Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Eco Park

খাবার-মদ দু’শো জনের, পার্টিতে হাজির দু’হাজার! বর্ষবরণের রাতে হুলস্থুল ইকো পার্কে

খাবার এবং মদের আয়োজন সামান্যই। সব মিলিয়ে ২০০ জনেরও কুলোবে না তাতে! কিন্তু, সেখানে তখন হাজির অন্তত দু’হাজার মানুষ।

সবাই নিজের মতো খাবার জোগাড়ে ব্যস্ত। নিজস্ব চিত্র।

সবাই নিজের মতো খাবার জোগাড়ে ব্যস্ত। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২০ ১৬:২৬
Share: Save:

বেশরম— বর্ষবরণে রাতের পার্টি। নাচগানের সঙ্গে মিলবে যত খুশি খাবার, মদও। দু’জনের জন্য পড়বে ‘মাত্র’ ২ হাজার টাকা।

এ ভাবেই বিক্রি হয়েছিল ওই পার্টির টিকিট। কিন্তু, মাহেন্দ্র ক্ষণে গিয়ে বিপত্তি বাধল। টিকিটধারীরা মঙ্গলবার রাতে রাজারহাটে ইকো পার্কের ওই পার্টিতে গিয়ে দেখলেন, খাবার এবং মদের আয়োজন সামান্যই। সব মিলিয়ে ২০০ জনেরও কুলোবে না তাতে! কিন্তু, সেখানে তখন হাজির অন্তত দু’হাজার মানুষ। সকলেরই বৈধ টিকিট রয়েছে। এর পরেই শুরু হয়ে যায় হুলস্থুল। চেয়ার-টেবিল-খাবারের পাত্র উল্টে সবাই নিজের মতো খাবার জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে যান। পরিস্থিতি এতটাই সঙীন হয়ে ওঠে যে পুলিশ গিয়ে সামাল দেয়।

এ মাসের গোড়া থেকেই বিভিন্ন অ্যাপ এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন বেরোয়, ৩১ ডিসেম্বর ইকো পার্কের ‘জাপানিস ফরেস্ট’-এ বর্ষবরণের পার্টির। বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে এবং ইকো পার্কের কাউন্টার থেকেও টিকিট বিক্রি করে আয়োজক সংস্থা। ওই পার্টির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘বেশরম’। বি়জ্ঞাপনে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, খাবার এবং মদ— সমস্তই পাওয়া যাবে ‘অপর্যাপ্ত’।

কিন্তু গোল বাধে লোকজন পার্টির জন্য মাঠে পৌঁছনোর কিছু পরেই। রাত গভীর হতেই বাড়তে থাকে ভিড়। প্রায় ২ হাজার মানুষ যখন ভিড় জমিয়েছেন, তখন দেখা যায় ২০০ জনেরও খাবার ব্যবস্থা নেই। মদের মজুতও শেষ। তার মধ্যেই বেপাত্তা হয়ে যান পার্টির আয়োজকরা। টিকিটে যে তিন জন আয়োজকের ফোন নম্বর দেওয়া ছিল, সেগুলোও ‘সুইচড অফ’।

টাকা দিয়ে পার্টি করতে গিয়ে খাবার-মদ না পেয়ে তত ক্ষণে বিক্ষোভ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। তার মধ্যেই আবার একটা অংশ খাদ্য-পানীয়ের সন্ধানে পৌঁছে যান খাবারের জায়গায়। খাবার নিয়ে শুরু হয় হুড়োহুড়ি। চেয়ার-টেবিল উল্টে, ভাত-বিরিয়ানির হাঁড়ি উল্টে পার্টিতে আসা ‘অতিথি’রা নিজেরাই তখন থার্মোকলের থালায় খাবার নিতে ব্যস্ত। যাঁরা হুড়োহুড়িতে জায়গা করতে না পেয়ে লাইনে পিছিয়ে পড়েছিলেন, তাঁদের জন্য খাবারের ঝোল ছাড়া কিছু অবশিষ্ট ছিল না বলে অভিযোগ।

এ সবের মধ্যেই খবর পৌঁছয় ইকো পার্ক থানার পুলিশের কাছে। পুলিশ পার্টি বন্ধ করে দেয়। প্রশাসনের দাবি, ওই পার্টির জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া ছিল না। ঘটনাস্থলে পুলিশকে পেয়ে অনেকে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। যাদবপুর থেকে ওই পার্টিতে গিয়েছিলেন রেশমা দাস। তিনি বুধবার বলেন, ‘‘পুলিশ এসে পার্টি বন্ধ করে দেয়। আমরা বলেছিলাম, আপনারা আয়োজকদের ধরে আমাদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করুন। কিন্তু এখনও তার ব্যবস্থা হয়নি।”

রেশমার মতোই দক্ষিণ কলকাতা থেকে পার্টিতে এসেছিলেন শর্মিন। তিনি বলেন, ‘‘যে রকম অব্যবস্থা হয়েছিল, তাতে বড়সড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারত, হুড়োহুড়িতে।” তাঁর অভিযোগ পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। বুধবার বিকেলেও খোলা হয়নি ওই তিনটি নম্বর। একাধিক বার চেষ্টা করে তাই ওই আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

গভীর রাত পর্যন্ত সেই বিক্ষোভ সামলে পুলিশ পার্টিতে আসা প্রায় দেড় হাজার মানুষকে ইকো পার্ক থেকে বার করে আনে। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁরা আয়োজকদের খোঁজ করছেন। প্রাথমিক ভাবে দিয়া দাস নামে এক মহিলার নাম পাওয়া গিয়েছে। তাঁর খোঁজ করছে পুলিশ। তবে, সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে অনুমতি ছাড়াই কী ভাবে আয়োজকরা ইকো পার্কের মতো জায়গায় এত বড় ‘পার্টি’র আয়োজন করল। ইকো পার্ক কর্তৃপক্ষও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE