Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Sonarpur

স্ত্রী-শ্বশুরকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় ধৃত ঘরজামাই

তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছে অভিযুক্ত।

রমেশ পণ্ডিত। —নিজস্ব চিত্র

রমেশ পণ্ডিত। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ০২:৫৪
Share: Save:

সোনারপুরের সুভাষগ্রামে বাবা ও পালিতা মেয়েকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সোনারপুর থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার প্রায় ১৯ দিন পরে বৃহস্পতিবার রাতে শিবপুর থানা এলাকার একটি পোশাকের কারখানা থেকে ধরা হয় মূল অভিযুক্ত রমেশ পণ্ডিতকে। সে সম্পর্কে ওই বৃদ্ধের জামাই। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছে অভিযুক্ত।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ১১ জুলাই সুভাষগ্রামের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল বৃদ্ধ বাসুদেব গঙ্গোপাধ্যায় (৭২) এবং তাঁর পালিতা বিবাহিতা কন্যা সুমিতা পণ্ডিতের (৩৫) ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। বাড়ির শৌচাগার থেকে মিলেছিল রমেশের রক্তমাখা পোশাক। তা থেকে তদন্তকারীরা এক প্রকার নিশ্চিত ছিলেন, সে-ই খুনে জড়িত। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, প্রথমে কাঠের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে এবং পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রী ও শ্বশুরকে খুন করে রমেশ। ঘটনার পর থেকে ফেরার ছিল সে। নিজের মোবাইলও বন্ধ করে রেখেছিল।

কী ভাবে ধরা পড়ল অভিযুক্ত?

তদন্তকারীরা জানান, রমেশ দর্জির কাজ করত। সেই সূত্র ধরেই তার খোঁজ শুরু হয়। জানা যায়, বড়বাজার, পার্ক স্ট্রিট এবং লিলুয়া থানা এলাকায় দর্জির কাজ করত সে। ওই জায়গাগুলিতে খোঁজ শুরু করেন তদন্তকারীরা। পরে তাঁরা জানতে পারেন, লিলুয়ায় একটি পোশাকের কারখানায় কাজ করছে রমেশ। সেখানেই একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকছে। সুবর্ণ ঠাকুর নামে এক পূর্ব পরিচিতের মাধ্যমে সে ওখানে চাকরি নিয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, জেরায় রমেশ জানিয়েছে, তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে বলে সে জানিয়েছিল সুবর্ণকে। আরও জানিয়েছিল, শ্বশুরবাড়িতে তার থাকার ব্যবস্থা নেই। এই কথা বলে সে কারখানায় চাকরি নেয়। এর পরেই সুবর্ণকে আটক করে পুলিশ। তাঁকে নিয়েই ওই পোশাকের কারখানায় গিয়ে রমেশকে ধরা হয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, কয়েক সপ্তাহ আগেই রমেশের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু অত্যন্ত চালাক হওয়ায় যখন তখন সে পালিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল তদন্তকারীদের। সেই কারণে সোনারপুর থানার অফিসারেরা সাদা পোশাকে দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ ওই কারখানা এবং রমেশের ভাড়া বাড়ির উপরে নজর রেখেছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুবর্ণকে কারখানায় পাঠিয়ে রমেশকে ডেকে আনেন তাঁরা। তার পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

কেন শ্বশুর ও স্ত্রীকে খুন করল রমেশ? জানা গিয়েছে, বছর ছয়েক আগে বিয়ের পর থেকেই মাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকত ওই যুবক। গত কয়েক বছর ধরে স্ত্রী সুমিতার সঙ্গে তার বনিবনা হচ্ছিল না। এরই মধ্যে বাসুদেববাবু বাড়ি বিক্রির জন্য উদ্যোগী হন। রমেশ মনে করেছিল, বাড়ি বিক্রি হয়ে গেলে স্ত্রীর সঙ্গে আর থাকা যাবে না। সেই কারণে বাড়ি বিক্রি নিয়ে তার সঙ্গে বচসা হত বাসুদেববাবুর। গত ১০ জুলাই রাতে সম্পত্তি বিক্রি নিয়ে তার সঙ্গে শ্বশুরমশাইয়ের অশান্তি চরমে ওঠে। এর পরেই সে কাঠের বাটাম দিয়ে সুমিতা এবং বাসুদেববাবুকে পেটায়। তার পরে বাড়িতে থাকা কুড়ুল দিয়ে দু’জনকে কোপায়। তদন্তকারীরা জানান, জেরায় রমেশ জানিয়েছে, বাসুদেববাবুকে খুন করতে বাধা দেওয়ায় সে আক্রোশের বশে স্ত্রীকেও খুন করে।

ঘটনার পরে রমেশের মা অঞ্জলি পণ্ডিতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ছেলেকে খুন করতে সাহায্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, রমেশ ও সুমিতার চার বছরের মেয়ে এবং অঞ্জলি এই ঘটনায় সাক্ষী। অঞ্জলি জেল হেফাজতে রয়েছেন। সুমিতার মেয়েকে সোনারপুরের একটি হোমে রাখা হয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, রমেশকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে আরও জেরা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sonarpur Murder Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE