Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হরিদেবপুরের মূল অভিযুক্ত ধৃত সুরাতে

বিমানবন্দরের কাছে রাস্তায় পায়চারি করছিল এক যুবক। হাতে ব্যাগ নিয়ে রাস্তা পার হয়ে তার দিকে এগিয়ে গেলেন এক ব্যক্তি। ব্যাগটি ওই যুবকের হাতে দিতেই হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়লেন কয়েক জন। পথচলতি মানুষ ভাল করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই যুবককে গাড়িতে তুলে নিলেন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

বিমানবন্দরের কাছে রাস্তায় পায়চারি করছিল এক যুবক। হাতে ব্যাগ নিয়ে রাস্তা পার হয়ে তার দিকে এগিয়ে গেলেন এক ব্যক্তি। ব্যাগটি ওই যুবকের হাতে দিতেই হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়লেন কয়েক জন। পথচলতি মানুষ ভাল করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই যুবককে গাড়িতে তুলে নিলেন তাঁরা।

কোনও সিনেমার দৃশ্য নয়। লালবাজারের দাবি, এই কায়দাতেই রবিবার সকালে গুজরাতের সুরাত বিমানবন্দরের কাছ থেকে গ্রেফতার করা হয় হরিদেবপুর-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত নান্টে ওরফে বাবলু ঘোষকে। রাতেই বিমানে তাকে কলকাতা নিয়ে আসেন গুন্ডাদমন শাখার অফিসারেরা। সোমবার আলিপুর আদালতে বিচারক নান্টেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এ নিয়ে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হল মোট সাত জনকে।

পুলিশের দাবি, টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় এক সঙ্গীর কাছে টাকা চেয়েছিল নান্টে। এ দিকে, ঘটনাচক্রে ওই সঙ্গী পুলি‌শের সোর্স। আর তার মাধ্যমেই নান্টেকে ধরার ছক কষে পুলিশ। টাকার ব্যাগ দিয়ে ওই সঙ্গীকে পাঠানো হয় সুরাতে। সঙ্গে ছিলেন লালবাজারের তিন গোয়েন্দা।

৮ জুলাই রাতে হরিদেবপুরের কবরডাঙায় এক পানশালার বাইরে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হয় রাহুল মজুমদার নামে এক যুবকের। সোমবার লালবাজারে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিল নান্টে ওরফে বাবলু ঘোষ। কারা গুলি চালিয়েছিল, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ এ ছাড়া, পালিয়ে থাকার সময়ে নান্টের সঙ্গে ছিল তার বান্ধবী। তার ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

লালবাজার সূত্রে খবর, ঘটনার রাতেই দলবল নিয়ে নান্টে সোনারপুরের রেনিয়ায় বাড়িতে ফিরে যায়। পরদিন সংবাদমাধ্যমে শোরগোল শুরু হলে মোটরবাইক নিয়ে সে যায় জয়নগর থানার ধোসারহাটের চন্দনেশ্বরে এক বান্ধবীর বাড়িতে। ওই মহিলা পেশায় যৌনকর্মী। তদন্তকারীরা নান্টের মোবাইলের সূত্র ধরে রাতেই হানা দেয় জয়নগরে। কিন্তু ততক্ষণে বান্ধবীকে নিয়ে এলাকা ছেড়েছে নান্টে। তারা যায় ক্যানিংয়ের তালদিতে বান্ধবীর এক আত্মীয়ের কাছে। তদন্তকারীরা জানান, পেশায় রিকশাচালক ওই মহিলার বাবাকে জেরা করে মেলে সেই ঠিকানা। এ ছাড়া, মোবাইলের সূত্রেই দু’জনের এক সঙ্গে থাকার কথা জানতে পারে পুলিশ। কিন্তু সেখানে তাদের খোঁজ মেলেনি। পুলিশের দাবি, জেরায় নান্টে জানায়, ১১ জুলাই ক্যানিং থেকে তারা বাইকে বিষ্ণুপুর যায়। সেখান থেকে বাসে হাওড়া স্টেশন। মুম্বই মেলের টিকিট কেটে ১৩ তারিখ তারা আশ্রয় নেয় থানের নালাসোপাড়ায় ওই বান্ধবীর ফ্ল্যাটে। পুলিশের দাবি, জেরায় নান্টে জানায়, যৌনকর্মী ওই মহিলা ফিরে এসেছে জেনে চলে আসেন তার সেখানকার খদ্দেররা। তাতেই গোলমাল হয় তাদের। ফ্ল্যাটের কাছে একটি লজে দৈনিক পাঁচশো টাকা ভাড়ায় নান্টের থাকার ব্যবস্থা করে ওই মহিলা।

লালবাজার সূত্রে খবর, মোবাইলের সূত্রেই পুলিশ জানতে পারে নান্টের ওই বান্ধবী নাম ভাঁড়িয়ে জয়নগরে থাকত। তার পরিচিত উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার বাসিন্দা এক মহিলা পুলিশকে মুম্বইয়ের ঠিকানা জানান। অবশ্য মুম্বই পৌঁছেও নান্টেকে পায়নি পুলিশ। নান্টে পুলিশকে জানায়, পরিচয়পত্র না থাকায় লজ-কর্তৃপক্ষ তাকে চলে যেতে বলেন। ওই বান্ধবী নান্টেকে গুজরাতের বডোদরায় এক পরিচিতের কাছে পাঠান।

১৭ জুলাই সে ট্রেনে রওনা হয়। এর মধ্যে টাকা ফুরিয়ে গেলে কলকাতায় এক সঙ্গীকে ৪০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে নান্টে। ঘটনাচক্রে ওই সঙ্গী পুলিশের সোর্স। পুলিশ তাকে নিয়ে হাজির হয় সুরাতে। তার পরেই ডেকে পাঠানো হয় নান্টেকে।

পুলিশের দাবি, কবরডাঙা কাণ্ডের তদন্তে এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, পানশালাটির মালিক অজয় মোদী-সহ তিন জন হলেও তা চালাতো কালী সিংহ ও দুর্গা সিংহ নামে দুই ভাই। জমির কারবার ও ইমারতি মাল সরবরাহ নিয়ে তাদের সঙ্গে নান্টের দলের গোলমাল বাধে। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, ওই দিন দু’পক্ষই গোলমাল করেছিল। নান্টের দলের অভিযোগ, তাদের উপরেও গুলি চালানো হয়। সে ক্ষেত্রে পুলিশ ওই দুই ভাইকে কেন গ্রেফতার করেনি? গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলবে, গ্রেফতার করা হবে।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, হরিদেবপুর-কবরডাঙা-ঠাকুরপুকুরের সব দুষ্কৃতীকেই জেলে পুরতে নির্দেশ দিয়েছে লালবাজার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE