সংঘর্ষের পরে: ভাঙা জানলা দেখাচ্ছেন এক এলাকাবাসী। শনিবার জগৎপুরের চড়কতলায়। ফাইল চিত্র
বাগুইআটি-কাণ্ডে খুনের চেষ্টা, মারধরের ধারায় মামলা রুজু করল পুলিশ। প্রথমে অস্বীকার করলেও লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে যুক্ত হল গুলিচালনার ধারাও। বিজয়া দশমীর রাতের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত সুরজিৎ মণ্ডল ওরফে কারখানা বাবুকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। যদিও মূল অভিযুক্ত সুরজিৎ আমিন (ছোট্টু)-সহ বাকি অভিযুক্তেরা এখনও অধরা।
শুক্রবার রাতে বাগুইআটি থানার অন্তর্গত জগৎপুরের চড়কতলা এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জন্য শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে দায়ী করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যে ঘটনায় মলয় চক্রবর্তী, তাঁর ছেলে ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তী এবং বাগুইআটি থানার সিভিক ভলান্টিয়ার সোমনাথ দাস গুরুতর জখম হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় সূত্রের খবর, জখম মলয় চক্রবর্তী এবং তাঁর ছেলে ধ্রুবজ্যোতি এলাকার যুব তৃণমূল নেতা তথা কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ। বাবা এবং ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে রক্তাক্ত হন সিভিক ভলান্টিয়ার।
মলয়ের স্ত্রী রূপা চক্রবর্তীর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অভিযোগপত্রে যাদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ, সেই ছোট্টু, সুরজিৎ, সাধন সরকার, উজ্জ্বল সরকার (খটাস বুড়ো), অভিজিৎ কালে (টুবলাই), সুরজিৎ, কার্তিক ও কৌশিক তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেনের অনুগামী হিসেবে পরিচিত বলে স্থানীয়দের দাবি। এ বিষয়ে দোলার প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন ও মেসেজ করা হলে তিনি কোনও উত্তর দেননি।
বস্তুত, রবিবার লেকটাউনের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মলয় যা জানিয়েছেন তাতেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছবি ধরা পড়েছে। মলয়ের দাবি, সে দিন রাত ১১টা নাগাদ এক প্রতিবেশী ফোন করে জানান, চড়কতলা পুকুরের কাছে যে তাঁর বাড়ি রয়েছে সেখানে কয়েক জন যুবক চড়াও হয়েছে। সেই খবর পেয়ে চড়কতলা মাঠ সংলগ্ন বাড়ি থেকে তিনি অপর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। মলয় বলেন, ‘‘ওই বাড়িতে যাওয়ার পথে দেখি টুবলাইরা দু’টি বাইকে ফিরছে। আমাকে দেখে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করল। আমি ও আমার ছেলে ওদের ধাওয়া করতে মন্দিরের কাছে ওরা বাইক নিয়ে পড়ে যায়। বাইক ফেলে ওরা চম্পট দেয়। কিছুক্ষণ পরে দেখি ছোট্টু তার দলবল নিয়ে ঢুকছে। ওদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।’’ মলয় জানান, কেন তাঁর ঘর ভাঙচুর করা হল, তা জানতে চেয়ে ছোট্টুকে কষিয়ে এক থাপ্পড় মারেন তিনি।
পরবর্তী ঘটনাক্রমের বর্ণনা দেন বেসরকারি হাসপাতালে পাশের বেডে চিকিৎসাধীন মলয়ের ছেলে ধ্রুবজ্যোতি। তাঁর কথায়, ‘‘পুকুরপাড়ের কাছের বাড়িতে আমি, আমার স্ত্রী এবং ঠাকুরমা থাকি। ওরা প্রথমে আমাদের এই বাড়িতে হামলা করে। পরে তো মাঠের কাছের বাড়িতেও ভাঙচুর চালিয়েছে। আমি মিষ্টি কিনে বাড়ি ফেরার সময় ঠাকুরমা ফোন করে হামলার কথা জানান। সেই ফোন পেয়ে আমি ওদের সামনে যাইনি। কিন্তু বাবা ওই বাড়ি থেকে বেরিয়েছে শুনে আর থাকতে পারিনি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, ছোট্টু থাপ্পড় খেয়ে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বাবাকে গুলি করতে যাচ্ছে। ডিউটি সেরে ফেরার পথে ওই দৃশ্য দেখে ছোট্টুকে পিছন থেকে জাপটে ধরে সোমনাথ। আমার মা-ও তখন ঘটনাস্থলে ছিলেন। গুলি যাতে বাবার না-লাগে সে জন্য ছোট্টুর হাত ধাক্কা মেরে উপরের দিকে করে দেন মা। এর পর সোমনাথের মাথার পিছনে ভারী কিছু দিয়ে একটা আঘাত করলে ও মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমাদের দু’জনকেও মাটিতে ফেলে নির্মম ভাবে পেটাল। সোমনাথের জন্যই বাবা প্রাণে বেঁচে গেল।’’
মলয় বলেন, ‘‘দেবরাজের হয়ে বস্ত্রপ্রদানের অনুষ্ঠান করেছি। ওদের এলাকায় তোলাবাজি করতে দিচ্ছি না। তাই এত রাগ।’’
প্রকাশ্যে না হলেও রাজারহাট-গোপালপুরে রাজনৈতিক আধিপত্য কার হাতে থাকবে, সেটাই যে গন্ডগোলের মূলে তা স্বীকার করছে পুলিশও। মূল অভিযুক্ত-সহ বাকিদের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy