Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কখন পর্দা সরবে, অপেক্ষা রাতভর

রাত ৯টা ৫০ মিনিটে বন্ধ হয়েছিল পর্দা। তার প্রায় সওয়া এক ঘণ্টার মাথায় একে একে নিভেছিল মঞ্চের চার দিকের জোরালো আলো।

প্রতীক্ষা: ধর্নামঞ্চের সামনে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। মঙ্গলবার ভোরে, ধর্মতলায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ

প্রতীক্ষা: ধর্নামঞ্চের সামনে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। মঙ্গলবার ভোরে, ধর্মতলায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৯
Share: Save:

এ যেন অন্তহীন অপেক্ষা!

রাত ৯টা ৫০ মিনিটে বন্ধ হয়েছিল পর্দা। তার প্রায় সওয়া এক ঘণ্টার মাথায় একে একে নিভেছিল মঞ্চের চার দিকের জোরালো আলো। নিরাপত্তার কারণে মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নামঞ্চের সামনের রাস্তার একাংশে যান চলাচলেও রাশ টেনেছিল পুলিশ। অনেক অপেক্ষার পরেও পর্দা না সরায় রাস্তাতেই ইতিউতি শুয়ে পড়েছিলেন কয়েক জন কর্মী-সমর্থক। মাঝেমধ্যেই তাঁরা ঘুমচোখে উঠে অপেক্ষা করেছেন পর্দা সরে যাওয়ার।

সোমবার গোটা রাত ছবিটা এমনই ছিল মেট্রো চ্যানেলের। রবিবার প্রায় সারা রাত মুখ্যমন্ত্রী জেগে কাটিয়েছিলেন। তাই সোমবার রাতে কিছু ক্ষণ বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল। সেই মতো ধর্নামঞ্চেই তাঁর বিশ্রামের ব্যবস্থা হয়েছিল। যদিও কর্মী, সমর্থকেরা তা না জেনেই হাজির হয়েছিলেন মেট্রো চ্যানেলে। দিদিকে দেখতে না পেয়ে স্লোগান তোলা ভিড়কে বারবার থামিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা। অনুরোধ করেছেন, ‘উনি একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন, দয়া করে সহযোগিতা করুন।’

সে কথা মেনে নিয়ে অবশ্য বাড়ির পথ ধরেছেন অনেকেই। আবার বরাহনগরের কাউন্সিলর দিলীপনারায়ণ বসু, রাজ্য যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদিকা জয়া দত্ত-সহ সংগঠনের উত্তর ২৪ পরগনার নেতারা পর্দা-ঘেরা মঞ্চ দেখেই নিঃশব্দে মেট্রো চ্যানেল ছেড়েছেন। উত্তরবঙ্গ থেকে ব্যক্তিগত কাজে কলকাতায় আসা তিন যুবক—পঙ্কজ রায়, অনিমেষ মালাকার, পিন্টু হকেরা জানালেন, দিদির জন্যই তাঁরা রবিবারের ফেরার টিকিট বাতিল করে ধর্মতলায় রয়েছেন। আর যত ক্ষণ না দিদিকে দেখবেন, তত ক্ষণ জায়গা না ছাড়ার পণ করে রাস্তাতেই কাগজ পেতে বসে রাত কাটালেন হরিণঘাটা শহর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি রাকেশ পাড়ুই ও তাঁর সাত সঙ্গী।

প্রতীক্ষার অবসান কত ক্ষণে হবে, তা অবশ্য কারও জানা ছিল না। তাই ভোরের আলো ফোটার খানিক আগেই প্রায় ২০০ জনকে নিয়ে কলকাতা পুরসভার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামস ইকবাল এসে বসলেন রাস্তায়। আকাশ রাঙা হতেই ধড়মড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলেন কল্যাণী, নদিয়া থেকে আসা কর্মীরা। সকলেরই চোখ তখন মঞ্চে। এই বুঝি পর্দা সরে দেখা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী!

সকাল হতেই মেট্রো চ্যানেলে ভিড় বাড়তে থাকল। পুরকর্মীরা ঝাড়ু দিয়ে, ফিনাইল ছড়িয়ে সাফ করলেন গোটা এলাকা। এক সময়ে মঞ্চ থেকে নেমে এলেন সাংসদ দোলা সেন, শান্তনু সেন, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন। হাজির আর এক মন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লও। ব্যারিকেডের বাইরে অপেক্ষায় কালিম্পং থেকে লেপচা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও। কিন্তু দিদির দেখা নেই।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৪৫ নাগাদ পর্দা সরিয়ে সামনে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সামনে বসে অরূপ, ইন্দ্রনীল ও শান্তনুরা। দিদিকে দেখেই উল্লাসে ফেটে পড়ল জনতা। হাত দেখিয়ে তাঁদের শান্ত হতে বললেন কিছুটা ‘গম্ভীর’ মুখ্যমন্ত্রী। সময় গড়াতে একে একে মঞ্চে হাজির মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, তাপস রায়, অরূপ রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রথীন চক্রবর্তী, ইন্দ্রাণী হালদার, শাঁওলী মিত্র-সহ অন্যান্য বিধায়ক, নেতা ও সংস্কৃতি, ক্রীড়া জগতের ব্যক্তিরা। রাস্তায় তখন দিদিকে সমর্থন করে দেশে অহিংসার বাণী ছড়াতে গাঁধী সাজে হাজির ওড়িশার বাসিন্দা অশোককুমার জেনাও।

এ দিনও মমতা পায়চারি করেছেন মঞ্চের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে। তাল মিলিয়ে জনতার চোখ ও মোবাইলও ঘুরেছে সে দিকে। আর স্লোগান উঠেছে, ‘চৌকিদার হটাও, দেশ বাঁচাও’। সকাল ১১টা নাগাদ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের খবর আসতেই সোমবারের মতো ফের গান, কবিতায় জমে ওঠে মঞ্চ। সেখানেই হাজির হলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের ডিজি বীরেন্দ্র, নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ করপুরকায়স্থ, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের প্রধান সচিব গৌতম সান্যালকে দেখা গেল মঞ্চে এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে, জরুরি ফাইল দেখাতে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তিন বার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে পুলিশ ক্যাম্পে আসতে দেখা গেলেও, তিনি এক বারও অবশ্য মঞ্চে ওঠেননি।

তবে জয়ের আনন্দে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে এ দিনও কবিতা, গানে জমে উঠেছিল মঞ্চ। আর দিদির অনুরোধে দোলা সেনের সঙ্গে সকলে মিলে গাইলেন, ‘আমরা করব জয়, নিশ্চয়’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CBI vs Kolkata Police CBI Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE