Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ব্যবসায়ীর থেকে তোলা চেয়ে গ্রেফতার মাফিয়া

কলকাতার বাসিন্দা এক ব্যবসায়ীর কাছে সে দু’ কোটি টাকা তোলা চেয়ে ফোন করেছিল। টাকা না পেলে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল ওই ব্যবসায়ীকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:২৩
Share: Save:

কলকাতার বাসিন্দা এক ব্যবসায়ীর কাছে সে দু’ কোটি টাকা তোলা চেয়ে ফোন করেছিল। টাকা না পেলে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল ওই ব্যবসায়ীকে। অবশেষে ধনঞ্জয় সিংহ প্রধান ওরফে বিনোদ নামের সেই আন্তঃরাজ্য মাফিয়াকে কলকাতা ও বিহার পুলিশ শুক্রবার রাতে নেপাল সীমান্ত এলাকার বিহারের যোগবানি থেকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতকে শনিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

তদন্তে জানা গিয়েছে, মূলত রেলের ঠিকাদারদের থেকে ধনঞ্জয় তোলা আদায় করত। কলকাতার হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিটের বাসিন্দা ওই ব্যবসায়ীও রেলের ঠিকাদার। ঝাড়খণ্ড ও বিহারে তাঁর ব্যবসা। সম্প্রতি তিনি রক্সৌলে রেলের মোটা টাকার কাজের বরাত পান। এর জন্যে ধনঞ্জয়রা তাঁর থেকে টাকা চায় বলে সূত্রের খবর।

বিহার ও ঝাড়খণ্ড পুলিশের একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, তোলা আদায় করা আন্তঃরাজ্য দুষ্কৃতীদের একটি দলের পাণ্ডা ধনঞ্জয়। তবে সুতো ধরা আছে বিহারের এক প্রাক্তন সাংসদের হাতে। ধনঞ্জয়ের দলের তোলা আদায়ের বড় অংশ চলে যেত ওই নেতার কাছে। পরিবর্তে ওই নেতা তাদের দিতেন রাজনৈতিক আশ্রয়।

দু’কোটি টাকা তোলা চেয়ে কলকাতার এক ব্যবসায়ীকে হুমকি ফোন করা হচ্ছে— সেই সংবাদ গত ১৮ জানুয়ারি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ব্যবসায়ীর নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করে তদন্তে নামে লালবাজার।

২০০৫-এ কলকাতা থেকে ধরা পড়েছিল বিহারের ছাপরার বাসিন্দা ধনঞ্জয়। সে বার লালবাজারের সাহায্যে ধনঞ্জয়কে গ্রেফতার করে ঝাড়খণ্ড পুলিশ। এর পরে ২০১২ সালে ফের তোলাবাজির অভিযোগে ঝাড়খণ্ড পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে। ২০১৫ সালে জামিনে ছাড়া পেয়ে যোগবানিতে গিয়ে ফের অপরাধে জড়ায় সে।

হাজিপুর, কাটিহার, নিউ জলপাইগুড়ি, ইলাহাবাদ, খড়্গপুর, হাওড়া-সহ পূর্ব ও উত্তর ভারতে রেলের বিভিন্ন ডিভিশনে কাজ করা ঠিকাদারদের ফোন করে টাকা আদায় করত চক্রটি। ধনঞ্জয়ের থেকে দু’টি পাতলা খাতা মিলেছে। সেখানে রয়েছে প্রায় এক হাজার রেলের ঠিকাদারের নাম ও ফোন নম্বর।

পুলিশের একটি সূত্রের খবর, বছর পঁয়ত্রিশের ধনঞ্জয় বেশির ভাগ সময়ে রাঁচি ও সংলগ্ন এলাকায় থাকত। বিহার পুলিশ জানিয়েছে, তোলা আদায়ের জন্য নেপাল থেকেই হুমকি ফোনগুলি করত ধনঞ্জয়। এই জন্য সে ভারত-নেপাল সীমানায় বাড়িও ভাড়া নিয়েছিল। ধৃতের থেকে মিলেছে নেপালের একাধিক সিম।

পুলিশ জানায়, কলকাতার ব্যবসায়ী ওই ঠিকাদার ১৪ জানুয়ারি শেক্সপিয়র সরণি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডা দমন শাখা তদন্তে নেমে জানতে পারে, ৩১ ডিসেম্বর— ১৪ জানুয়ারি ওই ব্যবসায়ীর কাছে প্রায় আট বার পাঁচটি নম্বর থেকে হুমকি ফোন আসে। লালবাজার সূত্রের খবর, যার মধ্যে তিনটি নম্বর নেপালের। তদন্তে জানা যায়, ফোন এসেছে বিহারের যোগবানি লাগোয়া নেপালের একটি তল্লাট থেকে। সোমবার, গোয়েন্দাদের একটি দল যোগবানিতে যায়। সেখানেই কয়েক দিন ধরে ছিলেন তাঁরা। শুক্রবার ধনঞ্জয় নেপাল থেকে যোগবানি ফিরতেই বিহার পুলিশের সাহায্যে তাকে গ্রেফতার করেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।

লালবাজারের কর্তারা জানাচ্ছেন, ধনঞ্জয়ের বিরুদ্ধে বিহার ও ঝাড়খণ্ডে ২৭টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে একটি খুনের মামলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Money extortion Mafia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE