Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

কাকদ্বীপে উদ্ধার নিহত বৃদ্ধের ফোন

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই মোটরভ্যান চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁর বয়ান অনুযায়ী, কয়েকটি ব্যাগ ও বস্তা নিয়ে দুই ব্যক্তি তাঁর ভ্যানে উঠেছিল। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, ওই দু’জন দক্ষিণ ২৪ পরগনা এলাকার কাকদ্বীপ-নামখানা এলাকার বাসিন্দা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ০২:৫৮
Share: Save:

টাওয়ার লোকেশন ধরে জানা গিয়েছিল, ফোনটি রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। বুধবার সেই জেলারই কাকদ্বীপ থানা এলাকার একটি গ্রাম থেকে উদ্ধার হল নিউ আলিপুরে নিহত বৃদ্ধ মলয় মুখোপাধ্যায়ের চুরি যাওয়া দু’টি কম দামি মোবাইলের একটি। এক ভ্যানচালক দাবি করেছেন, দুই ব্যক্তি তাঁকে সেটি গছিয়ে দিয়ে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, মলয়বাবুর রাতের আয়া কবিতার কথায় ধরা পড়েছে আরও অসঙ্গতি। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, কবিতা ওই রাতে মলয়বাবুর পাশের ঘরে আদৌ ছিলেন না। তিনি চলে আসেন নীচের তলায়।

পুলিশ জানিয়েছে, কাকদ্বীপ থানা এলাকার ভুতোরমোল্লাপোলের বাসিন্দা, মোটরভ্যান চালক সুশান্ত ভাণ্ডারীর কাছ থেকে মলয়বাবুর ফোনটি উদ্ধার হয়েছে। পুলিশকে সুশান্ত জানিয়েছেন, রবিবার সাতসকালে (যার কয়েক ঘণ্টা আগেই খুন হয়েছেন মলয়বাবু) তাঁর ভ্যানে উঠে দু’জন যাত্রী ওই ফোনটি তাঁর হাতে দিয়ে বলেছিল, ‘দুশো টাকা দাও। বদলে ফোনটি রাখো। আমাদের টাকা চুরি হয়ে গিয়েছে। পরে টাকা ফেরত দিয়ে ফোন নিয়ে যাব।’ দু’দিন পরেও ওই দু’জনের দেখা না মেলায় বুধবার ফোনটিতে নতুন সিম কার্ড ভরেন সুশান্ত। ঘণ্টাখানেক পরেই পুলিশের ফোন আসে তাঁর কাছে। সুশান্তর নাম-পরিচয় জানার পরেই পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায় তাঁকে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই মোটরভ্যান চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁর বয়ান অনুযায়ী, কয়েকটি ব্যাগ ও বস্তা নিয়ে দুই ব্যক্তি তাঁর ভ্যানে উঠেছিল। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, ওই দু’জন দক্ষিণ ২৪ পরগনা এলাকার কাকদ্বীপ-নামখানা এলাকার বাসিন্দা। মোবাইলটি তারা কৌশলে সুশান্তকে বিক্রি করে দেয়। সুশান্তের বর্ণনার ভিত্তিতে ওই দু’জনের ছবি আঁকানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক পুলিশকর্তা। তাঁরা এই খুনের ঘটনায় জড়িত বলে মনে করছে পুলিশ।

অন্য দিকে, পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাড়িতে রাতের আয়া কবিতা দাসের বয়ানে পরপর অসঙ্গতি ধরা পড়ছে। ঘটনার আগের রাতে কী রান্না হয়েছিল, তা নিয়ে দু’রকম বয়ান দেন রাঁধুনি শ্যামলী ও আয়া কবিতা। কবিতা বলেছিলেন, সয়াবিনের বড়ির তরকারি আর আনাজ সেদ্ধ খেয়েছিলেন মলয়বাবু। কিন্তু শ্যামলী জানান, তিনি রেঁধেছিলেন ওলের তরকারি আর শুক্তো। পুলিশের মনে হয়েছিল, শ্যামলীই ঠিক বলছেন। কবিতা কোনও কারণে পরপর মিথ্যে বলে চলেছেন। এ বার রাতে শোয়ার বিষয়েও কবিতা মিথ্যে বলেছেন বলে জানান তদন্তকারীরা।

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মলয়বাবুর মা মারা যাওয়ার পরে রাতে দোতলায় তাঁর পাশের ঘরেই শুতেন কবিতা। ঘটনার পরে তিনি তদন্তকারীদের জানান, সেই রাতেও বৃদ্ধের পাশের ঘরেই ছিলেন তিনি। কিন্তু পুলিশ জেনেছে, ওই রাতে দোতলা নয়,
একতলায় বিছানা করে শুয়েছিলেন কবিতা। কিন্তু কেন? তদন্তকারীদের একাংশের প্রশ্ন, রাতে কোনও ঘটনা ঘটতে পারে আন্দাজ করেই কি কবিতা একতলায় চলে আসেন?

বৃহস্পতিবার নিউ আলিপুর থানায় ফের কবিতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। খুনের ঘটনার পরেই পুলিশ এসে কবিতা ও তাঁর ছেলে তারকের মোবাইল ফোন দু’টি বাজেয়াপ্ত করেছিল। দুই ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই দুই কললিস্টে কয়েক জন সন্দেহজনক ব্যক্তির নম্বরও পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ। মলয়বাবুর বাড়ির সামনে যে সিসি ক্যামেরা রয়েছে, তার শনিবার রাত ও রবিবার ভোরের ফুটেজে দু’জনের ছবি পাওয়া গিয়েছিল। ওই ছবির সঙ্গে সুশান্তের বয়ান অনুয়ায়ী আঁকানো ছবি মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে নিউ আলিপুর ও সংলগ্ন এলাকার দুষ্কৃতীদের ছবির সঙ্গেও মিলিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লালবাজারের পুলিশকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malay Mookerjee Murder Deposition Housemaid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE