পুরভোটের প্রচারে মমতার সঙ্গে মিছিলে পা মিলিয়েছেন দেব, শুভশ্রী, শ্রাবন্তী-সহ ছোট ও বড় পর্দার এক ঝাঁক তারকা। বৃহস্পতিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
বৈশাখী দুপুরের গনগনে রোদ মাথায় নিয়ে অমন ঊর্ধ্বশ্বাসে হাঁটাহাঁটি যে সকলের কম্মো নয়, তা বিলক্ষণ জানতেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তাঁর প্রিয় টলিউড-টেলিউড তারকাদের ‘পরিশ্রম’ থেকে রেহাই দিতেই চেয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতায় পুর-প্রচারের শেষ লগ্নে শ্রাবন্তী, সায়ন্তিকা, রণিতা, অনীকরা তবু দিদির কথার অবাধ্য হলেন। দেখা গেল, বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে হাজরা মোড় ছাড়িয়ে যেতে যেতে তারকারা বারবার দিদির ‘স্ট্যামিনা’ ও ‘পজিটিভ এনার্জি’র গুণকীর্তনে মুখর। দিদির এই উদ্যমের সংক্রমণে তাঁদেরও যে প্রভূত উপকার হয়েছে, তা বারবার বলছিলেন শ্রাবন্তী, রণিতারা। একদা ছোটপর্দার বাহা হিসেবে পরিচিত রণিতা যেমন বলেন, ‘‘আমাদের গা ঘামানো মানে তো এসি ঘরে ট্রেডমিলে চেপে হাঁটা। আজ যা হেঁটেছি, তাতে দু’দিন আর ওয়ার্কআউট করতে হবে না।’’
সন্তোষপুরের কাছে সুকান্ত সেতু থেকে গোপালনগর অবধি পুরো রাস্তা অবশ্য ওঁরা হাঁটেননি। তারকাদের কষ্ট দিতে চান না বুঝিয়ে দিয়ে সুকান্ত সেতুর মঞ্চ থেকেই তাঁদের ‘তোমরা জিপে ওঠ, সকলে দেখতে পাবে,’ বলে নির্দেশ দেন দিদি। ব্যতিক্রম শুধু দেব। তারকাকুলে বড় আকর্ষণ, দেব মঞ্চে দিদির পাশে দাঁড়িয়েই চুপি চুপি বলে দেন, তিনি হাঁটতে ইচ্ছুক। দেব ও ছোট পর্দার তারকা যশকে শুরু থেকেই হন্টনরত মমতার সহযাত্রী হিসেবে দেখা গেল। বাকিরা একটু পিছনে, হুডখোলা জিপে চললেন।
বালিগঞ্জ ফাঁড়ি পৌঁছনোর পরে অবশ্য বাকিরাও পথে নামলেন। হাজরা রোড ধরে যেতে যেতে মমতা এই বিশেষ সহযাত্রীদের বারবার খেয়াল রাখছিলেন। গায়ক অনীক ধরকে ‘সলিল চৌধুরীকে নিয়ে একটা অ্যালবাম কর না,’ বলে পরামর্শও দিলেন। সাধারণত, শাসক দলের বেশির ভাগ কর্মসূচিতে ইদানীং যা দেখা যায়, পুরভোটের শেষ দিনের রোড-শোতেও বিনোদন জগতের সেই ‘মুখ’রাই প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠলেন।
এই তারকারা পৌঁছনোর বেশ কিছুক্ষণ আগেই দুপুর ১২টা ৪০ নাগাদ সুকান্ত সেতুতে পৌঁছে গিয়েছিলেন মমতা। অপেক্ষা-পর্বে ‘ফিলার’ হিসেবেই বক্তৃতা শুরু হল। এর পরে চেনা একটি বাচ্চা মেয়েকে দেখে ‘এই তুই মেরে ওয়াতন কে লোগো গেয়ে শোনা তো একটু,’ বলে সবে ডাক দিয়েছেন, তখনই সাদা ফুলশার্ট-কালো ট্রাউজার্স-সানগ্লাসধারী দীর্ঘদেহী অবয়ব এসে হাজির। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ‘দেব, তুমি এসে গেছো’ বলে মঞ্চে তুলে নিলেন। তারকাদের পরিচয়পর্ব, সাংসদ-নেতা দেবের বরাবরের ‘কেমন আছেন আপনারা’ বলে কুশল-সম্ভাষণ মিটে গেলে দুপুর একটা নাগাদ চলতে শুরু করল মিছিল।
ঠিক ছিল, তারকারা ছাড়া শুধু মেয়র পদপ্রার্থী শোভন চট্টোপাধ্যায় ও অন্য প্রার্থীরা মমতার সঙ্গে সামনে থাকবেন। মমতাকে দেখে হামলে পড়া কর্মীদের সরাতে মিছিল শুরুর আগে বারবার ‘আপনারা পিছনের দিকে এগিয়ে যান’ বলে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু দেখা গেল, কর্মীদের ভিড়ে তপন দাশগুপ্ত, অরূপ চক্রবর্তীর মতো ক’জন বাদে প্রার্থীরাই পিছিয়ে পড়েছেন। দেবাশিস কুমার, রতন দে, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়রা ঢুকলেন ধাপে ধাপে। নিজের নিজের এলাকায় অনেক নেতাই লোক নামিয়ে শক্তি জাহির করার চেষ্টা করলেন।
হাঁটতে হাঁটতে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলছিলেন, ‘মমতাদির মিছিল মানেই যা আবেগ, উফ্ফ!’ তবে লোকসভা ভোটের আগের রোড-শোতে এর থেকে বেশি ভিড় হয়েছিল বলেই পুলিশের অভিমত।
ঢাকুরিয়া সেতু বা হাজরা রোড পুরোটা ‘দখল’ করে নিয়ে মিছিল এগোলেও যোধপুর পার্কের কাছে উল্টো দিকে মিছিলের জন্য কয়েকটি স্কুলবাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুখ্যমন্ত্রী একটু বিব্রত হলেন। সঙ্গে সঙ্গে লালবাজারে ফোন, ‘যাদবপুর ট্রাফিক গার্ডকে দেখতে বলুন।’ যশ ওরফে ছোট পর্দার ‘অরণ্য’কে দেখে যাদবপুর এইট-বি মোড়ের কাছে এক মধ্যবয়সিনী প্রাণপণে ‘ফ্লাইং কিস’ ছুড়ে দিলেন। হাজরা রোডের দু’ধারে পাড়ার মেয়ে-বৌ, বিক্ষিপ্ত অফিসকর্মী বা মজুরদের মমতার আগে হাঁটা পুলিশকর্মীরা দেখালেন, ‘ওই দিকে দেখুন, দেব আসছেন!’
বিকেল তিনটের সময়সীমায় গোপালনগর মোড়ে পৌঁছেও তারকাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর ধন্যবাদ পর্ব। তাঁর স্যান্ট্রোর পিছনের সিটে ঠাসাঠাসি করে বসলেন দেব-অনীক-যশ। গন্তব্য নবান্ন। বাকিরাও সেখানেই গেলেন। শেষ প্রচারের মৌতাত নিয়ে এই তারকা-অধ্যায় নবান্নের আপ্যায়নে শেষ হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy