্রান্ত বড়সড় ‘দুর্নীতি’র হদিশ পেল কলকাতা পুলিশ। এবং সেই দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে রণজিৎ মজুমদার নামে রাজ্য বিজেপির এক নেতাকে গ্রেফতার করল জোড়াসাঁকো থানা। রণজিৎবাবু এ রাজ্যে দলের তরফ থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন। সুনির্দিষ্ট দলীয় পদ হল— গুড গভর্ন্যান্স অ্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেট কো-অর্ডিনেটর, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তিনি।

বিধাননগরের প্রাক্তন বিজেপি নেতা অশোক সরকার জোড়াসাঁকো থানায় অগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে অভিযোগ জানান, এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) বা রান্নার গ্যাসের ডিলারশিপ দেওয়া নিয়ে বড়সড় দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে এ রাজ্যে, এবং তাতে জড়িত রয়েছেন রাজ্য বিজেপির অনেক নেতা। তাঁর অভিযোগ ছিল, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার ডিলারশিপ দেওয়ার জন্য পেট্রলিয়াম মন্ত্রক থেকে সরকারি বিজ্ঞপ্তি ঘোষণার অনেক আগেই, এ রাজ্যের এ রাজ্যের অনেক বিজেপি নেতা জানতে পারেন, কোন কোন জায়গায় ডিলারশিপ দেওয়া হবে। অভিযোগ, বিজ্ঞপ্তি ঘোষণার অনেক আগেই রণজিৎ মজুমদার রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বিজেপি সভাপতিকে ইমেল করে জানিয়ে দিতেন, ডিলারশিপ নিতে ইচ্ছুক বিজেপি কর্মী সমর্থকদের নাম পাঠাতে। এ রকম প্রায় ২৩৫ জনের তালিকা প্রস্তুত করা হয়।

অশোক সরকার তাঁর লিখিত অভিযোগে দাবি করেন, এই গোটা প্রক্রিয়াটা সম্পর্কেই অবহিত ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের (সাধারণ সম্পাদক, সংগঠন) মতো রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতারাও। অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই রণজিৎ মজুমদার বিভিন্ন জেলা সভাপতিকে ইমেলগুলি পাঠিয়েছিলেন। যাতে কার্যত পিছনের দরজা দিয়েই এলপিজি ডিলারশিপ পাইয়ে দেওয়া যায় দলের কর্মী-সমর্থকদের। ডিলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে মোটা টাকার লেনদেন হয় বলেও অভিযোগ।

আরও পড়ুন: কোটি কোটি টাকার সোনা পাচারের অভিযোগ, আটক উত্তরবঙ্গের দুই পুলিশ কর্তা​

লিখিত অভিযোগের একাংশ।

অশোক সরকার তাঁর অভিযোগে রাজ্য বিজেপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা ছাড়াও রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের দুই শীর্ষ প্রান্ত-প্রচারকের নামও করেছেন। অভিযোগ, এই দুই প্রচারকও এই দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। জোড়াসাঁকো থানায় অভিযোগ জানানোর আগে অশোক সরকার ৩০ জুলাই বিধাননগর পূর্ব থানাতেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন। অশোকবাবু তাঁর অভিযোগপত্রের সঙ্গে রণজিৎ মজুমদারের সঙ্গে তাঁর দলের জেলা সভাপতিদের ই-মেলে যোগাযোগের নথি-সহ ২৩৫ জনের তালিকা দিয়েছিলেন তদন্তকারীদের কাছে।

এর পর জোড়াসাঁকো থানা এবং কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বি‌ভাগের আর্থিক অপরাধ দমন শাখার আধিকারিকদের যৌথ দল রণজিৎ মজুমদারকে তিন দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেই জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বেশ কিছু নতুন তথ্যও উঠে এসেছে বলে জানা যাচ্ছে। এবং সেই সঙ্গে উঠে আসে আরও বেশ কিছু নামও। শুক্রবার দিনভর জেরার পর গভীর রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার তাঁকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হচ্ছে।

রণজিৎকে গ্রেফতারের পর পুলিশ এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের পাল্টা অভিযোগ এনেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘পুরোটাই ষড়ষন্ত্র। ওকে চাপ দিয়ে আমার এবং আরও কারও কারও নাম বলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল পুলিশ। না পারায় গ্রেফতার করেছে।” আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি বিজেপি এ নিয়ে রাস্তায় নেমেও লড়বে বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: প্রোমোটার স্বামীকে বাইকে বন্দুক উঁচিয়ে ধাওয়া তরুণীর, বেকবাগানের রাস্তায়​

তদন্তকারীদের দাবি, নথিপত্র খতিয়ে দেখে এবং রণজিৎকে জেরা করে রাজ্য বিজেপির দুই নেতা সায়ন্তন বসু আর রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও উঠে এসেছে। তাঁদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বলেন, ‘‘এই ব্যাপারে মন্তব্য করার মতো আমি কেউ নই। বিজেপির রাজ্য সভাপতি এই প্রসঙ্গে তাঁর মতামত দেবেন। কিন্তু আপনারা বলছেন যে আমার নামও নাকি করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বলতে পারি, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে আমরা বিভিন্ন জনের নামের প্রস্তাব পাঠাই। কিন্তু তার বিনিময়ে অর্থনৈতিক কোনও লাভ-ক্ষতির বিষয় থাকে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমার কোনও রকমের সংযোগ ছিল না।’’

২৩৫ জনের তালিকার একাংশ।

কলকাতা পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল শুভঙ্কর সিনহা বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমার যে নথি পেয়েছি, তার ভিত্তিতে আমরা রণজিৎ মজুমদারকে একাধিকবার জেরা করেছি। রণজিৎবাবুর বক্তব্যে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে গোটা দুর্নীতিতে তাঁর সরাসরি যোগের প্রমাণ মিলেছে। এর পরেই তাঁকে আমরা গ্রেফতার করেছি।’’

দ্বিতীয় দফার জেরার শেষে রণজিৎ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার। তখন তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের নির্দেশে আমি যা যা করেছি, সেই সমস্ত তথ্যই আমি তদন্তকারীদের জানিয়েছি। আমি জেলা সভাপতিদের কার নির্দেশে চিঠি দিয়েছিলাম, সেই তথ্যও জানিয়েছি তদন্তকারীদের।’’

ই-মেলের এই প্রমাণপত্রই পেশ করেন অশোক বাবু।

কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, যাঁদের নাম এই তদন্তে ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে, তাঁদের প্রত্যেককেই পর্যায়ক্রমে নোটিস পাঠিয়ে ডাকা হবে।

(গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ)

কলকাতার রাজনীতি, কলকাতার আড্ডা, কলকাতার ময়দান, কলকাতার ফুটপাথ - কলকাতার সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE